সমীর তাঁতী





আমাকে হৃদয় উজার করে দাও

আমাকে হৃদয় উজার করে দাও একটু খানি জায়গা, তোমার সহস্র 
ফোঁপানির  উপহার, আমাকে আবার একবার নিখুঁতভাবে 
ভালবাসতে দাও একটি মসৃণ হৃদয়, একটি নিদ্রাহীন 
রাতের সহজ বিষ্ময়; আমি ধ্বংস হতে চাই তোমার দৃঢ়তার 
নদীতে যেখানে অলেখ মৃত একটি প্রাচীন সভ্যতার 
আখ্যান হতে চায়

যত জাতি এবং জনগোষ্ঠীর আশা ধ্বংস হয়েছে তাতে 
আমাকে একবার নত হতে দাও, আমি প্রতিটি ভূ-লুণ্ঠিত
ভাবনায় একটি উত্তাপ  হতে চাই; আমাকে দাও তোমার স্থিতির 
বিরল মুদ্রা, অসহায় এক জোড়া চোখের উজ্জ্বলতা;
দাও শান্তির
আধপোড়া  রুটি এক টুকরোর সঙ্গে 
প্রতিটি জাগরণের রঙিন পতাকা

আমাকে হৃদয় উজার করে দাও এতটুকু জায়গা, তোমার অতীত
 গরিমার সঙ্গে, আমাকে দাও প্রতিটি অপমানিত দিনের
 বিস্তারিত খতিয়ান; বরণ করে আন আমাকে প্রতিটি সকালে 
উঠে আসা সূর্যের অহংকারের সঙ্গে এবং পুঁতে রাখা তোমার 
হতাশার গভীরতায়; আমি যে একটি তারা ফুলের স্বপ্ন, একবাটি
 প্রেমের মদ

সহস্ত্র সম্ভাবনায় আমি চিরস্থায়ী একটি জায়গা,সম মর্যাদার আসন
 আমাকে বিতরণ কর তোমার প্রতিটি সফলতার উৎসবে 
আনন্দের উৎকৃষ্ট দিন।




আমাকে সহজ করে দাও

আমাকে সহজ করে দাও তোমার কণ্ঠস্বর
সাগরের নিচ থেকে উঠে আসা সুরের লহর, তোমার অনুপম ঠোঁটের ভঙ্গি

আমি আমাকে গোপন করতে চাইনি
সমস্ত ঘটনা পুরোনো  হওয়ার পরে সমস্ত কথা ভুলে যাবার পরে
আমি তোমার মধ্য দিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি সন্ধ্যার একটি পাতা,
একটু আলো, রাখালের কণ্ঠস্বরের নকল
একটি প্রতীকের আবাহনী মন্ত্র

আমাকে দাও অরুণ্য থেকে ছিঁড়ে  আনা ফলের রস
তোমার রহস্যময় জিভের ঔষধি গুণ, দাও সেই অলৌকিক শব্দের উপহার
আমি আমাকে নিদ্রা থেকে হরণ করতে চাই
আমি আমাকে সৌন্দর্য থেকে হরণ করতে চাই

তোমার কাছে যাবার এই একটাই মাত্র পথ
প্রতিদিন নদীর জলে গলে আসা সূর্যের রক্ত
তোমার ঠোঁটের লাল

আমাকে সহজ করে দাও তোমার কণ্ঠস্বর
তোমার অনুপম ঠোঁটের ভঙ্গি





ধোঁয়া

মঠ- মন্দির এবং দরগাগুলি
আমার ভেতরে
আড়মোড়া ভাঙছে

কত অপ্সরা আর গন্ধর্ব
কত কিন্নর- কিন্নরী, যক্ষ
এসে বসেছে সাধু-সন্ন্যাসী, পীরদের কাছে

রাত পাশ ফিরছে
আমার শরীরে গজিয়ে উঠছে
হাজার বছরের বৃক্ষ–লতা, ফুল- পাতা- শিকড় 
পাখি, পশু এবং সরীসৃপের চলা

উড়ছে হাজার বছরের ধুলো
হাজার বছরের কাদা-জলে
পচছে পা দুটি
প্রাচীন থেকেও প্রাচীন

হাতে রক্ত এবং চোখের জলের বাটি
চোখে লক্ষ কোটি বছরের নেশা
ঠোঁটে শিলীভূত ঠোঁটের মাদকতা

ডাকতে চাইছি স্বর নেই
চোখ দুটি পাখা মেলছে
জিহ্বায়  অনন্তকালের তৃষ্ণা

তুমি আমাকে কাছে টানছ
ভোর হয়ে আসছে
আমি নেই

শূন্য পাটি 
পাটিতে একটি মৃত রাতের
খসে পড়া নিদ্রা

নিদ্রায় নিহত মুখগুলিতে
আমি আলগোছে  কুড়িয়ে নিচ্ছি
খসে পড়া মঠ-মন্দিরের এক একটি মুহূর্ত
সে যে আমার বিপন্ন কাব্যিকতা

একটি মৃত কবিতায় ধীরে ধীরে
নেমে আসছে
একটি নিখুঁত সকাল
সহস্র অনাবিষ্কৃত দিনের অধিবিদ্যা

তুমি আমাকে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছ
আমি যে এখন অধিবিদ্যার বুকে
কুণ্ডলী পাকিয়ে  উড়ে যাওয়া ধোঁয়া




চলে যাই চল

দুঃখ বিদায় বিচ্ছেদ বিদায়
হে আমার খ‍্যাতি  আনা ষড়যন্ত্র
বিদায়
বিদায় হে অত্যাচারের ইতিহাস

বিদায় আমাকে অবহেলা করা সম্ভ্রান্ত সময়
প্রিয় বন্ধুরা আমার বিদায়

আমি তো শুনেছি
তোমরা শোননি 
দুঃখিত দুঃখিত
রিনি রিনি বাজছে সেই সুর

বর্ণময়, চিরস্থায়ী
পাতা, তাতেই পেতে রাখা
যেখানে এতকাল ছিলে এবং আছ
সেই সব কথাই বল

বিদায়
আমাকে ঋণী করে রেখে যাওয়া অপমান
বিদায় আমার বাসনার লোভনীয় সম্ভার
বিদায় হে যশ আর অর্থের নিঃসঙ্গতা
প্রশংসা এবং কলঙ্ক
তোমাদেরও বিদায় ভাই

আমাকে এভাবেই থাকতে দাও
এই অনাড়ম্বর হাসি এবং উলঙ্গ রং–তামাশার মধ্যে
যেখানে প্রতিটি ক্ষুধা আর শোক
ভোগালী মেলার আয়োজন করে

বিদায় বিদায়
আমাকে ধন্য কর হে আমার অনটনের ঋতু
বিদায় আমার আপসকামী মানসিকতা
বিদায় বন্ধু, তোমাদেরও বিদায়

এখন যে যাবার সময়
অন্ধকারের আড়ালে আড়ালে
তুফান- বৃষ্টির দরজা খুলে
আনন্দের পুরোনো রাজপ্রাসাদে
অনির্দিষ্টের দিকে মেলে
হেঙ্গুল- হাইতাল রোদ

আমার মাটিময়  প্রেমিকের
রংচঙে পিরিতের উৎসব

টীকা-
হেঙ্গুল- হাইতাল-রঙের উপকরণ 





চলে যাই চল

ক্ষুধা সেলাম তৃষ্ণা সেলাম
সেলাম হে পেট নামের অজগর
সেলাম অঘরী মেঘ,উদভ্রান্ত নদী,উন্মনা ঝর্ণা
হে আমার উন্মাদ সাগর তোমাকেও সেলাম 

হে গর্ভ তোমার থেকেই কুড়িয়ে নিলাম ক্ষুধা
ক্রমশ টুটে আসা মাটির শোক 
হে আমার জিহবা ,তোমার থেকেই সেই পথ ,খারাপ পথ
অন্য এক সময় ,দুঃসময় 
রোগাক্রান্ত রাত 

ক্ষয়শীল দুহাতে ভেঙ্গে শিলাময় দিন 
কাটে প্রতিটি প্রহর
প্রজ্বলিত অগ্নি 
সৃজন আর মননের 
আলোকিত পথ 

প্রযুক্তি সেলাম ধ্বংস সেলাম 
সেলাম হে বিভীষিকার ইচ্ছা 
সেলাম নক্ষত্রদেশের অধিবাসী ,আকাঙ্খিত আলো 
স্বাগতম তোরণ 
অন্য এক সময়,অনতিক্রম্য কাল ,শুদ্ধতার ঋতু 

হে যাত্রা দুহাত দাও 
পার হও দুঃখের ভারাক্রান্ত পথ 
সংকটের সহস্র তোরণের মধ্য দিয়ে 
উদযাপন করি তোমাকে 
উৎসব অনাদি অনন্তকাল 

ক্রমশ উজ্জ্বল পরিষ্কার
আমার প্রজ্বলিত প্রজ্ঞা

দেশে-দেশে ,ঘরে-ঘরে ,পথে-ঘাটে 
জীবনজোড়া বীক্ষা










অনুবাদক-  বাসুদেব দাস

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন