পানিপথের দশম-যুদ্ধ
১
প্রেম-নেশা-কাতরতা নিয়ে আমি কিছু কম জানি হুঁজুর
মহুয়া-গাছের মাথায় যে ডবকা হাওয়ার খেলা চলে, সেই হাওয়া
নিবিড় ধানমাঠের অনুবাদ করা আলিবাবার গুহায় কাঁটাঝোপে-
আটকে পড়া ঘর-পালানো জলের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়, সেই হাওয়া
অপারেশন-টেবিলে শুয়ে থাকা অচৈতন্য আগুনের সঙ্গেও ঘনিষ্ট হয়
২
দুপুরের নির্জন করিডোরে ‘মহাসিন্ধুর ওপার হতে কী সংগীত’ আর
জানলায় সাঁটা গ্রিলের ওপারে জি-আই তারে মেলা
ছেলেমেয়েদের পোশাক-আশাক ও বাজারের থলে
মিলেমিশে একাকার
নিজের ভোট নিজে দিতে না পেরে বুথের দরজা থেকে ফেরত আসা
খ্যাঁদা-নেকো-মহারাজ
বুকের ভিতর সমুদ্র-পালন করেন
৩
মান্ধাতার স্যাঙাতের আমলের ক্রীতদাসপ্রথা আজ আর নেই
তবু, আলো-ঝলমল মাচা-পরবের ঝরনাতলায় আজো
কত শত করুণ কশেরুকা বিক্রি হয় রোজ
জলরঙে-আঁকা শঙ্খচূড় আর
তেলরঙে-চুবোনো তুখোর বেজি
লুড়কি-বেগুনের পাঠশালায় দুজনেই খুঁজে ফেরে নিখুঁত লক্ষ্যভেদ
৪
তাইরে-নাইরে-না, নাই-রে-তাইরে-তা
আকাশে কালো কালো মেঘ ডাকছে
শখ করে পোষা আক্কেলদাঁতও ডাক দিয়েছে কোন সকালে
৫
পুরোনো ক্যালেন্ডারের পাতায় আবছা হয়ে আসা ঈশ্বর এখন
রেল-লাইনের পাশে ধাঙড়-মহল্লায় বাস করে
তার কোনো জবকার্ড নেই, বৃদ্ধভাতা নেই
শত চেষ্টা করে আবাস-যোজনার তালিকাতে তার নাম
ওঠেনি
৬
তাইরে-নাইরে-না, নাই-রে-তাইরে-তা
সব-সময় আধোঘুমে থাকি
মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকা মলমাস গড়িয়ে যায় আশ্বিন থেকে অঘ্রানে
খয়েরি লিপস্টিকের কানে কানে বলি কালাজাদু
মনে হয়, ময়ূরাক্ষীর খুব কাছাকাছি কোথাও ফুটে আছে রক্তকরবী
৭
ধুনুরির পিঠে বাঁধা তুলোর বস্তা থেকে
রাশি রাশি লোভ তুলে নিয়ে যাচ্ছে
শালুক-ফুল তন্ত্রচর্চা কুলকুণ্ডলিনীর উলুধ্বনি
৮
সোমত্থ মেয়েদের ওয়েব-লেংথের সঙ্গে খেলা করে যে ঘুনধরা বেহালার তার
তারই গোপন-কুঠিতে
অফসেটে ছাপা হয় মেঘলা হরিণের ঊরুভঙ্গ
৯
পিঙ্কিরানির কাঠের চুলোয় উথলোনো দুধ-পোড়ার গন্ধের পাশে
শরতে শিউলি ফোটে ঠিকই,
কিন্তু এই পোড়ার-মুখো পৃথিবীতে
শিউলিফুলের কোনো জীবনবিমা হয় না
১০
অতঃপর ইতিহাস পড়া ছানাপোনাদের কাছে প্রেমে পড়ার আরেক নাম হয়ে যায়
পানিপথের দশম-যুদ্ধ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন