পিচ্ছিল

বড় পিচ্ছিল, পরিবর্তিত আকার সতত
বড় নমনীয়, মূর্খের বোধ অভিভূত যদিও
তবু বড় রমনীয়, কমনীয় কথ্যের ও সত্যের
স্পর্শের হাজার, মলাট-বন্দি উপকাহিনিগত
সুদৃশ্য, সুগন্ধি, সুস্বাগত, অথচ---
বড় পিচ্ছিল, সান্দ্র, কিছু কিছু, 
যা প্রিয়, প্রিয়তম।
কি জানি কি ব্যর্থ, রুগ্ন আঙুলে ঘেরা তালু 
ততবার রোগা ইচ্ছের টান, মুঠো পেরিয়ে গেল
অশ্রুত অশ্রু-আহ্লাদ, পড়ে পথে পথে আলুথালু--
বড় শোভন সুন্দরে, মননে, বড় মাননীয় করে
ধরতে পারার সুস্পষ্ট কোনো আকারে প্রকারে 
না, অভিভূত সে বোধ, প্রতিটি সূর্য-সকালে এসে পূর্ব বিস্মৃত, প্রবৃত্ত পুনঃ, অথচ---
উজ্জ্বল, বড় পিচ্ছিল, 
প্রহসিত করে, সে প্রিয়তর।








চোর

পাকা চোর হয়ে উঠলাম একদিন

চোখে ও চামড়ায় অভ্যস্ত হতে
সেই কবে থেকে অনুশীলন
কেবলই পরদ্রব্যে সংবদ্ধ সাধ
সারারাত আপন করতে
সিঁধ দিয়ে গেলাম

পাক্কা চোর, পড়ে রইল ভালো কাজ

কিছুই ছিল না কি, নিজের কাছে
নূন্যতম ছোটো কৃষিক্ষেত
সামান্য দুই চারটি বিজ, থেকে গাছ
তারপর আরও পরবর্তী ফল, ফলন
ছিল না কি, বড়শি জাল বৈঠা
ভোঁতা তলোয়ার বর্শা ঢাল

হ্যাঁ, পথে ফেরি বিকোচ্ছে না দেখে...








ভালো ভাষণ

যেন জনপ্রিয় জনসভা থেকে বলছ
এমনই গলিত রাজনীতি মধ্য শিরায় তোমার

আকাট, গ্রাম থেকে, তাপ্পি মারা লজঝরে লরিতে
সওয়ার, ধুলো আর ধাক্কার সাধনান্তে
পৌঁছে গেছি শুনতে প্রেম-মোহিনী ভোটের প্রচার

বহু বিগত থুথু লেগে থাকা ধাতব মাইক্রোফোনে
দেখতে পাচ্ছি--- তুমি আশ্বাস বমি করছ আবার

আমি কি বরফায়িত-গোলাপের দোকানদার---
যে, প্রেম আর প্রতিশ্রুতিকে ছাড়িয়ে বুঝব না
হয়তো বক্তৃতায় মজেছে মেঠোর কর্ণকূহর,
কিন্তু দেশি আর বিলিতির গলিত স্বাদে
নূন্যতম নুনের পার্থক্য বোধগম্য আমার।

                           







চাঁদ

একটা টালি সরিয়ে দিই, চালা থেকে টুক করে
বহুদূর থেকে গনগনে চাঁদ, ঘরে এসে পড়ে,
সার সার টালি বোনা চালা, খড়, ত্রিপল আস্তানা
ফুটি ফাটা সরণীর জ্বালা তত, যত বৃষ্টি রোদ
সরিয়ে দিই মেঘে ঢাকা, চিলতে, ইচ্ছে সমান
মাঝ রাতে চুরি করে নিই, জোছনার আসমান,
সেই চাঁদ ফেলে ফাঁদে, আলো তার গণ্ডুষে ধরে
লাগে মহা উৎসব, নোংরা এ ছেঁড়া বিছানার পরে...








খাপ

খাপের মাপে হলে, সব ফিট হয়ে যায়
জামা জুতো যন্ত্র যাপন--- যা যা হয় আরকি
ওজনটা আয়তনের ব্যস্তানুপাতিক,
উপন্যাসের উপকাহিনিই হোক
অথবা উড়ন্ত উপগ্রহের আকার,
বহুকালের অনুশীলীত, শান দেওয়া বোধে
প্রেক্ষিতে ফেলে ফেলে শুকিয়ে তোলা রোদে
একটা ছাঁচে ফেলা মূর্ত আকার, দরকার
অসংলগ্ন, বিমূর্ত, শূন্য দিগন্ত, ইত্যাদি
অসীম, অপার, অনন্ত শুনতে ভাল্লাগেনা আর
ওসব সাইকো কেস, কাজে আসে খাপের ব্যবহার।









প্রেত-গান

বেহায়া, জড় পাত্রেও ওঠে ছোটো ছোটো ঢেউ
ঘিঞ্জি খোপের জনপদের চিলতে জানলায়
হেমন্ত পথের পাশে--- ভিজে অন্ধকার থেকে
নগ্ন-তরলে গা মেলে দেয় ক্ষুদ্র চাঁদ
পোড়ে অতীত ফসলের পতিত অবশেষ
ধোঁয়ার প্রান্তরে তখন একটি কাঁচের শরীর
কান্না গোপন রেখে,ছায়া হয়ে মুখোমুখি 
পার্থিব টেবিলের ওপার, হাস্য-উৎসুক
টেনে বসে চেয়ার, কালো রেখা, পুরু কাঁচে
বেহায়া পাত্রের ছলাৎ যতটা শব্দ পারে
তারও চেয়ে মৃদু স্বরে,অনাদি-সংগীত 
ঘন ও সূত্রবৎ আশ্লেষে মাখা--- ধূসর গ্রীবায়---
যে প্রেত-উচ্চারণ লেগে থাকে, ঠোঁটে আমার
পাত্রটি উপুড় হয়ে যাওয়া পরবর্তী সকালে।








ব্যস্ত 

স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সার সার কলকব্জায়
প্রয়োজনের নিস্ক্রমণ দেখতে দেখতে ফিরতে হয়,
বড় রাস্তার ম্যারাথনে হাততালি দিতে দিতে
বেঁকে গেছে সমস্ত গলি পথ
স্ট্রিট আলোরা হাঁটছে ততদূর, যতদূর মানুষকে
ঠিকানা বলে দেওয়া যায় 
দু'পাশের ঘর বাড়ির মিছিলে শ্লোগানেরা বিভৎস
ব্যস্ত হয়ে তুলছে মুঠো ভরা রোদ
যে সব পুরনো স্বার্থ বলেছিল--- অফিস ছুটি থাক
তারাও হাত পা ছুঁড়ছে আজ
বড় দ্রুত ছুটছে এক দূর-সমুদ্র-বাতাস আর
স্থানীয় বৃষ্টি, একটা হেস্তনেস্ত টানে
সবচেয়ে অস্পষ্ট কিছু কিছু ক্লিশে শব্দের মানে
কিছুতে খেয়াল করছে না ঝড়
মাঠে মাঠে স্বপ্ন-ব্যাপারীর গানে একটা তোলপাড়
শুরু হয়েছে মনের ময়দানে
পোশাক পাল্টে পরবর্তী নাটকের জন্যে এখন
প্রস্তুতির গতিশীল সন্ধে তৎপর
শুধু পা-খোঁড়া স্মৃতি-ভার নূব্জ ছায়াটা তখনও
একা একা আঙুলে গুনছে একটা একটা বিন্দুর 
মতো যত গুপ্তচর অন্ধকার।
                













অনিরুদ্ধ সুব্রত


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন