১)
সমুদ্রবিজ্ঞান অথবা নাবিকের নির্দেশিকা


কাঁটাকম্পাসের অঙ্ক সমুদ্র জানে
জল ও বাতাসে বিজ্ঞান লিখে রাখছে নাবিক
তুমি কি পশ্চিম উপকূল থেকে এলে ? 
জামায় আস্তিনে মরচের দাগ-- চুলের পাকে পাকে জড়িয়ে আছে নুন
সত্যি এমন সকালে সদ্য-ওঠা সূর্যের সামনে
তোমাকে সাক্ষাৎ দেবদূত মনে হল ! 
তুমি প্রবাল-রাজ্যের কথা জানো ? 
নীল তিমি ?  জানো ? 
ঢেউয়ের শীর্ষে স্ফূলিঙ্গ,  ফসফরাস নাকি অক্টোপাসের নিঃশ্বাস ? 

আমরা সৈকতের মানুষ
কাঁকড়ার গতিবিধি নথিভুক্ত করেছি, ঝাউ-পাইনের হাহাকারও দেখামাত্র চিনে নিতে পারি
তুমি তটরেখা বরাবর কতদূর যাবে ? 
বালির সোনালিতে আদিগন্ত ছড়ানো ঝিনুক
এই লিপি, ভাষ্য , ব্যাজস্তুতি  পড়ে নিতে পারো ? 

বন্দরে কাঠের কেবিনে টিমটিম জ্বলে আছে আলো
হাওয়ায় তীব্র ঝাঁঝ,  গরম তেলে সাটিন মাছ ভেজে নিচ্ছে কেউ

এখন আকাশ-ভর্তি নক্ষত্র ও চাঁদের সম্মতির নিচে
এসো মৎস্যকন্যা বা হাঙরের উপদ্রব বিষয়ে আলোচনাটা শেষ করে ফেলি।








(২)
একটা অলৌকিক মফস্বল অথবা গ্রীষ্মের ছুটি


এইসব মফস্বল মারাত্মক
ছাদের আলসে থেকে যত্রতত্র পরির ওড়না ঝুলছে
রাধাগোবিন্দ ভ্যারাইটি স্টোর পেরিয়ে গেলেই
ছেঁড়া খবরের কাগজের মতো এক টুকরো আকাশে
সপ্তর্ষিমন্ডলের জিজ্ঞাসার চিহ্ন লেপ্টে দিয়েছে কেউ
নিচেই উল্কার উনুনে আবহমানের চায়ের কেটলি 
ফুটছে তো ফুটছেই
ট্রেকার স্ট্যান্ডে ভিন্ গ্রহের প্রাণীদের ভিড়। 

এইসব মফস্বল মানেই একটা সাইকেলের আত্মজীবনী 
অথবা একটা নিরুদ্দিষ্ট পরির ফিরে আসার গল্প

আমরা এখন রূপকথার বইয়ের ভেতরে ঢুকে
একটা ডানাওলা ঘোড়া খুঁজছি
এদিকে কবে যে গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হয়ে গেছে
আমাদের খেয়ালই নেই।









(৩)
আজব সকাল


হাত ছোঁয়াতেই পাথরটা ঘাসফড়িং হয়ে উড়ে গেল
এই ছিল গাছ, পরক্ষণেই জল হয়ে নদী
ততক্ষণে আকাশ শস্যক্ষেত হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে মাটিতে।

এতসব বুঝে ওঠার আগেই
আমার ডানহাত শিউলিডাল
বাঁ-হাত কচুপাতা
শরীরটাও কখন যে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে
খেয়াল করিনি
তাই অগত্যা বুক ফাটিয়ে ঝরনা বের না করে উপায় আছে! 
ফলে এখন চারদিকে শুধু জলতরঙ্গ আর দুষ্টু হাওয়া
যে-শিশুরা পাখি হয়ে উড়ে গেছিল
দ্যাখো তারাই কেমন খুঁটে খুঁটে
গম খাচ্ছে সকালের উঠোনে।









(৪)
চাঁদের ছাউনির তলায়


সৌন্দর্য ও নাস্তিকতার মধ্যে এক-চিলতে গলি
গলি পেরিয়ে চণ্ডীমণ্ডপ 
সেখানে বস্তু ও চৈতন্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক 
বাঁদিকে বোধিবৃক্ষ , তার তলায় মোক্ষকামীদের ভিড়
ডাইনে খামারবাড়ির দিকে সহজিয়াদের গানের আখড়া

তুমি একটার পর একটা জটলা পার হয়ে
যখন পুবদিকে মুখ করে বসলে
তখন সন্ধে গড়িয়ে রাত্রি
শিরিষের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে চাঁদ
তার কোনো স্বপক্ষ-বিপক্ষ নেই --
বিচ্যুতি-ব্যাভিচার নেই--কৌমধর্ম নেই--
শুধু আছে এক আগুনহীন জ্বলে যাওয়া
আর অব্যর্থ দৃষ্টিনিক্ষেপ।








(৫)
কথা বলছিল


সে কথা বলছিল
আর শীতের পাতারা ছিল
বসন্তের দিকে ধাবমান। 

উন্মুখ ধুলোপথের ওপর 
পিঁপড়ের সারি তখন
হেঁটে যাচ্ছিল দিগন্তের দিকে।

সে কথা বলছিল
আর গোধূলি থমকে ছিল
নদী ও বাতাসের ফাঁকটুকুতে।

একটা বীজ ফসলের ক্ষেতে
ঘুমের ভেতরে জেগেছিল
তার গায়ে হিরণ্যগর্ভের আলো
আশেপাশে পাখি ছিল না একটাও
তাই ছিল না কোনো ডানা-ঝাপটানোর শব্দ
বা ঊর্ধ্বগতি।

দিন শেষ হতে চলল
অথচ রাত্রি আসতে বেশ কিছুটা দেরি
এরই মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে কথা বলছিল
শূন্যতার এপার থেকে
  ওপার পর্যন্ত।







নীলোৎপল গুপ্ত

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন