(অলংকরণ: বিপ্লব দত্ত) 





এখন বিরক্ত কোরো না ঈশ্বরেরা মানুষ হচ্ছেন

বাবুমশাই এখন ফিরে তাকাবার সময় নেই 
পৃথিবী জুড়ে ঈশ্বরেরা মানুষ হচ্ছেন শঙ্করাকে ডাকার দল বুনোমোষ তাড়ানোর দল ঈশ্বরকে মানুষ করছেন নাছোড়বান্দা ঈশ্বর হাত-পা ছুড়ছেন আহা তিনি কবে যে জন্তু থেকে মানুষ হবেন তিনি মেয়ে হলে আমি তার সাথে সঙ্গমে মাতব ছেলে হলে বন্ধুত্ব শিশু হলে হাসি দেখব এখন আমায় বিরক্ত কোরো না আমি অপেক্ষায় আছি।

অনাবাদী ধানখেতে নাড়িকাটা হবে আজ অনাদরে ভেজা বাসভূমি থেকে বহুবার ধর্ষিতা লক্ষ্মীর রক্তাক্ত পায়ের ছাপ মুছে দিতে নষ্ট সভ্যতার স্রষ্ট কুমারীর বিষাদের পাথরে চিতার আগুন জ্বালাতে অনাহারে মৃতদের ত্রিভুবনখোলাস্তন থেকে ঘামেভেজা রূপকথার পারিজাত দুধ চুকচুক খেতে হোমের আগুনে সবু তবু সারির প্রতীক্ষিত গন্ধে মাছরাঙাদের বিন্দুবিন্দু স্বপ্নের আলোয় মেরুমেরু ফুটপাত জুড়ে শূন্য আজান শঙ্খধ্বনি বেহায়া অন্ধকারে হাজার কামনার অলিন্দ কুমারী শরীরের ওঠানামায় নদীর ছেঁড়া শাড়ি থেকে জোছনায় রক্তঝরায় আগুন-ঝরা দুঃখের দীর্ঘবর্ষায় চোখের নোনায় সিঁদুরগোলায় ভূষিত কিশোরীর সারা মাঠ জুড়ে ফসলপোড়ানো আদিম পোশাকে মাছমারাদের নৌকোর লণ্ঠনের মৃদু আলোর দোলনায় পেটের ভেতর শ্যাওলা মাটির কামারশালায় সুস্থ চাঁদগলা মেহনতি ঘামে বীর্ষে জীবন জাগছে ঈশ্বরেরা মানুষ হচ্ছেন।

এখন নিরুদ্দিষ্ট চাঁদ পাতালে নিঃসঙ্গ লালনীলহলুদ জোছনার জলে নেই এখন কোনো
প্রসাধন নেই কোনো আনন্দ-চন্দনের কড়িকোমল নেই না এখানে কোনো আলোর কণা সাঁতার কাটে না শুধুই ক্লিন্ন স্বাধিকারে হাঙরমুখো অন্ধকারে শুধুই আগুন আগুন ছায়ায় কাকডাকা ভোরে ফড়িং লাফায় গোত্রবর্ণহীন আকাশ ফোঁটায়
ফোঁটায় মৃতঝর্নায় ঝরে পড়ে মৌরির বাগানে রামধনুক্ষত্রেরা এখানে থাকে না শুধু পাখি উড়ে যায় নেবুফল গন্ধ ছড়ায় পাথরপ্রতিমা নৌকো বাসায় পান্তাভাত খেয়ে মেয়ে মাছ ধরতে যায়
কন্ঠনালীর মধ্যে নীল ধোঁয়ায় ল্যাম্পপোস্ট ঘাস জল ছেঁড়া পুতুলের ফ্রক ঢাকা পড়ে যায় এখানে এসময়ে কলমিশাকের গলুই ধরে সবহারানো ন্যাংটোরুটির নকশিকাঁথায় ঈশ্বর মানুষ হচ্ছেন

বাবুমশাই সোনা আমার বড়ো হবে পান দেব সুপরি দেব দেব মাটিও দেব যেটা সাধ বেছে নেবে মাটির চরে বাঁশির ফেরি হবে মাটির ঈশ্বর তুই যে সোনা পা থেকে মাটি গেলে কিছুই থাকে না

ও মাটিশ্বর সঙ্গমেশ্বর মাটির বুকে সাগর তুফান আকাশ ছিঁড়ে ঝড়বিদ্যুৎবন্ধুস্নান ঠিক এমন দিন সৃষ্টির এ জনমক্ষণে মাত রে এবার হারিজিতি প্রাণ-সঙ্গমে মন্দির-মসজিদ- প্রাসাদ মাঝের শতশতাব্দীর ধোঁকাটাকে দুহাত তুলে নামিয়ে আন্ সিন্দুক-পচা সভ্যসাজটি ছিঁড়ে উরুর মাঝে দলে পিষে শোনা রে সহজসুরে সহজিয়া গান কোথায় ছিলিরে তুই আপনাতে আপনি ভুলে এখন দেখরে সব খুলে আপনাতে আপনমনে শ্মশানের জ্বলন্ত চিতাকাঠে হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনে ভেঙে ফেল শাশ্বত রামধনুর দোদুলদোলা চতুর্দোলা হাড়ের এ পৃথিবীতে অ-সঙ্গ মৃত্যুবাসনায় ঠোটে ঠোঁট পায়ে পা মেলা






স্বপন দত্ত 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন