গাছ নিয়ে থট এক্সপেরিমেন্ট 




                                                                                                                

অঙ্গোদগম

পাখিদের বসতে দেবেনা বলে কি গাছেদের কোনো হিংসাত্মক ডাল
মরে যায়? মরে যায় তাদের ভাজক টিস্যু
ফলে পাঁচ পাউন্ড বাতাস চাপে ভেঙে পড়ে।

যদি ক্যান্সার আক্রান্ত হাত কেটে বাদ দিতে হয় রোগির চেতনা ক্লোরোফর্মে নষ্ট করে,
ব্যাথা দিয়ে, ছুরি ও কাঁচি ব্যবহার করে, শোণিত ঝরিয়ে
তবে বলবো থামো। তার হাত না কেটে

বিশুষ্ক করে ক্লোরোফিল শূন্য গাছের ডালের মতো আলতো বল প্রয়োগেই
ভেঙে ফেলো ঝর-ঝর। পাতার বোটার মতো পায়ের গোড়ালি, কব্জি ও কোমর খসে যেতে দাও,
খসে যেতে দাও টিকটিকির লেজের মতন, শৈতপ্রবাহে ও শুষ্কতায় খসে পড়া পাতাদের মতো , তারপর না
হয় সেখানে অরগ্যানিক ইমপ্ল্যান্ট করা হবে।
নিজে নিজে বৃদ্ধিক্ষম, রোগজীবাণু ভাইরাস ধ্বংসক্ষম সেই বায়োমেকানিক্যাল অঙ্গ, সেই
নিউরোপ্রসথেটিক অঙ্গে মাংস, রক্ত, শিরা-উপশিরা, সেল রিজেনারেশন।

০৬.০১.১৯







যমজ

কি ভীষণভাবে পরস্পর আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে গেছি, দুহুদোঁহা অঙ্গে অঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি।/
২=১
কি নিপুণ দু’জনের শিরা ও ধমনী সংযোগ করেছি সেইসাথে মস্তিষ্ক
এখন দুজনেই দুজনার ব্যাথা অনুভব করতে পারি। তদুপরি,
দু’জনার দেহে প্রবাহিত হচ্ছে অভিন্ন শোণিত/লোহিত
জানি, লোকে বলবে আমাদের এলিয়েন স্পেসিস, পরগাছা, পরজীবী, বলবে যে, গাছ হয়ে
দু’জন দু’জনকে গ্রাস করছি
দু’জনার মধ্যে নেমে দু’জন খনিজ তুলে নিচ্ছি একে অপরের
দু’জনার শরীরে-মনে সন্নিবিষ্টক্ষম নিউরাল কানেকশন।








বায়োস্টিসিস

আরেকবার সুপ্ত হতে চাই ক্ষয়িষ্ণুপ্রবণ দেহে এক বিদ্যুৎ রাসায়নিক প্রাণ
কুহেলি বয়স ধায় ভবিষ্যৎ অভিমুখে প্রবল সম্প্রসারিত স্পেস জুড়ে
তবু আমি থেমে যাবো তিষ্ঠ ক্ষণকাল
একুশ বছর দু’হাজার আঠারোতে সুপ্ত হবো তারপর একদিন
দশ হাজার বছর পর জেগে উঠবো নিদ্রাভেঙে
দশ হাজার বছর পর চলে গেলেও আমার বয়স বাড়বেনা
আমি চির তরুণ নবীন থেকে যাবো
আমি আমার শরীলে সুপ্ত হলে দেহটাকে রেখে এসো উত্তর মেরুতে
সাইবেরিয়ায় বরফ আচ্ছাদিত করে বরফের সারকোফ্যাগাসে মুড়িয়ে এসো
রেখে এসো এমন স্থানে যেখানে ইউ বি রশ্মিতে আমার ডিএনএ,
ক্রোমোজোম নষ্ট না হয়, কোষপ্রাচীর না ভাঙে
শরীরে আমার আত্মপরিপাক আরম্ভ না হয়
যেন দশ হাজার বছর পর জেগে উঠতে পারি যে ভাবে ক্রমশ জেগে উঠে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু,
প্রোক্যারিয়ট ভাইরাস
নাইট্রোজেন দ্রবণে - ২০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হিমায়িত হয়ে বেঁচে থাকা  জিনোম মানব আমি
ব্যাকটেরিয়ার মতোন সুপ্ত হবো
কুনোব্যাঙের মতোন জেগে উঠবো, আমি হবো অজর কালজয়ী

খুব শীঘ্র আবিষ্কার করে ফেলবো সুপ্ত হবার সকল ক্রিয়াকৌশল বীজের ভেতর উদ্ভিদ যেমন।





প্রতিফলন

দূর থেকে দেখি গোবরে পদ্মফুল, ময়লা পানির দূষিত পাকে ফুটে আছে
লাল পুষ্পভরতি সারা গাছ, তারপাশেই ভিনদেশি কচুরিপানার ঝোঁপ।
ভাবি, এই লাল ফুল হয়তো কচুরিপানারই জ্ঞাতি বোন,
কিন্তু এ কেমন ফুল কোনোদিন তার মুগ্ধকর পাপড়ি ঝরে পড়েনা বা শুকায়না রোদে,
মধু কিংবা বিষ সংগ্রহের জন্য এ ফুৃলের ’পরে উড়ে আসেনা মৌমাছি।
কালো মসিলিপ্ত রাত হলেও ও গাছে ফুটেনা নতুন কুঁড়ি।
ভাবি, শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দও সে গাছের কাছে যাব কিনা, বিরলপ্রজ সে গাছের নাম
গোত্র কি সংগ্রহ করবো?  ওটা কি পলিইথিলিন গাছ কারো ড্রয়িংরুমে প্রদর্শন করা হয়েছিলো, বর্তমানে
ব্যবহার উত্তীর্ণ বিগত উপযোগী তাই ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে নিকৃষ্ট জলে।
ওই ফুল কি কেবল একটা ছায়া প্রকৃত ফুলগাছটা কারো বৃক্ষবাড়ির ছাদে কিংবা এটা হতে পারে একটা
হলোগ্রাফিক ইমেজ,
অগমেন্টড রিয়ালিটি প্রযুক্তি প্রয়োগ করে দূষিত জলের  বুকে দৃশ্যমান করা হয়েছে অচেনা ফুল। আমাদের
ঘুণে ধরা, মুমূর্ষু কদর্য  নগরীতে মেকি সৌন্দর্য বর্ধনের বৃথা চেষ্টা...

২৫.০৯.১৮









নার্সিসাস



প্রিয়া ০৫ আমার নতুন রোবোটিক সঙ্গী। অনিঃশেষ নিঃসঙ্গতা,
আত্মহত্যাপ্রবণতা আর যৌনক্ষুধা উপশম সহায়ক।
তার অসংখ্য সেন্সরপূর্ণ হাত, কৃত্রিম রেটিনা আর বৈদ্যুতিক সিলিকন নিউরন আমাকে বুঝতে
কাজ করে। অধিকন্তু, দূর নিয়ন্ত্রণ নয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে আমার সাথে মেশামেশি করে তাও তাকে যথাসম্ভব
এড়িয়ে চলি। তাকে আর অন্ধকার কেড়ে নেয়া আলো, শুক্রাণুউদ্ভূত মানুষদের।
আমিই আমার সঙ্গী শ্রোতা তিরস্কারকারী। এই হয়, বহুদিন থেকে মানুষ নিঃসঙ্গ হলে
তারা শিশুদের মতো হয়ে যায় যারা একা একা দুয়েকটা পুতুল ও পিস্তল নিয়ে খেলাধূলা করতে পারে।
বালুর প্রাসাদ গড়ে ফের ভেঙে দেয়। সেই শিশুদের মতো আমি একা একা গান গাই,
স্বগতোক্তি করি, কখনো আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে দেখে সাপকৌড়ির গল্প বলি,
প্রতিবিম্ব সে-ও গল্প বলে।





যতদূর চোখ যায় ঘনমাধ্যম, হালকামাধ্যম পার হয়ে, যতদূর থেকে
আলো আসে ক্রমে
ততদূর দেখি রিয়েল চাতক উড়ে, রিয়েল মৃগেল উড়ে যায়। 
আয়নাতল বিম্ব ও বস্তুকে বৃহৎরুপে প্রদর্শন করে। 
প্রতিফলিত বস্তুর উপর রঙ চড়ায় আউটওয়ার্ড কার্ভেচার ল্যান্স। 
স্বচ্ছ কোনো রুপসীর পর উবু হয়ে থাকতে থাকতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সেলফিশ বণিক।   
মানুষের চোখের গঠন ত্রুটিযুক্ত না হলে কেউ-ই ৩৬০০ সরীসৃপ চোখে তাকিয়ে অতল খাদে 
পড়ে যেতোনা, নিক্ষিপ্ত হতোনা ব্যক্তিক হীনমন্যতায়।

২৬.১০.১৮



গাছ নিয়ে থট এক্সপেরিমেন্ট


শ্বাপদসংকুল পথ, কাঁটার আঘাত সয়ে আমি অরণ্যের মর্মমূলে 
চলে গেছি। যতটুকু মর্মে গেলে বৃক্ষদের সাথে যোগাযোগ করা যায়, তাদের মনের কথা,  
নিভৃত রক্তক্ষরণ ও জলীয় বাষ্পমোচন অনুভূত হয়।

এক ব্যাগ বিশুদ্ধ বাতাস কাঁধে নিয়ে ভিস্তিওয়ালার মতো ফেরি করি শহরের 
পথে পথে। থলে খালি করে আবারো গাছের কাছে যাই, 
তাদের পাতার রং চেঞ্জ হওয়া দেখে আমি বুঝতে পারি সর্বত্র বিষাক্ত পদার্থ ছড়িয়ে পড়ছে।
বস্তুত বৃক্ষরা সব অ্যান্টেনা হিসেবে কাজ করে। আমি যখন বনের মাঝে বৃক্ষদের ছায়াতলে থাকি, আমি 
থাকি সুবৃহৎ নেটওয়ার্ক রেঞ্জে। পৃথিবীর সব মোবাইল সিগন্যাল বার্তা তারা দূর
মহাবিশ্বে বিশ্বে ছড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাই যারা গাছে থাকে, গাছে খায়, ঘুমায় ও  
নিজেকে প্রকাশ করে তারা পৃথিবীর দূর খবর, বিশ্বের দূর বার্তা খুব সহজেই পেতে পারে।

গাছপালা জালের মতন ছড়িয়ে আছে পৃথিবীতে। গাছপালা জালের মতন ছড়িয়ে পড়ছে    
পৃথিবীর বাইরে, গাছকে জড়িয়ে জড়িয়ে আমি পেতে পারি গোপন ফোনকল, দূর মোবাইল সিগন্যাল, 
এফ.বি. আই. নাসার সিক্রেট উপাত্ত, এলিয়েন কন্ঠস্বর।







আদিম গোত্রজননীর মতো আমাজন বনের গভীরে কিছু সিনথেসিস গাছ 
কার্বনডাইক্সাইডের বদলে নাইট্রোজেননির্ভর, অন্ধকার সহনশীল, যোজনগন্ধা, 
সারাজীবনকাল মৌনতা বিস্তার করে। 
শুনতে অদ্ভূতুড়ে মনে হলেও সেসব গাছ চাঁদের আলোতে ফটোসিন্থেসিস করতে পারে। 
কারা তাদের নির্মাণ করেছে অসংখ্য কার্বন, ম্যাগনেসিয়াম খাদক ন্যানো পার্টিক্যাল দিয়ে? 
কারা তাদের শরীরে উৎপন্ন করেছে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান?  
আদিকাল থেকে সেসব আর্টিফিশিয়াল গাছ সগৌরবে চারা উৎপাদন তথা   
বংশধারা বজায় রেখেছে। শুধু কি গাছ?  
পশ্চিম সাহারায় একজাতের ইঁদুরহিউম্যান ডিএনএ-এর সাথে সেসব ইঁদুরের 
ডিএনএ সাদৃশ্য খুব সামান্যই কৃত্রিম বলে ডিটেক্টেড।

উল্টোরথ, সেটা আবার কি? মৃতদের আত্মাময়  ছায়াপথ,  
পরম-তাপীয় স্পেস, লাইটইয়ারদূর ক্লাস্টার ও মহাইতিহাস সময়ের 
সবই কি একদিন উৎসে ফিরতে শুরু করবে? বিগক্রাঞ্চ।
বিবর্তনের উল্টোরথে চড়ে মানুষ ক্রমশ নির্বোধ বানর হয়ে যাবে?
জিনোম সিকোয়েন্স দেখে কি বায়োনিক প্রাণীদের চিহ্ণিত করা যায়?  
সমুদ্রের গহীন গভীরে কোরাল প্রাচীর ঘেঁষে একটা বায়োনিক মাছ যখন সিলিকন পাখনা 
নেড়ে সাঁতরায় তখন কি অন্যান্য জৈব মাছ তাকে বুঝতে পারে? 
আর্টিফিশিয়াল মানুষেরা খুব শীঘ্র বায়োনিক ডিটেক্টরে ধরা পড়তে শুরু করবে।





ইউরেকা! ইউরেকা! ব্রুনিও দ্বীপের কোনো গুহার  ভেতরে প্যালিওল্যাথিক
মানুষের সংরক্ষণ করে রাখা কিছু বীজ শস্যের/গাছের।
আশ্চর্য বীজগুলো অতিরিক্ত ঠান্ডা কিংবা তাপে, পঞ্চাশ হাজার বছরের অভিঘাতে  
নষ্ট হয়ে যায়নি। হে বিস্ময় বীজ এবার তাহলে জেগে উঠো নরম মাটিতে পানি, 
অক্সিজেন আর বায়ু গ্যাসের সাহচর্যে। 
সুদীর্ঘ রজনী, অ›ধকার, সুদীর্ঘ ঘুমের পর সুপ্ত কুঁড়ি মেলো,   প্রস্ফূটিত করো উপযুক্ত পরিবেশে  
বড় হও , দীর্ঘজীবী হও যাতে আমাদের আরো আরো মৃত্যুঞ্জয়ী বীজ উপহার দিতে পারো।
তোমার নিকট থেকে বীজ আহরণ করে আমরা সেগুলো নিয়ে যাবো দূর গ্রহে, 
চরমভাবাপন্ন পরিবেশে তোমাকে আবাদ করবো,   
প্রাণে প্রাণে সবুজে সবুজে ভরে তুলবো সারাটা অচিন গ্রহ।      
মরুভূমিতে রচনা করবো মরুদ্যান।   
আমাদের শ্রেষ্ঠ বায়োইঞ্জিনিয়াররা কখনো কি ইউবিসহ, দীর্ঘজীবী রোগপ্রতিরোধী,  
আল্ট্রাহাইব্রিড বীজ উৎপাদন করতে পারবে, জৈব প্রযুক্তির অভাবিত উন্নতি সত্ত্বেও   
তারা কি সফল হবে? 

হে বিস্ময় বীজ, এবার তাহলে কুঁড়ি মেলো। দেখা যাকতুমি এই পৃথিবীর নাকি
অন্য পৃথিবীর কোনো লুপ্ত গাছ , ভিন্ন গাছ কিনা!






এতো কথা বলি বৃক্ষদের কানে কানে তবু বৃক্ষদের কন্ঠপেশী কখনো কাঁপেনা। 
ওরা কেন এতা অবাঙ্ময়, মনোযোগী শ্রোতা, ধ্যানী, যোগী?
বায়ুস্তর ছেড়ে বায়ু খুব উর্দ্ধে উঠে গেলে পাতারা দেখায় বুক, শিরা, উপশিরা, বেদনাপ্রবাহ।  
কঠোর সময় জ্ঞান মেনে তারা খাদ্য উৎপাদন বন্ধ করে দেয় রাত্রিবেলা। 

বৃক্ষরা তেমন প্রতিক্রিয়াহীন নয়, তাদের শৈবালভেজাবুক থেকে উঠে মুমূর্ষু মর্মর ধ্বনি  
দুপুর বেলার হাহাকার।   
বহু বৃক্ষ মঙ্গলের  ভূগর্ভস্থ লবণাক্ত হ্রদে, ইউটোপার সমুদ্রের নিচে, অন্যকোনো   
গ্রহে চাপা পড়ে আছে।   
মহাজাগতিক ওরা আঁধারেও বেঁচে থাকে, চাঁদের আঁধার অংশে  
ছোট ছোট কীটপতঙ্গ শিকার করে।



                                                                                                                                                            







খান আলাউদ্দিন

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন