কান্নার সন্ধানে

      মাঝ রাতে একটা কান্না ভেসে এল। রাতের গভীরতার উপর দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে ভেসে গেল দূরে। বহু দূরে। মাঝ রাতের কান্না ঘুম ভাঙিয়ে দিল অনেকের। জেগে উঠলো কান্নারোধী কিছু মানুষ।
      তাদের মধ্য থেকে প্রথম সমাজকর্মী, শিশু সুরক্ষা কমিটি বললেন - এই কান্না কোনো শিশুর। হয়তো মেয়ে অথবা ছেলেও হতে পরে।
      মহিলা কমিশন বললেন - না। এই কান্না কোনো নারীর। তাতে আর্তনাদ ছিল।
      পুলিশও শুনতে পেয়েছেন সেই কান্না।  তারা বললেন - কান্না তো বটেই। তবে সেটা মানুষের।
      বিনিদ্র একদল বুড়ো তারাও শুনতে পেলেন। বললেন - এই কান্না অনিবার্য ভাবে কোনো প্রৌঢ়ের। তাতে বুক চাপা হতাশা ছিল।
      নিশীথচারি তান্ত্রিক বললেন - না।  এই কান্না কোনো মানুষের হতেই পারে না। এই কান্না অশরীরীর। তাতে কম্পন ছিল না।
      রাজনীতিবিদ বললেন - কান্না যারই হোক। এর পেছনে চক্রান্তটা কার ?

      কিন্তু একটি নিঝুম রাতকে ব্যবচ্ছেদ করে সেই কান্না গেল কোথায় ! কে একজন বললেন - কান্না ভেসে গেছে উত্তর দিকে। সবাই ছুটলেন উত্তর দিকে। দলবেধে।
      ডেকে তুললেন কানুকে। কানু বলল - একটা কান্না ভেসে এসেছিল ঠিকই। কিন্তু বাঁশঝাড়ের মাথায় ধাক্কা খেয়ে সেটা আবার দক্ষিণ দিকে চলে গেছে।
      সবাই দ্রুত চললেন দক্ষিণে। একটি কান্নার সন্ধানে। দক্ষিণে বলরামের বাড়ি। ডেকে তুললেন তাকে। সে বলল - একটা কান্না আমিও শুনেছি। সেই কান্না আমার ঘরের উপর দিয়ে গিয়ে ওই চালতা গাছে ধাক্কা খেয়ে, সে আবার পশ্চিম দিকে চলে গেছে।
     কালবিলম্ব না করে সবাই ছুটলেন পশ্চিম দিকে। যেমন করেই হোক কান্নাকে খুঁজে বের করতে হবে। জানতে হবে কান্নার উৎস। কিছু একটা করতে হবে। মুছে ফেলতে হবে যাবতীয় কান্না। 
      পশ্চিমে নিবারণ। ডেকে তোলা হল তাকে। নিবারণ বলল - কান্না মতো একটা শব্দ শুনেছি ঠিকই। 
      তার বউ আগবাড়িয়ে এসে বলল - না। আমরা কিচ্ছু শুনতে পাই নি।
      নিবারণ আবার বলতে যাচ্ছে। তার বউ ভেংচি কেটে বলল- এত রাতে আর ভেজাল বাড়িয়ো না। না, আমরা কিচ্ছু শুনতে পাই নি। আপনারা পূর্ব দিকে গিয়ে দেখুন কোনো সন্ধান করতে পারেন কী না!
      এবার সকলের দৌড় পূর্বাভিমুখে। দৌঁড় আর দৌঁড়। পূর্বে বকেশ্বর আর বউ ধবলি। বহু কসরৎ করে, দরজায় ক্রমাগত আঘাত করে করে, মধ্য যামিনীর সুখ ঘুম তাড়িয়ে তাদের জাগিয়ে তোলা হল। জিজ্ঞাসা করা হল - আপনারা কী কোনো কান্না শুনতে পেয়েছেন?
      বকেশ্বর আর তার বউ নিরুত্তর। সমস্বরে চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করা হল। কারণ, দুজনেই তারা জন্মকালা। অবশেষে বললেন - কান্না? না। আমরা কিছুই শুনতে পাই না। না হাসি না কান্না।
      ধবলির জবাবও তাই - কিসের কান্না? কার কান্না ? আমরা কিছুই শুনতে পাই নি।
    সমাজকর্মী তাকালেন মহিলা কমিশনের দিকে। মহিলা কমিশন তাকালেন পুলিশের দিকে। পুলিশ তাকালেন প্রৌঢ়দের দিকে। প্রৌঢ়রা তাকালেন তান্ত্রিকের দিকে।

      রাজনীতিবিদ তাকালেন উৎসাহী জনতার দিকে। বললেন -- চুপ! আমরাও কেউ কিছু শুনতে পাই নি। এটাই মোদ্দা কথা। কারণ, কান্না যত কম শোনা যায় ততই দেশের মঙ্গল।











পৃথ্বীশ দত্ত 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন