সহস্রটি মন
১ বোধি
অন্তরীণ জাইরোস্কোপের অভাব এখানে, পা টলে যায়
আশঙ্কায়, অথচ দ্যাখো,
ছোট পাথর আর বড় একসঙ্গে পড়ে মাটিতে,
গ্যালিলেও জানতেন, পিসার মিনার থেকে
পাথর ফেলে ফেলে। বাতাসের ক্ষমতা সামান্যই
ঘষা দিয়ে ঠেকাতে তাদের। শ্লথ করে দিতে আসলেই
প্যারাস্যুট লাগে, একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বা ধ্যান,
প্রত্যেকটি খারিজ শেষে নতুন মানুষ, হয়তো দ্রুত,
হয়তো ধীরগতি, কিন্তু আসলেই
সাধু, অন্যমনস্ক হলেও সদাশয়।
২ একটি গ্রহের জন্ম
দড়ি, গুলিসুতো, আঁকাবাঁকা ট্যারা পথ,
এইভাবে তার জন্ম হয়, ধুলোবালি কুড়িয়ে,
মাটি মেখে সারা দেহে, আহা সেই মহানুভব
গ্র্যাভিটির টান,
সন্দেহবাতিক মনটাকে গলিয়ে দেয় ফের।
পরে আরো খোঁজাখুঁজি, আরো সন্ধান, ধুক-পুক,
বিকশিত সে এখন, সেই ছোট গ্রহ এবার প্রাণ
পেয়েছে, বিচারপতি, এই ক্ষুদ্র গ্রহ এবার
প্রাণ পেয়েছে,
তাকে চেপে রেখেছিল সব
এলোমেলো করে দিয়ে, শাসিয়ে,
তার ভাগ থেকে ধুলো খেয়ে
দানাদার খেয়ে …
৩ আলেখ্য
বড় পাহাড়টার গায়ে বালতি বালতি
রঙ গুলে সূর্যাস্ত আঁকার সময়
আমাদের পরিচয় হয়। আমি আর সেই
খিদে পাওয়া ছেলেটার। আমি সঙ্গে সঙ্গে
তার দুটো উপযোগিতা বুঝতে পারি –
এক, খুব খিদে পেলেও এ ছেলে কোনোদিন
কাউকে জানাবে না, আর দুই,
আমার সূর্যাস্ত আঁকা দেখে
এর মুখে কোনো বিকার নেই।
৪ জায়মান
টেবিলের তলায় ঠেসে লুকিয়ে থাকি আমি,
বাইরে বৃষ্টি বা বরফ, এইখানে
প্রতিষ্ঠানের থামওয়ালা বারান্দা,
নিঃশব্দ নাড়িকাটা ঘর, কিন্তু
উড়তে শেখা আছে, কদিন অপেক্ষার
পরই কোকুন থেকে তরুণ মথ,
কানের পেছনে একটু ভেজা।
সবে দাঁতওঠা ইঁদুরের মতন আমিও
জাল কাটতে থাকি।
৫ সংশুদ্ধি
শাড়ীর পাড় আটকে হোঁচট, চেরা ফেঁসা দাগ
বডিতে, হয়তো সহজে চোখে পড়বে না,
তবু দাগ থেকে যায়
চুনুরিতে, অনিচ্ছার গলদ ছোপ।
জল জমেছিল এখানে,
ফুটপাথে ফাটলগাঙ, শান্ত জল তুমি
ঈর্ষার চোখে তাকিয়ো না আর,
ভালো হোক ওদের, যারা বড় জল,
যাদের নৌকো আছে, তাদের মন
খাঁটি হোক, জলজ ঘাস, উদ্ভিদ,
পাতা শ্যাওলা সরিয়ে মন খাঁটি হোক।
৬ সূত্রপাত
মাটিতে পরিখা বা দাগ কাটা ছিল না, খড়ির
গন্ডীও নয়, কিন্তু আমি এখন
বুঝতে পারি যে পররর্তী পা ফেলাটা
একটা সাধারণ হাঁটা নয় বা
জোরে হাঁটার মামুলি স্টেপ, দু’হাতে
ডাম্বেল, রোজ সকালে আধঘন্টা।
সে একটা শুরু চেয়েছিল, সংযোজন নয়,
একটা গুণগত ভাবে আলাদা চলন।
৭ গ্রেডিং
পরবর্তী পা ফেলার আগেই দুঃসংবাদটা আসে,
ভুলস্তর, বালিমাটি ঠাসা এখানে, বুনিয়াদ ঝুরো ঝুরো
পলকা, বা হার্ডকোর এঁটেল মাটির ভিত্তি।
সে যাই হোক, কর্তা বলেছে, বিশ্লেষণ দেবে,
শুধু একটা ভুল ছাপ বা লালকালিতে
চিকে মার্ক নয়,
আধখেঁচড়া ভুলের যত মাল্টিমিডিয়া আসবে,
তার সাথে সিসিটিভি ফুটেজ, সারাংশ রিপোর্ট।
৮ ট্র্যাজেডি
ভুল উৎসাহ বা তরঙ্গ একবার
বুড়িছোঁয়া দিয়েই টুকি,
সময় নিয়ে ভাবলে এও হয়তো
এক ধরণের নির্যাতন বা নিয়তি –
জ্যোর্তিময় কিন্তু একে সাধারণ নিয়ম বলত,
বলত অচলায়তনে বাস করলে
সিলভার লাইনিংকেও ট্র্যাজেডি মনে হয়।
৯ তিষ্ঠানো
বুনো ফুল, ড্যান্ডেলিয়নও শেষে
মাথা নীচু করল, মৃত্যু নয়, পরের খেলাটার
জন্যে টিঁকে থাকা আর কি। শীত এসে
দেখাক দর্প এবার, পুরো মল্লভূমিটাই তার হোক,
পিছিয়ে আসাটাও একটা আর্ট ফর্ম।
আমরা অবশ্য সরল গোয়ালা, সদ্যদোয়া
দুধ, একটু মধু, প্রায় শুকিয়ে আসা
তুলসীপাতা, এইভাবে আমরা
অবশ, জড়বুদ্ধি কাটাই,
হেরে যাওয়াতে ঢালি চিরঞ্জীর
সুগন্ধি প্রলেপ।
১০ সাইকো
হাবিজাবি যা মনে আসে লিখে দেব আজ
কবিতার বস্তা ঘাড়ে বেরোব, ধামসা মাদল,
ঘাসে মেলে দেব থ্যাঁতলানো
মনোবেদনা। আজ মেদিনী তোমার
হাঁ-করা ফাটল আমি বোজাবো, সীতা গেলবার
ইচ্ছেগুলোকে সেলাই করব পেটমোটা
গুণছুঁচ দিয়ে। পড়ে কাঁপুক মাঠে সেই
মিচকে বুড়ো মনোবিজ্ঞানী, চমকে উঠুক
মানসিক হাসপাতালের যত বেয়াড়া,
সভ্য, আড়ভাঙ্গা চিকিৎসকগুলো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন