মন ভেঙে দাও

কয়খানা রাত্তির দাবাঘর ভেঙে গড়ে নিল ইমারত?
এই সোজা ভাঙাচোরা লোহাগলা পিচ,
বদবুতে বুক বেয়ে উঠে আসে অম্বলজল,
জল পিচ, পিচ জল, থুতু বা গুনেগেঁথে চিনে নেওয়া ঈশ্বর,
গুঁড়ি জুড়ে মোটা মোটা সুতো, চলো চলো চলো,
মাখাই তেলতেলে সিঁদুর, জপো নাম জপো নাম,
গুরুনামে পাপ যায় বহুদূর, কতদূর?
নদীয়ার কাদানদী, ধুয়ে যায় মুঠো মুঠো রক্তের ছাই,
জল গিলে খায় কিশোরীর অনুতাপ, আর কি ভীষণ উঁচু,
হিরণ্য মন্দিরে ছত্রিশ পদে ভোগ খান পুতুলের দল!

অবশ্য প্রয়াস জটিল, তাই নির্ভেদ দুপুরের আঁধার,
চোখ মুখ ঢেকে বসে পড়ো পাথরের চাতালে সারি সারি কাক হয়ে,
হাতজাল ছেনে তুলে আনা স্নেহ ও করুণার রগরগে অভিশাপ,
আমি বুনে চলি মাদুরে, ভাঁড় ভেঙে চুরি যান গৃহদেবী,
একবারও জিজ্ঞাসা নেই, খুঁতো জিভ, খুঁতো চোখ ও চেয়ার,
চাকায় থেঁতলানো লেবু লঙ্কার মিলিত শবের মত,
উৎসাহ দাও আবার কালকে আবর্জনা হবার,
আজ আসি দরকারে, জুলুজুলু লালায়িত হাতে,
কালি লেগে থাকে কিছুদিন, আর থাকে লঙ্গরভাত,
আমাদের মাথা বেটে স্বাদ বাড়ে ওনাদের খাবারে,
ভোরবেলা কেঁদে ফেলো যদি, নিজেরাই নিজেদের মন ভেঙে দাও।।





যারা বৃষ্টি চেয়েছিল

রোদের কাঁকরের মত রুক্ষ বিছানায় তোমায় এলোমেলো করে দিচ্ছি,
চিৎপাত হয়ে পিঠ থেবড়ে পড়ে আছে গোছা গোছা কাগজের জঞ্জাল,
অকবিতা! অথবা শরীরের উপনিবেশে দুর্দম নেরুদার শোক,
আমি কাঁদছি, থাপ্পড় মেরে মেরে কাঁদাচ্ছি তোমায়, আঁচড়াচ্ছি কামড়াচ্ছি,
বোঝাচ্ছি বৈশাখের জংলী দুপুরে ভীষণ একা হয়ে গেলে কতটা শুকায় চোখ!

শনশন হল্কার হাওয়া তোমার অদৃশ্য অস্তিত্বে ছুঁড়ে মারে রক্তিম ধুলোবালি,
ভিখারির বগলের পুঁজে নক্ষত্রের সহবাস, কনুইতে গড়ানো আঠালো ভাতের রস,
তোমার দেহ বেয়ে উঠে আসি আমি সাপের মত, আকন্ঠ বিষ, কন্ঠে দংশন,
আর শশ্মানের ছাইমাখা উলঙ্গ কাকের গোধূলির মত দিন খসে পড়ে,
যেভাবে আমার ভদ্র প্রেমের শল্কমোচন, শেষে উন্মুক্ত কোডেক্স গিগাস,
সব আয়োজন আছে, কল্পনাতেও ভীষণ আছো তুমি, তবুও খুঁজছি কেন?

ভিড় করে থাকা সারি সারি ছায়া আর কঙ্কাল, নরম চোখের নীচে,
তারা সব বর্ষার কামাখ্যা দেবী বেচে বড়লোক হয়ে গেছে পাঞ্জাবী পরে,
তাদের ফোয়ারার জলে তুমি ডুবছ রোজ, আমি অসভ্য লাথখোর চাতক,
তোমার কোমরের নীচে দরদী শস্যের ক্ষেতে হাঁ করে আছি বহুক্ষণ,
এই দাবদাহ বুকে করে যারা বেঁচেছিল অথবা মরে গেছে ফুলেদের সাথে,
তুমি করবে না কৃপা? বলো ধ্বংসের দেবী, তারা পাবে না শীতল আঁশটে খুন?
যারা চেয়েছিল বৃষ্টির ঘৃণা, সকলেই ক্যাকটাস হয়ে যাবে আমারই মত??






শুরুর কথা লিখি

এলোমেলো কাঁকরের পথ তোমার পদরেণুর অপেক্ষায়, মা!
ছপছপ করে ওপচানো বালতির অভিযোগ তোমায় বলে নি কেন?
আমি কতটা নষ্ট করেছি তেল, ক'দানা ভাত আমার নখের পাশে আটকে আছে,
আমি তো তবুও এককাঁধ লাইব্রেরি বয়ে এনে ঢেলে দিয়েছি বিছানায়,
মেঝে ও বালিশ, প্রেম ও কলঙ্ক, সব জুড়ে এখন গড়াগড়ি যাচ্ছেন সরস্বতী,
আর লালমাটির গোল ভাঁড় ভীষণ ফাঁকা আজও এই বৈশাখেও!

নোনাধরা দেওয়ালের শরীরে নব অশ্বত্থচারা, ঘুঘুদের সাময়িক সংসার,
আমার চুলভরা একরাশ শহরের দীর্ঘশ্বাস, অগুনতি নিষ্ফল চিৎকার,
চোখ বুজলেই ভেসে ওঠে খানদুই টলটল সাগরের জল, গভীর ভরসাহীনতা,
ঐ সাদা বাড়িটায় প্রায়ই চলে যাই, সারি সারি মৃতদের কঙ্কাল,
ম্যামথ বা বিকট সরীসৃপ, ওদেরও স্মৃতি জমা হয়ে থাকে সিন্দুকে,
শয়ে শয়ে গাঁজাখুরি অশ্লীল রচনার পর গলাপচা শব হয়ে পড়ে থাকি চিৎপাত হয়ে!

বিকেলের গন্ধটা পেটে এসে লাথি মারে মাঝেমাঝে, খুন্তির ঠংঠং,
যা তোমার মুঠোর ইচ্ছের আগল ছাড়িয়েছে বহুকাল আগে,
ভাবি বলে দেব, ভেবে ভেবে উঠে যায় গোড়ালির চামড়া,
কাঁচা মাংস আর স্বেদাক্ত তরলের ঘ্রাণ, কুকুরের মত চেটে নিই,
ব্যাথা জ্বলে, ছলে বলে কৌশলে আরো একখানা টান, নেশা ধরে গেছে,
আজকাল ভালো লাগে এই আরশোলা হয়ে বাঁচা, এই পলতাক অন্ধকার,
অদৃশ্য ক্রুশকাঠে নিশ্চিত ঘুম আমার, সব রাত্রিই তো শেষ হয়ে যাবে,
তাই লিখে রাখি শুরুর কথা, যা তুমি এই কবিতায় এক বর্ণও খুঁজে পাবে না।।







ভাগীরথী

আমার সবকটা ব্লেড লুকিয়ে দিয়েছে মা,
বিছানার নীচে ত্রিবেণীর সঙ্গম, মুঠোভরা বাতাসের মত সাদা ভাগীরথী,
এখন কোথায় রাখব আমি কামনার নখ? অভিমান চোখ?
নারকেল মালা ভরা পোকাধরা ধান, হিমায়িত গোধূলি,
হাঁসের পালকে ডোবা শেষ চিঠি, মা ঢুকিয়েছে উনুনে,
পটপট করে কাঠ ফাটে, যেমন চিতাতে খুলি, গলে ঘিলু,
গলে পড়ে সুষুম্নাতে জমাট হয়ে থাকা অভিযোগ,
দেখো আমি কাঁদছি না, অথচ কিছুতেই আটকাতে পারছি না বান,
কলতলা জুড়ে ভিজে একরাশ চুলে মৃত্যুর অগুনতি উৎসব!

জ্যামিতিক চাঁদ ঘুম হয়ে নেমে আসে পাখোয়াজে,
পৃথিবীর মত স্থির লাউমাচা, ভোরবেলা শাঁখ পড়ে,
আদরের গালে তার সবজেটে দাড়ি থকথকে হলুদ,
মুছে যাওয়া ফাগুনের চুম্বন দাগ ঢাকা পড়ে গেছে ফুলেদের ভিড়ে,
ও মা আমি করব না আজ স্নান, আজ ছেড়ে দাও লক্ষ্মীটি,
গোয়ালের আঁধারে জীবনের গন্ধে আজ নয় ঢেকে যাক বিষাদের সুবাস!

মড়াইএর কাঁচা মুঠো আধবেলা একাদশী নিকোনো উঠোনে,
নেমে যায় গলা দিয়ে ভিজে মুগডাল, আঁটি বাঁধা ভরসার খড়,
বঁটি ছুঁয়ে আঁশ আঁশ খুন, বড় ভালো লাগে, দুপুরের একা একা,
রক্তের ঘ্রাণ, মা তোমার কম্বলে লেগে থাকা সিঁদুরের ভাগ্যটা,
ছাল ওঠা বাবলার পাতাহীন ছায়া, বুকে বিঁধে নেওয়া শিশিরের কাঁটা,
আমার ভাগীরথী খাত শুখা হয়ে আসে, মা তুমি কোথায় লুকিয়েছ ব্লেড?
এত ক্ষমাহীন শূন্যতা আমি বয়ে নিয়ে যেতে কিছুতেই আর পারছি না!!







শান্ত চোখে

চকচকে ইস্পাতে দ্বিভাগ হয়ে যান আদিম ঈশ্বর,
ইতিউতি শোণিতের বিলাপীয় বিন্দু,
ঘিনঘিনে আঁশ...ভনভনে মাছি,
গোঁফের জঠরীয় কাম চেটে নেয় শার্দুল,
ভিক্ষার জয়লাভে, আর আমি...
পৃথিবীর সমস্ত ক্ষুধা নাইলন ব্যাগে ভরে দাঁড়িয়ে,
চুলের গোড়ায় স্বেদকণা ও নিকোবর,
একসাথে নাচানাচি করে লবণের বুদবুদে...
যদিও সক্কলে জানে, গঙ্গায় কক্ষণো আসেনা সিগাল!
আর এইটুকু পথ, হেঁটে চলে যাব,
লাল পতাকার নীচে ভিড় করে জড়ো করা কাঠকুটো,
আধখানা আগুন আর আধখানা শীত,
নেভেনা, নেভেনি বাসন্তী রোদ্দুরেও,
বাকি আধখানা দেহ জুড়ে বুকমোছা শিয়ালদা...
অথবা পুঁজ ও যক্ষার ঘায়ে ডুবে যাওয়া নীলরতন,
ঐ পাড় থেকে ডাক আসে, গলিতে আঁধারের ডাক,
রামধনু শাড়ি, মাড়ের গন্ধে উদ্বেল নাড়িভুঁড়ি,
ন'ঘন্টা আগের ভাত, আয়হীন দিনে চাইতে নেই জলখাবার!
অতঃপর সুস্বাদু চিতাধোয়া জল, ফিল্টার পোড়া কাউন্টার,
সারি সারি স্বর্গের অযাচিত হাতছানি...
দেবদূত সব জানে না, আমি আমি...
নরকের নর্দমা হতে উঠে এসেছি কবরের পথ ধরে,
সাদা সাদা পৃষ্ঠা ও কলমের লোভ,
অক্ষরে লেখা অজ্ঞাত বদনাম, আর ইতিহাস...
গিলেছে রাক্ষসী হয়ে ওষুধের মূল্য,
তারপর আর আমি আয়না বা আঁচলের সম্মুখে দাঁড়াইনি...
তবু ইতরের মত অপেক্ষা করেছি প্রভুর সাথে বিষাক্ত খাবারের,
খাওয়া শেষ হলে পরম প্রশান্ত চোখে,
আমাদের মত দেবতাও ঘুমাবেন মৃত্যুর আদরে।।







এ শহরে তোমার আনাগোনা

এই আধখাওয়া রাতের উচ্ছিষ্ট, যখন নখের দাফনে ঘুমিয়ে পড়ে বেড়ালের মত,
আমি বর্ষশুরুর প্রথম বর্ষণে ভীষণ বোবা, গলার দাগে আটটা আঙুল,
খুঁতো গোলাপের কাছে অভিযোগ জানিয়ে হারিয়ে যায় কসবীর অশ্রুরঙা চাঁদ,
বালিশে রাখা ছোট্ট ধূসর পালক, তার বুকের কাছে এখনও রক্তের দাগ,
সেই ক্ষতের গন্ধে আমি তোমায় খুঁজি? অথবা প্রেমের বিপরীতে কি থাকে জানো?

হলদেটে গলে পড়া আলোর স্তম্ভ, রিক্ত হৃদয়ের আঁধার পথে,
লুটিয়ে পড়ে ধর্ষিত আঁচলের মত, মোমজ্বলা অজ্ঞাতে চকচক করে ধাতুর বাটি,
বুদবুদ মাখা ভিক্ষার ভোগ, নুনজল শুষে নেয় মানুষের নেতানো মুখোশ,
ফতুয়ার কোণ বেয়ে চুঁইয়ে পড়ে জীবনের অপরাধ, সময়ের অপ্রিয় ব্যবধানে,
নর্দমা উপচায় সবুজ অনাদরে, ছিন্ন পাকস্থলী আপোষে যুজতে থাকে শৃঙ্খলা!

আমার এখনই ছুটে যাওয়া উচিত, তোমায় রাস্তায় টেনে নামানো সম্পূর্ণ নগ্নতায়,
বৃষ্টির ঘৃণিত নজরে আমি খুব পরাজিত, তাই শহরের অবরোধী ফুসফুস,
আমি তোমার ভবিষ্যতে নিশ্চিত করে দিতে পারছি না, পারছি না অবহেলা,
অথবা উদাসীনতার অনুগ্রহে মুক্তির বিদ্রোহে তোমাকে নষ্ট বা করতে খুন,
এ মৃত্যুর শহরে তোমার জীবন্ত আনাগোনা আমাকেই ভিজিয়ে দিচ্ছে বারবার।।







মল্লিকা

ভাসানের গান আমার কাঁচা থোড়ে ছুঁইয়েছে ত্রিমাত্রিক সঙ্গম,
এক পুরুষের বুকে লতা হয়ে বেড়ে ওঠা দুই নারী পারাপারি,
গোখরোর নিদ্রালু চুমু বোঁটা বেয়ে গড়ানো অশ্বত্থ রসে অদৃশ্য প্রেমে একবার,
ধরা দেয় নীলরঙা রোম, যার নাম ব্যভিচার, অথবা মরণ অথবা মোহ!

ছেঁড়া মাদুরের উপমান জুড়ে কনকের জন্মঋণ পিছু হঠেছে গতকাল,
একবাটি খুদভাঙা চালে দুই সরু সরু সমুদ্দুরে মিয়োনো রোদের মত ভাত,
অথচ ফ্যান গড়ায় লাল, বিকেলের মত লাল, অঞ্জলি ভরে শ্বাস নাও,
মাছের শরীর ভাসে, এ গন্ধ আমি খুব চিনি, যেদিন ছিল চৌকাঠে ভ্রুণের গর্ভপাত!

চাঁদ আসে চাঁদ নামে, বেতের গোল ঝুড়ি কোনদিন খুলে দেব বিছানার বিদ্রোহে,
পরাজিত অন্তর বারবার নত হয় জঙ্ঘার তটভূমির নির্লাজ উল্লাসে,
বেহুলা কি খোঁজে প্রভু? নাকি ক্ষমতা? ক্ষমা দয়া আঁশভাত লাল তাঁত আর দেহ?
অগোচরে শিশিরের বন্ধ্যা পরকীয়া উত্তর রেখে যায় বিহানের মল্লিকাতে।। 








জীবনের কাছে

শিশিরের ছেঁড়া টুকরোর পায়ে যখন কবুতর বসেছিল,
আমি রক্তের দানা ছড়িয়ে দিচ্ছিলাম অন্ধকারে,
ভাসমান বিশ্বের নখে লেগেছিল ছ'পয়সার কবজের আঙুল,
ওখানে মায়ের ভরসা বড় ভরসাহারা চোখে স্থির হয়ে আছে,
অদ্ভুত বিশ্বাস এই শিলিং ফ্যানের, যেন ছিঁড়বে না!
ছিঁড়ে পড়তে পারে না বালিশের গায়ে আজন্ম মৃত কিছু লাশের ঘুম!

দেড় হাজারি বারান্দার কোলে কাদার মত ঘেঁটে যাওয়া শৈশবের ছাপ,
সূর্যের শ্বাশত প্রেমে রোজ ধানে চালে একই প্রার্থনা,
তখন ঈশ্বর ঠিক শয়তান রূপে হাসেন, হাতে তুলে নেন অদৃশ্য বর্জ্র,
ফ্লাইওভারের গর্ভে লাল আলো নীল আলোর যোনির ভেতর পুরে দেয় সভ্যতা,
আমার বাটিভরা বিষাক্ত আঙুর প্রত্যাশার গরল হয়ে নেমে আসে বুকে,
ম্যাকবেথ বা ক্লিওপেট্রা, প্রেমের বীজে সবাই দাফন ঠিক আমারই পাশে!

বোকাবাক্সের কঠিন লোভ রঙের ওপর রঙে খোঁজে অমীমাংসা,
আমি ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেমন বংশের পাপ,
ঘোলাজল পাতাছানি, তবু মোক্ষের মোহে ছুটে চলে যারা,
আমি ক্ষমা রাখি, অথবা অন্তরতম অভিশপ্ত নমস্কার,
সন্ধ্যের চাইনিজ প্লেটে গড়াতে থাকে ভবিষ্যতের তেলমর্দন,
আমার অভুক্ত দেহ আরো অনেকটা পিছিয়ে পড়ে জীবনের কাছে।।







মন পলাশ

কাল রাতে ছ'টা না আটটা, ঠিক মনে নেই, সাদা সাদা গোল গোল নিরামিষ,
খনিজের জলে পাক খেতে খেতে তলিয়ে গেছিল ব্ল্যাকহোলে,
অতঃপর আজ সারাদিন, ঝুলছে আঙুল, ঠেকছে নরকের উজ্জ্বল ছাদে,
টপটপ করে স্খলিত লালায় আমি বন্ধ চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,
গড়াতে গড়াতে দুর্বোধ্য আটলান্টিস, আর একটা বিশাল কুম্ভকর্ণ,
কিছুতেই ভাবতে পারছে না তারও একদিন অনেকটা শক্তি ছিল;

জানলার নীচে সারি সারি কুকুরের মৃতদেহ আমি সাজিয়ে রেখেছি পরপর,
যাতে যদি কখনও তুমি আসো তোমার পায়ের নীচে কাঁকর না ফোটে,
তুমি গতবছর সারাটা বর্ষাকাল, এবং শরতের খুনখাগী রাতগুলোতেও,
বায়না করেছ পৃথিবীর সব পাখি অথবা আমাদের বাবা মায়ের দল,
যারা নিমাইয়ের মত কৃষ্ণকে ভালোবেসেছিল, তাদের নিষিদ্ধ করি,
আত্ম পরিত্যাগের অপরাধে, আমি টানতে টানতে তাদের লোহার শিকলে,
বেঁধে রেখেছি, আর দু'কুচো করে মাংস কেটে তোমায় খাওয়াচ্ছি রোজ;

বেলা গেল ধুলোবালি গুঁড়ো নাকের ফুটোয় কোকেনের মত গুঁজে,
হাওয়ার অভাবে শুখনো মগজের দাম কি করে দেবে মৎস্যলোভী পরিজন,
উত্তাপ বাড়ছে রোমকূপে, কপালে অজস্র স্মৃতির অদৃশ্য চিতাভস্ম,
নখে লেগে থাকা কড়ুয়ার দাগ উড়তে উড়তে মিলিয়ে যাচ্ছে দেওয়ালে,
ভেড়া কোলে এক নামানুষ বলেছেন ক্ষমা করে দিও সকল ব্যাথারে,
তুমি বলতে কি পারো, তাহলে কি পলাশের দেহ রুধিরে সাজাতে হবে না তারপর??








আলোদের দপ্তরে

একখানা চারকোণা সূর্য, পায়ের শিরায় রেখে নদী বলল, হুশ!
অমনি শিউলির মত পাপ ঝরে ঝরে পড়ল আকাশের ঘাসে,
দুধরাজের নীল ডানা, গাছের কোমর ছুঁয়ে ভালোবেসেছিল কাদা,
আসলে তখন ধানক্ষেতে লুকিয়ে মাইন, তার পাশে বসে দিব্যি পান্তা পেঁয়াজ,
শুধু এইটুকু পোড়া পোড়া বাস আছে, উনুনের নয়, বারুদের।

টাঙ্গির চোখে চোখ রেখে কাঁধ বহুদিন ছেড়েছে কথা বলা,
পিঠ জুড়ে পতঙ্গ শোষক, কর্জের খাতে কি করে যে হয়ে গেল দেড় থেকে ছয়,
বুঝে নিয়ে মাটি, নতুন মালিকের কাছে অনন্যা, লাল আলো দিয়ে ঘেরা,
ফেলল তৃপ্তির শ্বাস, যেভাবে শ্লীলতা চলে যাবার পর আসে নিস্পৃহ ঘুম,
আর বাতিলের দল শিমুলের সাদাটে রক্তে হোলি খেলল কিছুক্ষণ।






সৃজনী নায়েক 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন