An Unghostly Ghosted Novel


পর্ব-১



শেষ পর্যন্ত শুরু করতেই হলো। ওর নাম কী যেন, ওহো ষ্ট্রোক হওয়ার পর থেকে মন উঁহুঁ মন নয় স্মৃতি, না না তাও নয়। সব কিছুই যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।  ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে সমিধ ধেৎতেরিকা সমিধ নয় সমিধ নয় সমর, হ্যাঁ হ্যাঁ সমরই তো আর সেই সাথে 'আদিত্য-প্রত্যূষ'ও ভুত নিয়ে উপন্যাস লিখতে বলেছে।  শেষ পর্যন্ত তা শুরু হয়েই গেল। একটাই ব্যথা রবীনদা জীবনানন্দ কাকু মানিক জেঠু সুনীল ভাই আমার এই লেখাটা শুরু হওয়ার আগেই এই ভৌতিক লোক থেকে  অভৌতিক স্বাস্থ্যবর্ধক ক্যাপসুলে... কী আর করা যাবে শুরুটা হয়েই গেল।

আরে ধ্যুর ধ্যুর আমি শুরু করবার কে? তাহলে তো য়্যাকদ্দিন শুরুই করে দিতাম। কিন্তু তা হয়নি। অবশ্য এবার তা হয়ে গেল। লাখ টাকার প্রশ্নটা হল তাহলে শুরু করলোটা কে? 

কে আবার ভুতে নয় ভগবানে। উঁহুঁ ভগভগিয়ে হাসার কোনো মানে নেই। এই দুজনের মধ্যে একজনই তো শুরু করার মালিক। ওই যে কথায় বলে না দশচক্রে ভগবান ভুত। ধ্যুৎতেরিকা আবার প্রশ্ন। মানে আপনার মনে যে প্রশ্নটা জাগছে ভুতে বা ভগবানে আমায় তা ধরিয়ে দিচ্ছে।  হুঁহুঁ বাব্বা ভুত নিয়ে কম শ্মশান ঘেঁটেছি? ভগবান নিয়ে কম তীর্থে তীর্থে ঘুরেছি? হ্যাঁ কী বলছিলাম যেন দশচক্র মানেটা কী? একটা লোকের দেহে মূরাধার থেকে শুরু করে সহস্রার পর্যন্ত মোট দশ দশটা চক্র। অর্থাৎ দাঁড়ালো যখন ভগবান এই দেহেই মানে এই চক্রে চক্রেই তখন সে ভুত অর্থাৎ অতীত। তাও বুঝতে পারা যাচ্ছে না? এক্কেবারে গর্দভস্য গর্দভঃ?  উঁহুঁ গাধা বলে গালাগাল দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। গাধাওতো অসহায়ভাবে নিরুপায় নিঃসঙ্গ বোঝা বয়ে চলেছে; আর আমরাও তো ভুতের বোঝা বয়েই চলেছি। 

কী বলছো... হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তো বয়তেতো হবেই। আমরা নিজেরাই যে পাঁচ কিসিমে’র ভুত দিয়ে তৈরি -- মাটি জল আগুন বায়ু শূন্য। এই পাঁচ কিসিমে হাঃ হাঃ পাঁচ ফোড়ং-- তেলে মানে এই স্পেশে বা দেশে পড়লেই ফুটফুট ফুটছে তখন কত্তো ফুটানি চড়বড়ানি তড়বড়ানি মাস্তানি আর তারপর কিছু সময় বাদেই ফুটো ডুম, যে কে সেই ওই ভুত ভুত ভুতুম। ওহো হ্যাঁ পেঁচা তো এইর'ম করেই ডাকে ভুতভুতভুতুম। তার মানে পেঁচা কি ভুত দেখতে পেয়েই ওইর'ম ডাকে নাকি কোনো দরকারে প্রয়োজনে ভুতকে ডাক দেয়-- 'আই ভাই এই কাজটা করে দে ভুতভুতভুতুম।'

ধ্যুত ধ্যুত এইসব আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুমে গল্প কোথায়? এতো ধানভানতে শিবের গীত। শিহরণ নেই গা-ছমছমানি নেই লোমকূপ খাড়া হয়ে ওঠা ভ...ভ...ভয় নেই। কিন্তু আমারও একটা সত্যিকারের প্রশ্ন আছে।  কেউকি সত্যিই ভুত দেখেছে?  সবাইতো বলে অমুকের কাছে শুনেছি,  আর তমুককেতো খুব ভালো ভাবে জানি। ওতো মিথ্যে বলবার লোকই নয়। তাহলে? ... মানে তাহলেতেই একটা সত্যে প্রতিষ্ঠিত ভুত আছে, ভুত ছিল, এবং ভুত নিশ্চিত ভাবেই ভুত।

তা গল্প যখন আসছেই না, তখন আমারই মানে উত্তমপুরুষেরই ( না নিজেকে অধম বলে বিনয়ী সাজতে আমি কখনই রাজি নই। ইল্লি আমার মধ্যেওতো ভগবান আছে না কি? তাহলে নিজেকে অধম বললে ভগবানও তো অধম হয়ে যায় না কি?)  তাহলে দু'একটা ঘটে যাওয়া ঘটনা ততক্ষণ আওড়ানো যাক যতক্ষণ না নিশ্চিন্তে নিশ্চিত ভুত না নামে।

সেদিন কৃষ্ণর বাড়িতে আড্ডা দিতে দিতে রাত ১২টা পেরিয়ে গেছে।  সময়টা ষদ্দূর মনে পড়ছে শীত, হুঁ শীতই হবে। আর পূর্ণিমা বা পূর্ণিমার আগুপিছু মানে কাছাকাছি।  আলো আছে। কুয়াশাও। আসেপাশে লোকজন নেই। পুকুরও। শুধু আমারই পায়ে হাঁটার শব্দ। হঠাৎই। হঠাৎই সামনেই নজরে পড়লো সামনেই খানিকটা দূরে বে-শ লম্বা বেশ বেশ একটা বিশাল একটা সাদা শাড়ির ঘোমটা টেনে... একটা ভয়... সাড়া শরীর জমে যাচ্ছে...  নড়তে পারছি না... অনেকের কাছ থেকেই শোনা কথাটা সংষ্কার হয়ে মাথার গভীরে কেটে দাগ বসিয়ে দিয়েছে 'অনেকেই এরকম একগলা ঘোমটা টানা মেয়ে ভুত দেখেছে...  জ্ঞান হারিয়েছে...  বেশ কয়েকদিন পর চেতনে ফিরেছে।' কিন্তু, আমি এখন কী করবো? পেছন ফিরে বন্ধুর বাড়ির দিকে দৌড় লাগাবো? কিন্তু এমনকি গ্যারাণ্টি আছে যে ওই মেয়ে ভুতটা আমাকে তাড়া করে ধরে ফেলবে না? আর তারপরে...  তারপরে কী হয় হয়ে থাকে কারও মুখে শুনিনি। যা হয় হবে, এগোনোই যাক। একটা গোঁ চেপে ধরলো। গোঁ গোঁ করে এগুতে লাগলাম। অমিতা হাতটা চেপে ধরে টান দিল--' আচ্ছা গোঁয়ার তো তুমি। একেবারে গোমুখ্খু।  আচ্ছা, ওটা যদি একটা দুষ্টু বদমাইস শয়তান লোক হয়, ওইরম ভাবে সেজে আছে তোমাকে মেরে ধরে তোমার কাছে যা আছে কেড়ে নেবে বলে?' - 'শোনো লুট করার আর লোক পেল না, তাও আবার আমায়? আমার আছেটা কী? একটা ব্যাগ দু-একটা বই পেন খাতা দু-একটা দশ টাকার নোট সম্পত্তি বলতে তো এছাড়া আর কিছু কি? এর জন্যে এতো কিছু সেজেগুজে লুটতরাজ করাটা পোষাবে কি? পোষাবে না। ওহো, না-তো। আর একটা দামী মাণিক রতন আছে যে তোমার সে কথা তো ভুলেই যাচ্ছিলাম।'  অমিতা হাঁ হয়ে অবাক চোখে তাকাচ্ছিল। - 'অমন করে তাকিয়ে আছিস কেন? বুঝতে পারছিস না তুইই তো সেই দামী... ' -আমি আগাতে থাকি। ও আমার ওপর ঝাঁপিয়ে আঁচড়ে কামড়ে টেনে আমাকে এগুতে না দেবার প্রাণান্তকর চেষ্টায় মাতে। কিন্তু আমি এগুতেই থাকি। আর কাছাকাছি পৌঁছেয়...

যাচ্চলে - একটা কলাগাছ থেকে একটা বিশাল লম্বা কলাপাতা তার উপর চাঁদের কুয়াশামাখা আলো পড়ে দূর থেকে এমন একটা মায়াবিভ্রম তৈরি করেছে যে দেখে মনে হচ্ছে যেন একটা সাদা শাড়ি পড়া বউ মানুষ নাকি বউ ভুত!!! -'দেখলে দেখলে...। তুমি তো আসতে দিতেই চাইছিলে না, তোমার কথা না শুনে জোর করে এপর্যন্ত এগিয়ে না এলে এই সত্য দর্শনটা কি হতো? তাহলে মানছো তো এবার তোমার হার। আর তাহলে এই শুনশান ফাঁকা রাস্তায় এই আলোমাখা কলাপাতা তলায় তোমার কাছ থেকে অনেক আঁচড় কামড় খাওয়ার পর একটু আদর একটু ঠোঁটের গন্ধ তো আমার ন্যায্যত পাওয়া হয়। ঠিক আছে ঠিক আছে নাও এই আমি চোখ বুজছি।  এবার তো তুমি দু-চোখভরা খুশি রং দিয়ে আদর আরও আরও আদর-আলায় এই ফাংকা রাস্তায় নিজে বেজে উঠবে আমায় বাজিয়ে দেবে।' চোখ বুজলাম। সমস্ত শরীর নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে ওর হাতে উপুড়চুপুড় খুন হয়ে যাওয়ার জন্য। ওহ্! এ অপেক্ষায় কীই যে এক মধুযামিনী সুখ... এই ছোট্ট শরীর-বাক্সে অতো অপেক্ষা ছলছল সুখ কুলোবে না বোধহয়। এ এক নিজেকে না এগিয়ে অথচ যেন প্রতি মুহূর্তে ষ্ট্যাচু হয়ে ওর মধ্যে এগিয়ে ' এই এই এইবার ও আমাকে ছুঁলো'- এ এক নেশা টলমল কানামাছি খেলা... কিন্তু কই কী হলো করছেটা কী ও?  এতোটা সময় কেটে গেল... না ছুঁচ্ছে, না কোনো কথা বলছে - কোনো সাড়াশব্দই নেই ব্যাপারটা কী ঘটছে?  এবার তো চোখ খুলতেই হচ্ছে।  

কিন্তু এ কী ই ই ই! কেউ কোত্থাও নেই! -'অমিতা অমিতা এই, এতো রাতে কী ফাজলামি হচ্ছে।  কাছে এসো। যতোই পূর্ণমার আলো থাক এই অন্ধকারে কতো রকম সাপখোপ পোকামাকড়...  কই কী হলো? কতো দেরি হয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল আচে?' নাঃ। কোনো সাড়াশব্দ নেই। হঠাৎই একটা কথা খেয়াল হতেই মুহূর্তেই কেঁপে উঠলাম। এতোক্ষণ ধরে সে কোন্ কালে দাড়িয়ে কোন্ যাদুভারে কোন্ নিষ্কলাতীত সফল অমিতার সাথে কোন অমিতা থেকে কোন্ ভুত-অমিতার সাথে কথা উচ্চারণ করে চলছিলাম?  কৃষ্ণর বাড়ি থেকে আমি তো একলাই আসছিলাম। ঘন-আলো-কুয়াশায় মেয়ে-ভুত ভেবে একলাই নিজেতে থমকে গিয়েছিলাম। তাহলে এই মাঝরাতে অমিতা কোত্থেকে এলো আর কোথা থেকেই বা আসবে? রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটা গাছের কাটা গুঁড়ির উপর নিজেকে বসাই। কিছুটা আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা যেন একটা চিঠি... সেটা খুলে আবার নিজের মনে মনে সবিস্তারে পাঠ করি। আর সাথে সাথে নিজেকে কয়েকটা প্রশ্নও করতে থাকি।

১) অমিতার হঠাৎ প্রবেশে আমার মধ্যে এতোটুকুও চাঞ্চল্য বা চমক সৃষ্টি হলো না কেন?  

২) আঁচড়ানি এবং কামড়ানির দরুণ যথারীতি আমার দেহে যন্ত্রণা ও জলুনির সৃষ্টি হলো। আচ্ছা কেউ যদি বাস্তবে না এসে থাকে এবং তার করা আঘাত যদি অবান্তর অবাস্তব এবং আধিভৌতিক স্তরের হয় তাহলে দৈহিক জ্বলুনি সৃষ্টি হতে পারে কি? 

৩) কী একটা প্রশ্ন পেটে আসছে মগজে আসছে না... কেন এবং কেন? 

৪) তাকে আমি দেখেছি আমার চক্ষু যন্ত্র দিয়ে এবং শ্রবণ যন্ত্র দিয়ে তার বাক্য শুনেছি আর তাছাড়া হস্ত দিয়ে আমাকে টেনে রাখার প্রয়াস ছিন্ন করে মানে বেশ কিছুটা নিজস্ব বল প্রয়োগ করেই আমি ওই ঐ তথাকথিত মেয়েভুতের দিকে ধাবমান হয়েছি। আচ্ছা আপনারা যারা এই লেখাটা পড়ছেন বলুন তো এই এতোসব ক্রিয়াকাণ্ড কি হ্যালুসিনেশন হতে পারে? 

আপাততঃ সবকটা প্রশ্নের উত্তরই অনুত্তরে রয়ে গেল। তবে একটা নতুন সমস্যাই বলো বা দিকদর্শনই বলো খুলে গেল। আর সেটা হলো হঠাৎই উদ্ভূত মেয়েভুত অদৃশ্য হয়ে গেল। আর এদিকে জ্যান্ত অমিতা ভুত অথবা অন্যকিছু হয়ে দৃশ্য হলো। তবে (আপনারা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে ধরে ফেলেছেন আমার অনেকগুলো শব্দ ব্যবহারগত মুদ্রাদোষ আছে আর তার মধ্যে হলো একটা এই 'তবে' শব্দটা।) অমিতার ক্ষেত্রে আমাতে এরম আধিভৌতিক দর্শন নাকি নিষ্কলাতীত সফল অমিতাদর্শন আরো কয়েকবারই ঘটেছে।  

ও হ্যাঁ, পড়তে পড়তে এপর্যন্ত এসে যদি কারুর মনে হয় ধ্যুৎ ভাল্লাগছে না, তাহলে আর পড়বেন না। তবে কী হারাইতেছেন হে পাঠিকা (দেখুন আমরা আমি আপনি সবাইই তো প্রকৃতি, কাজে কাজেই পাঠিকা তো বটেই। তাছাড়া আপনাকে পাঠিকা ভেবে নিলে আমার মধ্যেটাই বেশ একটা রোমহর্ষ মনে হয়, লেখার তাগত বাড়ে, ট্রেনলাইন না থাকলেও এমনকি স্টেশন না থাকলেও মনে হয় না-থাকা প্লাটফর্মেই ঘন আমি-তুমি আলো-অন্ধকারে বসে থাকা মাঠদিয়ে হু হু করে ভুতুড়ে ট্রেন ছুটে যায় যাতে যাত্রী কেবল আপনি যা আপনি তখনও পর্যন্ত নিজেও জানেন না। তবে হে পাঠিকা হে যাত্রী এতো আগেই শুরুতেই কথা দিচ্ছি পাঠের শেষে আপনি অবশ্যই ভুত দেখিবেন অথবা ভুতকেই আপনি ভুত দেখাইবেন। হে পাঠিকা এরমধ্যেই একটা জিনিস তুমি নিশ্চয় ধরে ফেলেছো একটা ভুতনি তো গোড়া থেকেই আমার ঘাড় ধরে রেখেছে,  আর সেই ভুতনি হলো গুরুচন্ডালীকা দোষ অর্থাৎ একবার সাধু একবার চলিত ভাষা যেখানে যেটা আমার ব্যবহার করার ইচ্ছে হচ্ছে সেখানেই সেটা খাপে খাপে খাপিয়ে দিচ্ছি মানে এখানে আমিই সম্রাট নবাব আমিই প্রিন্স অফ হুঁ হুঁ আর তাই কাউকে কেরাই নে।

(পরের বেলা...)


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন