গৌরীপুরের পাখি
গৌরীপুর যাব। পাখি দেখতে। সালার পার হয়ে বাজারসৌ। সেখান থেকে একটু দূরে নিভৃত কোন গ্রাম গৌরীপুর। এই আনন্দ অভিযানে আমার সঙ্গী আমার অনুজ বন্ধু, রূপনারায়ণ ও সৌম্যদীপ।
আমার অন্তরাজ্যে তার ডাক এসেছে। নিভৃত প্রেমের মতো। মৃগনাভির গন্ধ আমাকে ব্যাকুল করে তুলেছে!
আমার কোন শিকারির মুখোশ নেই। হে সহজ প্রেম, তোমার পায়ের তলায় আমি খুলে রেখেছি যাবতীয় ছদ্মবেশ। তোমার অনন্ত নিক্কন আমাকে জন্মান্তরের ভিতর নিয়ে যাক এবার...
শিকারি নই, আমি প্রেমিক। পাখিপ্রেমিক। ক্যামেরার পিছনে হয়তো মাঝে মাঝে চোখ যাবে। হবে লক্ষ্যভেদও। ছবি উঠবে। নীলকন্ঠ। হয়তো বা আলতাপরী। চঞ্চল ট্রি-পাই। অথবা লাজুক হরিয়ালের আলোয় চোখের সমুদ্রে রঙ-সুগন্ধির শুশ্রূষা। শিউলি ফুলের মত তোমার হাতের নরম ছোঁয়া মনে পড়বে আমার বহুকাল পরে । প্রণয়-কস্তুরী, তুমি ইথার-তরঙ্গে ছড়িয়ে রেখেছো এমত মোহজাল! আমার হৃদয় কেবল বাজিছে থরোথরো!
আমার কেবলই মনে হয় এই পৃথিবীতে আমি বহুবার এসেছি। এই আগের জন্মেই ছিলাম একটা বেলেহাঁস। আমার বুকে মুখ রেখে দ্যাখো, কোন সুবিস্তীর্ণ জলাশয়ের পূর্ণিমার গন্ধ এখনো লেগে আছে। এইতো সেই স্মৃতিগন্ধে এখন আমার পালক ভিজে উঠলো!
নিসিম এজেকিয়েল একটি কবিতায় বলেছেন কবি, প্রেমিক আর পাখিপ্রেমিক স্বভাব-বৈশিষ্ট্যে সব এক গোত্রের। উপযুক্ত শব্দ- পাওয়া, প্রেমিকার মন- পাওয়া আর পাখির দেখা-পাওয়া। কোনোটা কি সহজে ঘটে? সাধনা ! জোর জবরদস্তি চলে না যে! প্রকৃত প্রেম তো পূজা। দাবি নেই। প্রসাদও কি মেলে সর্বদা?
আত্মনিবেদন, নৈঃশব্দ্য, অপেক্ষা অপরিসীম--- এই তিনের সমন্বয়ের সাধনা। তবু দিনের শেষে হয়তো দেখা মিলবে না তার। উতল হাওয়া এসে কেঁদে যাবে মাধবী বিতানে। কিন্তু একটি হিয়ার দ্বিধা থরথরো চূড়ায় নির্মিত হবে না সাতটি অমরাবতী!
পাখিপ্রেমিক আর কশাইয়ের এই বিভেদ। একজন খড়গ্ হাতে, আর একজনের শরীরে কোন সুদূরের হাওয়া ঘুঙুর হয়ে বাজে। একজনের প্রাপ্তি মিথ্যা, অন্যজনের অপ্রাপ্তির বেদনাও এতো ঈর্ষণীয়!
আবার হয়তো একদিন সহজেই তার দেখা পাওয়া যাবে যেখানে তাকে পাওয়ার কথা ছিল না। প্রস্তুতিহীন হৃদয়। অতর্কিত ! জমাট কালো মেঘের বুকে বিজলি রেখার মতো।কাগজ-কলম নেই। ক্যামেরা নেই। শুধু এই চোখ। এই আশ্চর্য চোখ। সুন্দর, এই চোখ দিয়ে তোমার অনন্ত মাধুর্যের ভেতর ঢুকে যাবো...
গৌরীপুর যাচ্ছি। পাখি দেখতে। কান্না আসছে কেন?
সুন্দর, তোমার অনন্ত আলিঙ্গনের পিপাসায় আবার যেন ফিরে আসি...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন