পর্ব-২

অ দ্ ভ উ ত উ র এ এ এ

আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। জেগে উঠলাম। কিন্তু কোথায় আমি? যতদূর মনে পড়ে ফোনটা করছিলাম, আর তারপরে?
পাশেই ঘুমোচ্ছে এটা কে? এরে! এটাতো কোনো বিছানা নয় চৌকিও নয় মেঝের উপর যে কিছু পাতা আছে... না মেঝে বলতে কোন যাকিছু বোঝায় তাও তো নয়, তবে পাশে কেউ একটা শুয়ে আছে। একটা ছাতিম ছাতিম গন্ধ পদ্ম গন্ধ গোলাপ গন্ধ গন্ধরাজ গন্ধ  নাঃ, কোনটাই তো নয়। কেমন একটা নারী-নারী-মাতাল-ডুগডুগ গন্ধ। ওই আবেশেই নাকি একটা প্রবল অতি মাধ্যাকর্ষণ টানে অথবা নারীতে উচাটনে পাশে থাকাকে প্রবলভাবে জড়িয়ে ধরি।

আরে কাকে নাকি বলবো কিসে জড়িয়ে ধরলাম?কোনো কিছুর পরশই তো আমাতে লাগছে না। অথচ ঢেউ ঢেউ ভেসে চলেছি। আচ্ছা, আমারও কী হাত পা চোখ মুখ বৃত্ত অমক বৃত্ত  বিহাব লিঙ্গ এইক্ষণে কোনো কিছু আছে? কিছুতেই তো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তবে বোধে এটুকু আচে যে একটা ভালোলাগায় ক্রমেই ঢুকতেই যাচ্ছি। 

- কে তুমি? কোত্থেকে এখানে আসলে? তোমায় কে এখানকার ঠিকানা দিলো?
তুমি আমায় চিনলে কি করে? কোনদিনই কোনক্ষণেই তোমার সাথে তো আমার পরিচয় চেনা জানা মন-চোখ দেয়া নেয়া হয়নি... তাহলে এখানে ঢুকলে কী করে?
প্রশ্নের পর প্রশ্ন আছড়ে পড়ছিল। কিন্তু ওই প্রশ্নেও কেমন একটা মাদকতা... কেমন একটা প্রবল শীতের সময় রোদলাগা ভালোলাগা উষ্মতা আমায় ঘিরে ধরছিলো... আমি আরও আরও ওই না-দেখা প্রশ্নের ভালোলাগায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম...

-কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন? তুমি কি বোবা? অন্ধ? কালা? তাহলে ইশারা করি। ওহো,অন্ধ হলে তো ইশারাও তুমি বুঝবে না। কি মুশকিল, তাহলে কী যে করি?
-আমি কেমন দেখতে?    আমার প্রথম বাক্যস্ফূর্তি।
মানে?  ও, না,  তাহলে তুমি তো কথা বলতে পারো।
আবার আমার জীজ্ঞাসা-- আমি কেমন দেখতে?
-- ও, তাহলে তো তুমি দেখতেও পাও। আর তুমি উত্তরের প্রত্যাশায় যখন রয়েছো, তখন কানেও শুনতে পাও। তাহলে এমন অবান্তর প্রশ্ন করছো কেন? এমন ভাব করছো যেন নিজেকে কখনো দেখনি। জলের কাছে আয়নার কাছে যেন নিজেকে কখনো দাঁড় করাওনি। ঠিক আছে ওসব কথা ছেড়ে দাও। এতোখানি তো নেই বয়স হয়েছে যেন কারও চোখের মনির মধ্যেও নিজেকে কখনো দেখনি। কী হলো? শুনতে তো পাও জবাব দাও।
- না তো। নিজেকে কখনোই দেখিনি। দেখাটার দরকারটা যে কী তা মাথাতেই আসেনি।
খিলখিল রিণরিণ একমুঠো ফুল এক মুঠো জল সামনে দিয়ে গড়িয়ে গেল। হ্যাঁ হ্যাঁ জলই তো। কিন্তু ওই ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ তোলা জলে কই আমিতো নিজেকে দেখতে পাচ্ছিনা, ওকেও নয়।
--তা হঠাৎ নিজেকে দেখার ইচ্ছেটা এই মুহূর্তে জাগলটা কেন?
-- তুমি কেমন দেখতে দেখবো বলে।
একরাশ অমল অবাক সাদা সাদা ফুলরেনু ঝরে পড়লো।
-- তুমি তো নিজেকে দেখতে চাও,আমাকে দেখে...
আবার সাথে সাথেই সহজ উত্তর -- কেমন যেন মনে হচ্ছে, কেন জানি মনে হচ্ছে তোমাকে দেখলেই আমাকে দেখাটা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
হা হা হা এত উঁচু দামের হাসিও যে চড়া রোদের জ্যোৎস্না হয়ে কাঁঠালি চাঁপা ফুলের আলো হয়ে চরাচর ভিজিয়ে দিতে পারে আগে কেই বা জানতো, পরেই বা কে জানতে পারবে?
--বড়ো মজার কথা বলতো তুমি। তুমি কে গো? কোত্থেকে এলে? অর্ফিয়ুস বাঁশি বাজিয়ে মৃত্যুর জগৎ থেকে অ-মৃত্যুতে নিয়ে আসছিল তার প্রিয়াকে। কিন্তু  পারেনি।
--ওই বাঁশি তো তোমার কাছে আছে। তোমার হাসির ঝিলিকে আছে।
-- হ্যাস অর্ফিয়ুস আমি হব কী করে?  আমি তো মেয়ে। ওই বাঁশি আমাতে থাকবে কী করে?
মাঝপথে আমি তার কথা আটকে দিই। কেমন যেন হাজার হাজার হাতির শক্তি কোটি কোটি হারকিউলিসের বল আমাতে ভর করলো।  আমি সেই পাঞ্চজন্য বাজিয়ে চিৎকার করলাম -- না, তুমিতো হাসি হয়ে বাঁশিতে বেজে ওঠো। ওই টংকার ছড়িয়ে যাক...
তারপর কী করে যেন সমস্ত কথা বলার শক্তি আটকে গেল। আর কিচ্ছু বলতে পারছিলাম না, কেবল কিরম একটা ভয় আমাকে খেয়ে চিবোতে লাগলো। বমার লোমকূপগুলো কী এক অজানা আশঙ্কায় খাড়া হয়ে যাচ্ছিল, আমি ক্রমেই আরো আরো গুটিয়ে যাচ্ছিলাম। এই এক অনুভব থেকে একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম, তাহলে এতোক্ষণ একটা বড়ো মাপের অস্তিত্ব নিয়ে আমি ছিলাম আর এখন ক্রমেই ন্যানো বিন্দুতে পরিণত হচ্ছি।

ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল। সত্যিই নাইট ডিউটিতে এরম কল করার অত্যাচারটা আৃার ঠিক হয়নি। কিন্তু ওই তো একদিন বলেছিল আমাকে...  নাকি তপাঞ্জনা শীর্ষকে বলেছিল...  কেমন সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।  তপাঞ্জনা... হ্যাঁ এতোক্ষণে মনে পড়েছে।  মনে পড়েছে রবীন্দ্রসদনের মাঠটায় আর্ট একজিবিশন চলছিল। ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা পোস্টার চোখে পড়লো। যাতে লেখা --- রেস্টুরেন্টে সপিংমলে একদিনে তো অনেক পয়সা খরচ করেন, তাহলে একদিন অন্ততঃ সেই একদিনের খরচে সমর্থটুকু দিয়ে একটা ছবি কিনুন।
আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। বড়সড় রংবেরঙের ছাতার নিচে কয়েকটা চেয়ার রয়েছে।  ওখানে মনে হচ্ছে দর্শকদের মন্তব্য লেখার জন্যে একটা খাতা একটা লম্বাটে কলম একটা ফর্সা নাতিদীর্ঘ নাতিহ্রস্ব একটা মেয়ে বসে ছিল।  তার সামনে গিয়ে চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে পড়লাম। প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম-- তোমার ছবি আছে এখানে?
না আমার নেই। আমার বন্ধু শীর্ষর আছে।  ওই যে দেখছেন না ওই যে ওই ওইখানে বসে রয়েছে স্যারের কাছে।
হ্যাঁ ওর কথাকে অনুসরণ করে আমি দেখতে পেলাম ওই তো কালো মতন বেঁটে মতন একটা প্রখট চোখ ২৪/২৫/২৬-এর ছেলে।  এবার ওকে জিজ্ঞেস করি-- তোমার নাম কী?
তপাঞ্জনা।
অ্যাঁ এতো অসাধারণ নাম।
--হ্যাঁ গোটা ফেসবুক সার্চ করে আজপর্যন্ত কারও এ নাম পাইনি।
বেশ গর্ব মাখা হাসির সঙ্গে ঝটিটি প্রতিবর্তক্রিয়া। এবার আমি আরও সন্নিকট হই।
-- শীর্ষ কি শুধুই বন্ধু, না...



(চলবে)




স্বপন দত্ত 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন