কলঘরে এসেছিল সে
কলঘরে জল পড়ে
টুপ টাপ টুপ টাপ
সারাদিন সারারাত ধরে।
ঘড়ির কাঁটার সাথে
আপসেই থেকে গেছে
টিক টিক টুপ টাপ ধ্বনি
অভ্যন্তরে কোন বিরোধের কথা
কখনো শুনিনি।
এই মায়াবী আবহে
সালংকারা নগ্ন নর্তকী
মহেঞ্জোদারোর-----
স্নান সেরে চলে গেছে দূর দর্গমে
এতো সব জানতেও পারিনি।
বাগানের ফুল মমিঘর মহাফেজখানা
সংরক্ষিত যাবতীয় অপঠিত শিলালিপি
এবং গুহাচিত্র----তারাও তো বোঝেনি!
অধরা দূর নক্ষত্র অথবা নিশাচর পাখিরা
জবাবদিহিতে কেউ বাধ্য ছিল না।
কলঘরে কান্নার ফোঁটা ফোঁটা জলে
সারাদিন সারারাত
টুপটাপ টুপটাপ টুপটাপ
অব্যক্ত কাহিনি!
তরজা ও প্রহসন'
স্বপ্নও যেন আসামি
সাদাকালো ডোরাকাটা জেব্রার দল
এইমাত্র টপকে গেল রেললাইন
উধাও----সাদাকালো দাগ দাগ........।
দুপুরের ডুমুর গাছ অন্য রূপে দেখা যায়
পুরু পাতা।পাতার নিচে ছায়া। ছায়ার
নিচে পুতুল গড়ার কালো কালো মাটি।
বন্ধ ঘর। অনেকের নিরুপায় হাহাকার!
দাহ্য কান্না। আগুন নিষ্প্রাণ নির্দয়-----
গিলে খেলো ওদের..….!
বাকি থাকলো পবিত্র গণতন্ত্র চর্চা
তরজা ও চাপান উতোর.......প্রহসন!
শুধু মোমবাতিরাই ছুটিতে।
খবর থেকে দূরে
পরদা সরাতেই হাসতে হাসতে ঘরময় রোদ্দুর
দিনের প্রথম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
জানিয়ে গেল।
তবলায় যুগলবন্দী ছাতিম ও ডুমুর-----আমি
জানিই না, বাহবাযোগ্য মহৎকাজ কী এমন
করলাম! অথচ মনমেজাজ
মোটেই ভালো নেই।
যথেষ্ট বড় মাপের কোন দূরত্বই অপেক্ষায়
দাঁড়িয়ে নেই। চপল নদীটিও পলাতক।
মাধবীলতা মনের ভাব বুঝে কিছু একটা বলতে
চাইলো। গন্ধরাজ কামিনী ও বনমল্লিকাদের
হুলস্থুলু গন্ধে বাতাস সাতসকালেই
স্নান সেরে নিয়েছে।
বটতলার পুরনো চাতাল। ঝরাপাতাদের আড্ডা
অবসাদের সংক্রমণ এখান থেকেই----
অনুসন্ধানে জেনেছি।
ভালো নেই। আমি কেন, কেউই নয়।
রটনা গোপন থাকে না , থাকার কথাও নয়।
যদিও কালিঝুলিমাখা খবর থেকে এ পোড়া
দুচোখ----দূরেই রেখেছি!
এখন বিশ্রাম নয়
পেরিয়ে এলাম অনেক কবিতা!
রুলটানা সিঁড়ি বেয়ে অসংখ্যবার ওঠানামা
কিছুটা পথ পায়ে পায়ে হেঁটে আসা তবে
এখনই বিশ্রাম নয়!
একটা দৃশ্য ভেসে এলো। প্রিয় গানের কলি
যেমন নিঃশব্দে আসে যায় :
মালভূমির কাঁকুরে আর
গোধূলি রঙের রাস্তায়
ছাগল নিয়ে ফিরছে
সাঁওতাল মেয়েরা।
খোঁপায় তাদের স্থানীয় লাল ফুল।
কোন বৃত্তেরই পরিধি অটুট থাকবে না
ভাঙতে ভাঙতে আরো অনেক গোল
শেষ পর্যন্ত নিরাবয়ব!
বলয়গ্রাসের বাইরেটাই শেষ কথা :
ক্লান্ত পা----বিশ্রাম নিও না!
চিহ্নওয়ালা করোটিরা
কিছু বীজ কিছু শস্য
আল বেয়ে ধুলোমাটি খালি-পা
ধূসর দৃশ্য থেকে সদর্থক হরিদ্রা-সবুজে।
অক্ষরের বীজ বোনা প্রাত্যহিক
সকাল দুপুর----মনোরম অংশচিত্র!
আমার উঠোনেও ধর্মনিষ্ঠ রোদ
পোশাকের রঙে কোন ধর্মভেদ নেই।
যে রক্তে তোমাকেও ভেসে যেতে দেখেছি
আমিও তো পোড়া পোড়া সে-ই আগুনেই
চিহ্নওয়ালা করোটিরা খটখটিয়ে হাসে----
আমাদের অভিন্ন শত্রু!
কিছু বীজ... কিছু শস্য... এবং ধরিত্রী
আমাদের শত্রু অভিন্ন।
কথা----নিজের সঙ্গে
মৃত হাঁস ভেসে যাচ্ছে জলপুকুরে
নিজের সঙ্গে যে কোনো ধরনের কথা নিয়ে
কবিতা হতে পারে।
সংলাপে কান রাখি
রপ্ত করেছি মঞ্চের আদব কায়দা
আস্থাশীল---সুধী দর্শকমন্ডলী......!
আলো জোরালো হয়
কমে আসে ধীরে ধীরে।
একক অভিনেতার মুখ আলোকিত অথবা
বৃত্তাকারে মধ্যমঞ্চে স্থির।
মৃত হাঁস ভেসে যাচ্ছে জলপুকুরে
নিজের সঙ্গে যে কোন ধরনের কথা নিয়ে
কবিতা হতে পারে।
এই বিরলতম আত্মমগ্ন রাত যথার্থই
সোমরসে বঞ্চিত ছিল!
দেবানন্দ ভট্টাচার্য।
পরিচয়:
১৯৫৩ সালের ১৮ জুন কলকাতায় জন্ম। শিক্ষাদীক্ষা বেড়ে ওঠা পেশাগত শিক্ষকতা ও সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা
সবই এই শহর ঘিরে। কবিতার পাশাপাশি একজন আঁকিয়ে। নিজস্ব কবিতা-সংগ্রহ সহ আরও তিনটি ছাপা বই আছে। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন