চন্দ্রগ্রহণ

আকাশের রং আজ ধোঁয়া ধোঁয়া 
মেঘে ঢাকা তারা
শান্ত জলে উঠেছে জোয়ার
চাঁদ লুকিয়েছে লজ্জায়
কোথায় নিষ্পাপ হাসি?

প্রেম লুকিয়েছে ভুলের কোটরে
মন শুয়ে পড়েছে তোমার ভেজা মাটিতে
হে কপোতাক্ষ! 
আজ বুঝি চন্দ্র গ্রহণ?






রাইকিশোরী

জলের উজান বেয়ে উঠে এসেছিল পড়ন্ত বিকেলে
প্রেম
পেঁচিয়ে ধরলো আষ্টেপৃষ্ঠে আমাকে জড়িয়ে
হাঁসফাঁস অবস্থা আমার,
এপারওপার সব একাকার হয়ে গেল আমার তখন 
আকাশে ঈদের চাঁদ আর
বুড়ো শালিকের প্রেমের রাইকিশোরী।







হাতুড়ি 

(মে দিবস স্মরণে)

শব্দের মিছিল 
এঁকেবেঁকে চলে শুধু
সাদা কাগজের রাজপথ বেয়ে
জীবনের খেরো খাতার হিসেব
একটু যন্ত্রণা আর একটু দাসত্ব

তুলে নিই হাতে 
শব্দের হাতুড়ি
একটা নির্মম আঘাতে
ভেঙে দিই সব 
লাল করে দিই সাদা খাতা খানা 
শ্রমিক শব্দেরা
টিপি টিপি পায়ে হেঁটে চলে
পৌছে যাবে ঠিক এবার নিজের ঠিকানায়।







যদি

নীলাক্ষী তোমার ঈদের চাঁদ 
যদি হয় আমার চন্দ্রমা
তোমার জরিপাড় ওড়নার সাথে 
আমার ফিনফিনে গরদের ধুতি আর উত্তরীয়,--
গাঁটছড়া বেঁধে, যদি হাত রাখি 
তোমার মেহেন্দি লাগানো হাতে 
যদি বাজে আমার গম্ভীরা বীণার সাথে 
তোমার নিখাদ এসরাজ
যদি তুমি আমি এক হই ফুলের জলসায়
বায়তুল মোকাররমের দরজার গোলাপের পাপড়ির  
পাশে যদি বাজে ঢাকেশ্বরীর শঙ্খ?

গোলাপের পাঁপড়ির সাথে রক্তকরবীর রং
ওড়াই দুজনে যদি
স্বচ্ছতোয়া করতোয়া সাক্ষী হয় যদি 
আসবে তুমি নীলাক্ষী ?






ভয় কি

চল না কাল‌ খুব ভোরে‌  চলে যাই
মধুর সাগরদাঁড়ি
'মধুকুঞ্জে' হাঁটব দুজনে 
ফুলগুলো ঝরে পড়বে কবিতা হয়ে 
পা ডুবিয়ে দুজনে বসবো
কপোতাক্ষের স্থির জলে
জলে সাপ থাকবে, মানুষ নয় 
তাহলে ভয় কি ?

চল না দুজনে চলে যাই সোঁদরবন
খুলনা শহর থেকে মঙ্গলার ঘাট
বৃষ্টি নামবে তখন আমাদের ভেতরে বাইরে
জলে খুব ভিজবো দুজন 
ঝাপাবো মঙ্গলার জলে 
জলে আছে  কামট কুমীর, ডাঙায় আছে
ডোরাকাটা বাঘ,‌ মানুষতো নয়,
তাহলে ভয় কি?







ইলেকশনের পাঁচালী

(শক্তি চট্টোপাধ্যায় স্মরণে)

ইলেকশনের পাঁচালী শেষ হলো 
দাঙ্গা, মারধোর, হাঙ্গামা শহরে চমৎকার বিকোচ্ছে
আমার মুষড়ে পড়া বাবা, ধুতি ঝুলসার্ট পরা বাবা
ঘরে এসে সেঁদোলো লুকিয়ে
যে বাবাকে মাথা উঁচু করে আদর্শের বুলি কপচাতে
শুনেছি প্রথম থেকে 
তার মাথা নীচু ভয়ে, চশমার আড়ালে ভয়ার্ত চোখ
কি যেন খুঁজছে
রাত গভীর যখন‌ হলো‌ হঠাৎ শুনি দরজার‌ বাইরে 
কারা যেন‌ জোরে জোরে কড়া নাড়ছে, 
বাইকের ভটভট শব্দ ছাপিয়ে কে যেন চেঁচিয়ে উঠলো
"অবনী বাড়ী আছো? এই শালা অবনী বেরিয়ে আয়। "
বাবা ভয়ে আরো সেঁধিয়ে গেল‌ খাটের তলায় 
কি যেন‌ খুঁজছে বাবা।
আমি ভয়ে ভয়ে নীচু স্বরে শুধালাম "কী খুঁজছো বাবা ?" 
বাবা ততোধিক নীচু স্বরে দিল জবাব " আমার মেরুদন্ড।"







এপার ওপার 

হেঁটে হেঁটে পার হই অনেকটা পথ 
সামনেই মনচোরা নদী 
যা ছিল আমার দেশ, ওপারে 
বাতাসে ফাগুন ওড়ে 
আর আমি নির্বাক এপারে 
মনে দুরন্ত আগুন চেপে রাখি আমি
আজকাল আর ফাগুন আসে না, 
ওপারে আমার প্রেম শুয়ে আছে ।







বিপ্রলব্ধা

রাতের আকাশে যখন হিমেল হাওয়া বয় 
সোঁদরবনের সোঁদা সোঁদা গন্ধ
ওর চুল থেকে গড়িয়ে পড়ে,
ওর পেলব হাতের কনুই বেয়ে নামে 
নীচে, আরো নীচে, আঙুলের ফাঁক দিয়ে 
গড়িয়ে পড়ে তরল‌ অন্ধকার, 
আর বৃষ্টি নামে।

রাতের আকাশে যখন বৃষ্টি নামে 
অন্ধকার খুপরি ঘরের বিছানায় 
কেঁপে ওঠে ও।
ভৈরবের জলে জাগে 
পিয়া মিলনের‌ আদিম উল্লাস
অন্ধকার বাড়ায় সর্পিল হাত, 
খেলা করে প্রেমের জোয়ারে, 
ওর নরম শরীর জুড়ে
ওর প্রতি রোমকূপে জাগে আর্তি;
সুখের, আদরের।

রাতের আঁধারে যখন আদরের বন্যা নামে 
সারা শরীর জুড়ে বয়ে যায় 
রতিস্নানের পরশ
ঝরঝর বৃষ্টিতে ভিজে 
শরীর একসা হয় বারবার
তরল সঙ্গমের আবেশে কেঁপে ওঠে শরীর। 
জেগে থাকে শুধু প্রতীক্ষা
আর বিপ্রলব্ধা
নীলাক্ষী পারভীন মিতা।






দৃষ্টিসুখ

দুটো চোখ আর তার  
আর ঐ কাজল কালো মণি দুটো
যেন অতলান্ত এক প্রতীক্ষা;
বাঁকা কালো মোটা ভুরু দুটো যেন 
দরজার উপরে পাহারা দেয় দিনরাত
অযাচিত দৃষ্টির অনধিকার অভিপ্রেত থেকে ।
মাঝখানে, সুডৌল টিকালো লোভনীয় নাক 
আর তার নিঃশ্বাসের সুগন্ধ, মাতাল করে মন;
আরো নীচে, 
উপরের ফোলানো ঠোঁটের 
বিন্দু বিন্দু ঘাম যেন‌ ডাকে 
চেখে নিতে তার নোনা স্বাদ 
নীচে কমলালেবুর কোয়ার মত অপর ঠোঁট 
যেন অপেক্ষায়
গরম জিবের স্বাদ নিতে 
গরম লালার আর দাঁতের মাঝে পিষ্ট হয়ে
অমৃতের সুখ নিতে ।








মুণিরা

(মুনিরা চৌধুরী স্মরণে)

বহতা সময় সূচকের কালাতিক্রমন করে 
তোমাকে পেয়েছি তোমার কাঙ্খিত পথে
অলককুন্তলা, অংসরূঢ়া চারুবাস তুমি, আর,--
তোমার হিমেল শরীর বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছিল কবিতা,
তোমার কুন্তল চূর্ণে, সুবঙ্কিম ভ্রূযুগলে, তোমার কপোলে, 
গণ্ডদেশে, অংসে, স্তনাগ্র চূড়ায়;
তোমার সুগভীর অববাহিকা বেয়ে, ত্রিকোণ প্রেমের স্বর্গ পেরিয়ে,
উৎসে, আগুলে গড়িয়ে পড়ছিল কবিতা।

নিদাঘের সূর্য আর প্রদোষের চন্দ্রিমা প্রাবৃটে রচে চলেছিল
তোমার মঙ্গলকাব্য,
আর বহুদুরে 
জলে ভেজা কাঠকাছিম অলস বিকেলে 
নিভৃতে গাইছিল ফিস ফিস করে 'মুনিরা, মুনিরা'।








দিবাকর পুরকায়স্থ 









Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন