বিষাদের দেশে 

বিষাদের দেশে সন্ধ্যা এল 
ভাঙা তোরঙ্গগুলি থেকে 
আমাদের নিঃশেষ মূলধন 
অবলুপ্ত হবে। 
সাংসারিক ক্রিয়ার আলো 
গৃহে গৃহে জ্বলে 
গৃহিণীরা হৃদয় আগলে রাখে । 
বস্তু পৃথিবীর চাঁদ উদিত হলে 
কী নামে তাকে ডাকা হবে ? 
ভাঙা তোরঙ্গগুলি নিঃস্ব ইতিহাস...







জীবনযাত্রা

 অসম্ভবের সঙ্গে প্রেম, রাস্তা বহুদূর
 সমস্ত জীবন ভেসে ভেসে চলে যাই
 কারো কারো সাথে পথেই দেখা হয়
 আয়ুটুকু নৌকা, সময় সমুদ্দুর…






অসহায়ত্ব

 বিশ্বাসের কাছে নত হয়ে থাকি
 অবিশ্বাস এসে মিথ্যুক সাজায়
 সোনালি রুপালি হেসে ওঠে
 আমার সত্যতা তবে কেমনে বুঝাই!








সাক্ষাৎ

স্বপ্নে দেখা হোক তবে আমাদের
বাস্তব তো বড় অবাস্তব
চলে যাওয়ার রাস্তা দেখায় শুধু
রাস্তা তো ওই একটাই!

 খোলা দরজায় শুধু নিশি চলাচল করে
 রোজ সকালে ভাঙা সূর্য
 টুকরো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যায়
 অস্তিত্ব ক্ষয় হচ্ছে বলে
এইসব নিঃস্ব দিন একে একে পার হয়

 মৃত ডালিম-গাছের তলে
তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ আজও 
                                খুঁজে ফিরি
 শরীরেও অশরীরী আলো
                 উপলব্ধির ঢেউ তোলে

 অবশেষে স্বপ্নের কাছে গিয়ে বসি
 তুমি এসে সমস্ত আড়াল মুছে দাও।







বয়স বাড়েনি

বয়স বেড়েছে এত তবু মনে হয় বয়স বাড়েনি
সেই বটবৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছি
মৌসুমি বাতাস আসছে
মাছরাঙা নামছে অতর্কিতে 
এখনও ঘাড়ের রোমগুলি বাতাস নেড়ে দেয়
চুল এলোমেলো
ঝাপসা দৃষ্টিও উচ্ছল সতত
ঢিল ছুঁড়ে দিই 
অনুভূতির বেগ তরবারি বানায় 
যুগ ও সময় কেটে কেটে 
মানবিক সূর্যের প্রতীক্ষা তার 

নৌকাটি কোথায় যায় ? 
আমিও যেতে চাই নদীর সঙ্গমে 
বালিতে পায়ের চিহ্ন

উদ্দাম কৈশোর ছুটে যায় 







চলিত বাংলা

কেউ কেউ সাধুভাষা
তৎসম বিলাসে দ্রুত হেঁটে যায়
আমরা চলিত বাংলা পিছনে পড়ে থাকি
যদিও সাইকেল আছে; পকেটে কিরণ বিড়ি।

ওদের ছোঁয়া হাওয়া আমাদেরও ছুঁয়ে যায়
যদিও ওদের ময়ূর আছে; আমাদের মোরগ চেঁচায়।
বাস্তবের আগে জাদু লিখে ওরা ওড়ে মহাকাশে
আমরা শুধু ঝরাস্বপ্নগুলি কুড়িয়ে পাই 
ধুলো আর ঘাসে।
কখনো কখনো বৃষ্টি হয়; বৃষ্টিতে তরণী হাসে—
আমরা কলার ভেলায় ভাসাই লখিন্দর।
পরম আনন্দগুলি নগ্ন হতে হতে সভ্যতায় নাচে
আমরা চরম তুচ্ছ শব্দশ্রমিক, বেঁচে থাকি কান্না মুছে।








মাধুর্য       

মাধুর্যের সঙ্গে দেখা হলো
শেষ বিকেলের আলো পড়েছে ওর মুখে
আমরা সবাই অন্ধকারের দিকে যেতে যেতে
ডাকতে পারিনিকো আর ওকে    

মনগুলি সব পাখি
উড়তে উড়তে ক্লান্ত সব ডানা  
বিধির বিধান চারিপাশেই ফিরতে হবে তাই
ঠোঁটে শুধু দুঃখ জমে আছে, দুঃখশস্যদানা     
মাধুর্য শুধু  গড়ে যাচ্ছে পথে 
আলোর মতো দীপ্ত নম্র কাজল আঁকা চোখে
চূর্ণ চুল কপাল ঘিরে আছে,যদিও উড়ছে না আমরা শুধু বিস্ময় চিহ্নে রেখে যাচ্ছি ইচ্ছাকে 


                






তৈমুর খান






জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। 
পিতা ও মাতা :জিকির খান ও নাওরাতুন। 
পড়াশোনা :বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। 
পেশা :  উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক । 
প্রকাশিত কাব্য :   কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭) ইত্যাদি। 
পুরস্কার :  কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, কবি আলোক সরকার স্মারক পুরস্কার ইত্যাদি। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন