আগ্নেয়গিরি

প্রজাপতি নিয়ে
কবিতা লিখতে গিয়ে

আমি আমার
ছেলেবেলাকে খুঁজে পাই ঠিক কথা
কিন্তু হাতে
নাইলন ব্যাগের মতো খসখসে ঠেকে

সেই ছেলেবেলাকে
আমি আবর্জনার স্তূপে ছুঁড়ে দিই

আর যখন
মধ্যরাত্রে আমি শুতে যাই

আমি টের পাই
আমার বুকের ভেতরে
একটা আগ্নেয়গিরি

ঘুমিয়ে আছে





ব্রহ্মাণ্ড

সমস্ত
পাপ গিলে নিয়ে
তোমারও কণ্ঠে কর্কট রোগ

এই বিভূতি
মানুষও বেমালুম গিলেছে

এর উৎস খুঁজতে গিয়ে
গায়ে কাঁটা দেয়

ঠায় বোবা হয়ে থাকি

পৌষের খামারে জড়ো করা
কুটির গাদায় সূচ খুঁজতে গিয়ে
এটাই তো প্রশ্ন ----

আমরা কি ব্রহ্মাণ্ড খুঁজে পাবো!






ফুটুরি ডুম

ভালোবাসা এবং পীড়িতের কথা
বলতে বলতে

কে কার পাশে বসে
অকপট কথা বলেছিলাম
বলতে বলতে

দাঙ্গার মুহূর্তে
কে কাকে
পেছনের গলি দিয়ে
গোপনে নিরাপদ স্থানে
পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম
সেকথা বলতে বলতে

আমাদের জিব ক্ষয়ে গিয়ে
গোড়ায় ঠেকে গেল

আবার গজিয়ে উঠল

এই করতে করতেই একদিন
এই অভিশপ্ত সুড়ঙ্গ দিয়ে যেতে যেতে

হয়তো দুম ফটাস
ফুটুরি ডুম হয়ে গেল

তখন তো চেক ভাঙাতেও পারবে না তুমি
যখন ব্যাঙ্কে টাকাও থাকবে না

তাহলে
সিংহাসন কীভাবে বাঁচবে

তোমার?






চাহিদা

একটা আপেল দাও
তাকে দু আধখানা করে ফেলি

তার মানে
চাহিদা অর্ধেক হয়ে গেল

আধখানা আপেলকে
আবার দু আধখানা করে ফেললাম

এবার চাহিদা
অর্ধেকের অর্ধেক হয়ে গেল

এটা একটা লজ্জাই

কিন্তু কার?

আমার?
পয়সার?

অথবা
গোপনাঙ্গের মতো
যে লুকিয়ে থাকে

তার?

আমি একটা হাওয়াই চপ্পল পরে
যেকোনও মুহূর্তে
ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকে পড়তেই পারি

কিন্তু সেটা কোনও কথা নয়






পবিত্র পাথর

যেসব পবিত্র পাথর
ইতর হয়ে যায়

যেসব খসখসে মাটি
তেলতেলে হয়ে যায়

যেসব তালগাছ বেঁটে
এবং ওলগাছ ঢ্যাঙা হয়ে যায়

আমি তাদের কথাই বলছি

একবার অন্তত
চোখ চারিয়ে দেখুন
আপনারা কীভাবে
একটি নিরেট আয়নায়
বন্দি হয়ে আছেন

একটু তাকিয়ে দেখুন
আপনারা কীভাবে

ইতর থেকে ইতরতম হয়ে যাচ্ছেন





কাঁধঝোলা থলে

জন্ম এবং ভ্রমণ
এক অদ্ভুত কাঁধঝোলা থলে

কত কী তার মধ্যে কুড়িয়ে রাখি

বড় পাথরের চাঁই
কাঁকর, বালি, ধুলো, কাদা, পাঁক, নর্দমার কীট

আরও কত কী!

ভেবেছিলাম সবই
আবর্জনা

হঠাৎ
ঝোলা উলটে দিতেই
একটার পর একটা কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস

সেই কবিতা এবং লেখা পড়েই

কবি মঞ্চ থেকে
ঋষির মতো নেমে আসছেন

শরীরী ভাষায়
কোথাও কোনও উত্তেজনা নেই





পাঁচফুট সাতইঞ্চি

কেউ খাটো করলে
আর একজন লম্বা করবে

আমি পর্যায়ক্রমে
খাটো এবং লম্বাকে গড় করে নিই

তার মধ্যেই
আমার পাঁচফুট সাতইঞ্চি শোভা পায়

একটু বেশিও নয়
কমও নয়

সেটুকুই তো খুঁজেছি সারাজীবন

পাঁচফুট সাতইঞ্চির
মাথায় চড়ে দাঁড়ালেই
দিব্যি ছুঁয়ে ফেলি আকাশ

তার বেশি আর কী খোঁজার আছে

আর কিছু কি থাকে?






যখন-তখন

নারী-পুরুষ
এখন তুই তুই

তখন তুমি তুমি

সন্তান সংখ্যা
এখন এক এক

তখন দশ - পনেরও

চাকা ঘুরেই চলেছে
কিন্তু কোনটা ঠিক?

যখন-তখন-এর দিকে
অতীত ওঁত পেতে আছে

আর ভবিষ্যৎ
হাঁ করে আছে

আসলে
সময় চলমান ঠিকই

কিন্তু একমুখী কি?

আমি একা
স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যতের দিকে
মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকি














নিয়াজুল হক


1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন