ভাঙা নৌকো
আমি সারাক্ষণ
ভাঙা নৌকো খুঁজে বেড়াই
আর একটা করে
কাঠ সংগ্রহ করে
উঠোনে জড় করি
এটাই আমার সবচেয়ে নিরাপদ ব্যাঙ্ক
টাকা-পয়সার মতো নিয়ে
কেউ নীরবে কেটে পড়তে পারবে না
আমার লক্ষ্য
জোড়া লাগিয়ে
ভাঙা নৌকোগুলো আবার ফিরিয়ে আনা
অল্প হাওয়া
শেকড় ছেঁড়া গাছ
অল্প হাওয়া দিলেই
মাথা নাড়াতে থাকে
হেলে পড়তে পড়তেও
নিজেকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার
চেষ্টা চালিয়ে যায়
একদিন ধরাশায়ী হয়ে
মৃত্যুও হয় তার
তারপর
কাঠ সংগ্রহকারী
শিকারিরা এসে হাজির হয়
এত যে ছায়া দিয়ে গেছে এতদিন
তাকে নিয়ে একটাও ট্রাজেডি লেখা হয় না
কখনও
গুপিযন্ত্র
জীবন জীবিকার নড়বড়ে খুঁটিতে
যে তার কবিতাকে বেঁধে রেখেছে
যে তার মুখপত্রকে টাঙিয়ে রেখেছে
যে তার মৃত্যু ভাবনাকে ভুলে
সামনের রাজপথের দিকে এগিয়ে চলেছে
তাকে আপনারা চেনেন?
না, সেই ধিকিধিকি আগুনকে
আপনারা চেনেন না
তার নাম রহিম
অর্থাৎ যিনি রহম করেন
তিনি তার নামের সঙ্গে রাজা শব্দটিকে জুড়েছেন
তিনি মিনিটে চামড়ার একটি বলকে
গুনে গুনে
দশবার সীমানার বাইরে পাঠাচ্ছেন
তিনি সর্বদাই
একটি গুপিযন্ত্র
বাজিয়ে চলেছেন
ফেরত-ঘোরত
ভালোবাসতে গিয়ে
যারা কুয়োয় পড়ে যায়
তারা বন্দিত্ব অনুভব করে না
সূর্যের আলো না পাওয়া
অথবা ব্যাঙের দশাপ্রাপ্ত হওয়া
কোনওটাই প্রতিকূলতা নয়
তাদের কাছে
তাদের কাছে
ফেরত-ঘোরতের কোনও প্রশ্ন নেই
সবটাই জীবন
সূর্য নিরাপদ দুরত্বে এসে
সেলাম ঠুকে দাঁড়ায়
তাদের আলোর অভাব, বন্দিত্ব
অথবা ব্যাঙের দশা পাওয়া
সবসুদ্ধ মিলে আকাশের মতো
একটা ফ্ল্যাট পুকুর হয়ে যায় কুয়ো
মৃত্যুকেও তাই
তাদের অমূল্য জীবন মনে হয়
গোলাপের তোড়া
তোমাকে আনুষ্ঠানিক কোনও
ফুল পাঠাই না ঠিকই
কিন্তু মনে মনে
অজস্র গোলাপের তোড়া পাঠাই
তারা উড়ুক্কু মাছের মতো
তোমার প্রাসাদোপম বাড়ির দিকেই ছুটে যায়
তোমার দরজা এবং জানালার ফাঁক দিয়ে
ঢুকেও পড়ে তারা তোমার বদ্ধ ঘরে
চারদেয়ালের ভেতর
তুমি মূর্ছা যাও কী না আমার জানার কথা নয়
হয়তো ঐতিহাসিকরা
একদিন মহেঞ্জোদারো খুঁড়ে দেখবে
খোলস
যখনই ভালোবাসার কথা বলি
ভালোবাসা রুপোলি খোলস ছেড়ে
হিলহিলে সাপের মতো চলে যায়
সেই খোলস
গলায় জড়িয়ে নিই
ক্রমশ সেটাকেই
ফুসফুস এবং হৃৎপিণ্ডে ভরে নিই
সেই অক্সিজেনেই তো
এতগুলো বছর কেটে গেল
সেই অক্সিজেনই
একদিন নৌকোয় তুলে দেবে
পাখিরাই বলুক
তুমি ফিরে এসো আবার
আবার নতুন করে শুরু করো সকাল
ভুলগুলো রোদে মেলে দাও
ওপর দিয়ে পিঁপড়ে চলে যাক
মাছি এসে বসুক
আর হাওয়া লাগুক গায়ে
ততক্ষণ শোধন পর্ব চলুক
শুধুমাত্র সাফল্যগুলো
একটি গোপন সিন্দুকে ভরে রেখে দাও
তারা একদিন
গাছ হয়ে দাঁড়াবে
এবং যোগ্য কী না
পাখিরাই বলুক
কুয়াশার কাক
যখনই সবাই মিলে
জোট বাঁধতে গেছি
দড়ি খুলে গেছে
যখনই
কালো বেড়াল ভেবে ধরতে গেছি
কুয়াশার কাক হয়ে
উড়ে গেছে দূরে
প্রায়ই পুড়ে গেছে
আমার নিজের হাতে তৈরি ঘরবাড়ি
ঠিক এই কারণেই
আমি নদীর ধারে বেড়াতে যাই
গাছের তলায় বসি
ভেবে দেখেছি
মৃত্যু দিতে পারে না কাউকে
অভয়ারণ্য
একটা হরিণ ছুটে পালাচ্ছে
একটা বাঘ পিছু ধাওয়া করছে
একটি বিশাল জঙ্গল
কত হিংস্র জন্তুর বাস সেখানে
জঙ্গল কত সহজে
অভয়ারণ্য হয়ে যাচ্ছে
যারা স্বর্গবাস করে
তারা এসব বোঝে না
সত্যি বলতে
তারা বুঝতেও চায় না
সব আর্তনাদ
' বলির বাজনা'- য় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে
আমি এক নির্বাক দর্শক মাত্র
অনন্ত
অনন্তের দিকে খোলা থাক
দু'চারটে দরজা এবং জানালা
কয়েকটি পাতা
উড়ে এসে পড়ুক ঘরের মেঝেয়
এবং কয়েকটি শুকনো ডালপালাও
একটা নদী
গোত্তা মেরে ঢুকে পড়ুক
তার সঙ্গে
একটা পাহাড়ও
অনন্তের দিক থেকে এসে
সবাই জড়ো হোক এখানে
অনন্তের দিক থেকে
একে একে বাঁধন খুলে ফেলে
সমস্ত দেয়াল ভেঙে পড়ুক
অকারণ গলায় চেন পরিয়ে রাখব না
কথাকে
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন