ডুলুং নদীর জলে
(ধারাবাহিক যাপনকথা)
চতুর্থ পর্ব
সময় মধ্যদুপুর পেরিয়ে গেছে। বাতাসে বিয়াল্লিশ
ডিগ্রী গ্রীষ্মের উত্তাপ। অথচ বেশ তাজা আর
ফুরফুরে মেজাজ সবার। টুক ক'রে উঠে গেলাম
সিঁড়ি বেয়ে কালির তিনতলার মেহফিলঘরে। কালি
ডান দিকের দরোজা হাট ক'রে খুলে দিতেই ঝাঁক
বেঁধে রোদ্দুর ঢুকে পড়ল ঘরে তার সবটুকু ঝাঁঝ
নিয়ে। আর সেই সাথে বিস্তৃত একটা ছাদের বোবা
আকর্ষণ। মাথায় সূর্য ঝলমল করছে, তাতে কি?
ছাদের ওপাশেই সবুজ গন্ধের ঘন জঙ্গল। যতদূর
চোখ যায় শান্ত সবুজের ভিতর নিবিড় হ'য়ে ঘুমোচ্ছে
শাল, কেন্দু আর মহুলেরা। দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রাম।
নীচের ঘর থেকে টুটুনের গলা পাচ্ছি। সম্ভবতঃ
ডাকছে... অর্থাৎ এবার বেরুতে হবে...
শেষ হ'ল আলাপন। হ্যাঁ, নীচে নেমে টুটুন এখন
পায়ে মোজা গলাচ্ছে, একটু সময় পেয়ে গেলাম।
উঠোনের চারিপাশ কালিপত্নীর যত্নে ফুলেফুলে
ফুলময়। বেলি, গন্ধরাজ, নাগচম্পা... বেশ কয়েক
রকমের জবা আর এমনকি কাঁচাপাকা লঙ্কাযুক্ত
গাছও। গেট খুলে একটু এগিয়েই যানবাহনের পথ।
আকাঙ্খা ঝকঝকে হাসিমুখে দ্রুত চোখ বোলাচ্ছে
চারিপাশের গৃহস্থ ঘরগুলোর উপর। টুটুন টোটোর
চালককে বলছে... চলো "নাকিপাড়া"। কালি বেশ
ঠাট্টা ক'রে বলছে... "লক্ষ্মীপাড়া" সেটলমেন্টের
সময় কি ক'রে যেন হ'য়ে গেল "নাকিপাড়া"।
খানিকটা আগের একটা মোড়ে নেমে পড়তে হ'ল।
তোপসিয়া বাজার। বাঁ হাতেই বেশ পাকাপোক্ত
চা সিঙ্গারা মিষ্টির দোকান। ঐ চা পানের বিরতি।
এখানের অনেকেই টুটুনের বেশ পরিচিত। যেহেতু
ঝারগ্রামের গোপীবল্লভপুর ওর দ্বিতীয় ঘর। হানুর
সাথে, নিখিলের সাথে এখানেই পরিচয় ঘটে গেল।
আর শঙ্কর...মণিশঙ্কর...টুটুনের ভাষায়..আদ্যপ্রান্ত
কৃষক... যার ঘরে উঠোনে আজ সান্ধ্যকালীন এক
চূড়ান্ত আড্ডা অপেক্ষা করছে আমাদের উপস্থিতির
আগ্রহটুকু নিয়ে... গ্লাসে গরম চা, প্লেটে গরমাগরম
সিঙ্গারা... আহা, বড় উপাদেয় উষ্ণ আতিথেয়তা।
বাকি পথ সামান্যই। এখান থেকে নাকিপাড়ায়
একটু উচ্চস্বরওয়ালেদের কথপোকথন হ'য়ে থাকে।
সুতরাং আবছা বিকেল আসতে শুরু করেছে পথে
কয়েকজোড়া পদশব্দের সাথে কথা হাসি টিপ্পনী
মিশে যেতে থাকলো অক্লেশে। বুকের ভিতরে পাচ্ছি
দিন দু'য়েকের অপরিকল্পিত যাপনের উত্তেজিত
রেশ। হাইরোড ছেড়ে বাঁ দিকে নাকিপাড়ার গলি।
হাঁটছি এবং পেরিয়ে যাচ্ছি কালির প্রাইমারীস্কুল।
আর স্কুলের ঠিক বিপরীতেই কালির পুরোনো ঘর।
শঙ্করের ঘর। মাঠের মত চ্যাটালো উঠোন।
..... ক্রমশঃ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন