উৎসর্গ - মলয় রায় চৌধুরী সব্যসাচী  লেখক




সেই সব মানুষেরা ফিরে ফিরে আসে


তবুও যে কোন ভাবে হাটছি আর ঘুরছি
তবুও কথা বলি হাসি আর কাঁদি
তবুও  মতামত ব্যক্ত করি
তবুও দু বেলা দু'মুঠো  ভাত জুটে
  চা - সিগারেট খাই আড্ডা দি
প্রতিদিন কোন না কোন সতীর্থ আসে
কেউ কেউ সুখ দু:খের কথা শুনায় - শুনে
প্যান্ট শার্ট জুতা সেন্ডেল পড়তে পারি।

অমার পূর্বসূরিগণ
সক্রাতাস কে হ্যামলক পান করতে হয়েছিল
গ্যালেলিও গ্যালিলি কে কি হাত্যার দন্ড দেয়া হয়নি?
ওরা কি হত্যা করেনি কোপার্নিকাস কে?
শামসেত তাবরিজ কে কি পেছন থেকে হত্যা করে নি?
কবি খইয়াম কে ঘর ঘেরাও করে পুড়িয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল
মনসুর হল্লাজ কে কেটে টুকরো টুকরো করে হত্যা
তার পর পুড়িয়ে ছাই ভাসিয়েছিল জলে
ইবনে সিনা কে কি হত্যা করেনি?
আবু হানিফা কে কি জেলে বিষ খাইয়ে মারেনি?
খনা কে হাত পা জিহবা কেটে কেটে হত্যা করেনি?
রাজা রামমোহন কে এক ঘরে করেনি?
ইশ্বর চন্দ্র কি রেহায় পেয়েছিল?
নজরুল কে জেলে নির্যাতন এবং স্বধর্মীরা কি কাফের ফতোয়া দেয় নি?
গোর্কি কে নির্বাসন
হুমায়ুন আজাদ কে প্রকাশ্যে হত্যা চেষ্ঠা
শামসুর রাহমান কে নিয়ে প্রতিদিন
বিষোধগার ছেপেছে কত দৈনিক
আহমদ ছফা কে কি রেহায় দিয়েছিল বাংলা একাডেমি? 
ঠিক এ-ই সময়ে জাফর ইকবাল কে কত বার হত্যা চেষ্টা করেছে
  অভিজিৎ রায় - ফয়সাল দিপন কেও প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো।

কাউকেই রেহায় দেয়নি কায়েমিরা
কাউকে রেহায় দেয়নি ধর্মব্যবসায়িরা
কাউকেই রেহায় দেয়নি দলদাসেরা
কাউকেই রেহায় দেয়নি স্বার্থান্ধরা
তাঁহাদের তুলনায় আমি খুব নস্বি
এই না হোক আত্মতৃপ্তি
আঘাত না আসিলে আমি ঠিক পথে নাই
প্রতিঘাত না আসিলে আমি ঠিক পথে নাই
গালমন্দ না শুনিলে আমার কথা ঠিক নাই।

শোন
যে কবিতা  প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না
সেটি সফল কবিতা না
মানুষের ভাষ্য যদি হয় প্রতিকবিতা
আমি সেই প্রতিকবিতাই লিখি
শিল্পের প্রয়োজনে শিল্প লিখি না
আখের গোছানোর প্রয়োজনে বিকার লিখিনা
তথাকতিথ আরোপিত সুসভ্য হতে পারি নাই,পারি না
তথাকতিথ ঘাতক সহায়ক শুশিল হতে পারি নাই,পারি না
আমার শোণিতের ধ্বমনিতে দ্রোহ প্রেম খেলা করে,
উজানি কৈয়ের মতো
উজান স্রোতের তরণি ভাসাতে স্বাচ্ছন্দ বোধকরি
ভাটিতে তলিয়ে যাইনা,কারণ
ওস্তাদ আমার ব্রজেন দাশ।

পথ যদি রুখে দাঁড়াও  পাগলা শহিদ অভি মিলে
পথ যদি রুখে দাঁড়াও জঙ্গি জিহাদি লাদেন বাংলাভাই মিলে
পথ যদি রুখে দাঁড়াও চাপাতি ত্রিশূল  বল্লম হাতে
পথ যদি রুখে দাঁড়াও  অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র  হাতে
পথ যদি রুখে দাঁড়াও  পাগলা শহিদ অভি মিলে
পথ যদি রুখে দাঁড়াও রামদা চাইনিজ কুড়াল হাতে
মরিলে  শান্তি, মারিলে প্রশান্তি
আমি ঝিসাস হবো,জোড়াস হবো না।

ধলপহরে মদ্যপ মুখে ট্যাংকের গোলা ছুড়তে ছুড়তে বত্রিশে আসো
আমি রাসেল হবো,হবো কামাল জামাল
সেই সব চিরন্তন মানুষের আসে ফিরে
সমাজের প্রয়োজনে,রাষ্টের প্রয়োজনে
বিবেকের আলো জ্বালাতে,মন রাঙাতে
যুগে যুগে মহামানবেরা আত্মত্যাগীরা আসে
  মানুষ মানুষের কল্যানে।






লুট হয়ে যায় আমার শহর

    
প্রতিদিন লুট হয়ে যায় আমার প্রাণের শহর
প্রতিদিন লুট হয়ে যায় আমার প্রাণের সৈকত
প্রতিদিন কেটে নেয় আমার প্রশান্তির ঝাউবিথি
প্রতিদিন লুট হয়ে যার  সৈকত সকাল
প্রতিদিন লুট হয়ে যায় ভাট ফুল বালিয়াড়ি
প্রতিদিন নিশ্বাস হারায় রুপুসি লাল কাকডা

প্রতিটি ঢেউয়ে ভেসে আসে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট কনড়ম
প্রতিটি ঢেউয়ে ভেসে আসে প্লাস্টিক জার পলিব্যাগ
প্রতিটি ঢেউয়ে ভেসে আসে ভাঙ্গা কাকন চুড়ি
প্রতিটি ঢেউয়ে ভেসে আসে এমন সব খোসা নাম অজানা
আমার প্রাণের সৈকত আর আমার নাই।

ফড়িয়াপতি,ফড়িয়া নেতা,ফড়িয়া আমলা
আরো কত পেশার পেশিজীবির যৌথতায়
এশহর আর আমার নাই
এশহর আর মানুষের নাই
এশহরে আর পাহাড় নাই
এশহরে আর  ছড়া নাই
এশহরে আর খাল নাই
এশহরে আর নদী নাই
সবি গেছে লুটের দখলে।

এশহরে আর মৌসুমি ফলের আবাদ নাই
এশহরে আর মৌসুমি সবজি আবাদ নাই
এশহরে আর ফলজ বৃক্ষের ফলন নাই
এ শহরে হলুদ ফুলের সমারোহ নাই
এ শহরে কাশবন শনফুল তারিবন নাই
বার্মিজ মার্কেটে রাখাইন তরুণীর হাসি নাই
নাই নাই নাই কিছুই নাই।

সবি গেছে লিজ -উপলিজ -নালিশের দখলে
রাজনীতি নাই,নেতা নাই,আমার মতো মেরুদণ্ডও নাই
সবি পড়েছে নুইয়ে, নীতিহীনতার কাছে।

কলাতলি -হীমছড়ি - বড়ছড়ার পাহাড়ে চুড়া নাই
গাছ নাই তাই ঝর্ণাও নাই
আমার শহরে হোটেলের ফাক দিয়ে দূর সমুদ্র দেখা যায়
আমার শহরে যায় না দেখা সৈকত
হোটেল মোটেল  মার্কেট দেখা যায়।

আমার  শহরে নেতা আছে রাজনীতি নাই
আমার শহরে রাজনীতি আছে নীতি  নাই
আমার শহরে সাংবাদিক আছে সংবাদ নাই
আমার শহরে সংবাদ আছে সাংবাদিক নাই
আমার শহরে সংবাদ পত্র আছে সম্পাদকিয় নাই
আমার শহরে গল্প আছে ইতিহাস আছে চর্চা নাই
আমার শহরে গান আছে গায়ক আছে গাছ নাই
আমার শহরে গাল আছে ভুরিভুরি আওয়াজ নাই
আমার শহরে আওয়াজ আছে ওয়াজও আছে
শোনার বোঝার  লোক নাই।

প্রতিদিন নাই হয়ে যায় চেনা সৈকত
প্রতিদিন নাই হয়ে যায় সাজানো ঝাউ
প্রতিন নাই হয়ে যায় মাটঘাট বালিয়াড়।

আমার শহরে প্রতিদিন দালান উঠে
আমার শহরে প্রতিদিন দেয়ালও উঠে
হারিয়ে যায় আমার ঘুড়ীর আকাশ
হারিয়ে যায় আমার ভাবনার কবিটং
হারিয়ে যায় আমার রাজনীতির ময়দান
হারিয়ে যায় লালদীঘি  জেলে পার্ক
হারিয়ে যায় আমার সাতার কাটার গোলদীঘি
বিজ্ঞাপনে ভাসে সুইমিংপুলের টিকিট
হারিয়ে গেছে  ঢেউ খেলানো মিষ্টি বাতাস
রঙিন দেখায় ঢেউ ছড়ানো সফেদ সফেন
হারিয়ে হারিয়ে যায়
লুট হয়ে যায়
লুট হয়ে যায়
আজ বিবেকিরা অফিয়াম মর্ফিন!!
৪নভেম্বর০১৮





নভেরা

মানুষের অভিজ্ঞতাই মানুষ কে করেছে
অকৃতজ্ঞ কৃতঘ্ন স্বার্থপর
মানুষের জীবনাচরণ ই মানুষ কে শিখিয়েছে
খুন ধর্ষণ নিপিড়ন
মানুষ পারেনা এমন কিছুই নাই
প্রকৃতি ভোগ দখল উজাড় ধ্বংস
সব মানুষেই পারে।
মানুষ মানুষকেই কামড়ায় খোঁচাই
মানুষের কাছে অন্য প্রাণী ও নিরাপদ নয়
মানুষ মানুষের কাছে ও অনিরাপদ।

তবুও আমি মানুষের কথা বলি
তবুও আমি মানুষ কে এঁকেছি
তবুও আমি মানুষের গঠন গড়েছি
তবুও আমি মানুষ নিয়েই চলেছি

অ মানুষ আমাকে মুক্তি দাও
অ মানুষ আমাকে মুক্তি দাও
মুক্তি দাও মুক্তি চাই
আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।

মানুষ আমাকে তাড়িত করেছে
মানুষ আমাকে প্রতারিত করেছে
মানুষ আমার কৃতিত্ব চুরি করেছে

কেউ বুঝেনি আমাকে, মানুষ আমাকে চেয়েছে
তার ইচ্ছার পুতুল রূপে
আমি নিরব দ্রোহ করেছি, হয়েছি নির্বাসিতা।

একদিন খুব বেদনার নীলে নীলাক্ততায়
কে যেনো কাছে এসে বুকে বুক ঘষালো
জোনাকির আলোয়,দেখিনি তার মুখ চোখ
শুধু শ্বাস প্রশ্বাসে জ্বলজ্বলে চোখ , চার জোড়া ঠোট
পরস্পর পরম্পরা, বুকে বুক নাকে নাক
গভির কালো চুল উর্ধমুখি কুন্তল
কপোলে দেবির আলপনা
গ্রীবায় কালো মুক্তোর মালা
ধপধপে সাদা পরির মুখ
দু:খ মোড়ানো জামা
স্বপ্ন জড়ানো বেঘোর ঘুমের গোঙানিতে
চিৎকারে বলি  ইউরেখা ইউরেখ
ভাস্কর জননী নভেরা
আমাদের নভেরা আহমদ।





প্রাণী জীবন

আমি একজন বুড়া শুকর
শুকরের অনেক সাবক থাকে
সেই সাবকেরা লায়েক হইলে
দাঁত পরিক্ষা করে আমার পোঁদে
শীতকালে  দেহের অধিক উত্তাপের জন্য
মানুষ আমাকে হত্যা করে পুড়িয়ে খায়
গুতা খাওয়া পোঁদের  চামড়া টি
উপরে খুব মসৃন, পরিদানে আরাম দায়ক
আমাকে শীতবস্ত্র রূপে গায়ে দেয়
আমার গুরুত্ব ও কম নয়।

আমি একজন বুড়ো গন্ডার
আমার গায়ের চামড়া মোটা
গন্ডারের পিটে চাবুক মারা যায়
মানুষের  কিছু  বৈশিষ্ট আছে
খেয়ে ব্যবহার করে, তারে চাবুক মারা
সেই চাবুক খসানো চামড়া দিয়ে
মানুষ ছুরি, বল্লম, চাবুকের হাতলের
জ্যাকেট বানায়,যাতে ধরতে সুবিধা হয়।

আমি একজন চিরায়ত গাধা
গাধারা হালকা পণ্য বহনে স্বস্থিবোধ করেনা
গাধার পিটে যতই বোজা ভারি হবে
গাধারা ততই হাটিবে দুর্গম গতিতে
আমার পায়ের খোল দিয়ে
সৌখিন নারী ও নৃত্যশিল্পীর জন্য
হাই হিল বানানো হয়
ফলে  নারী কে আকর্ষণীয়  ও যৌনবতি দেখায়।

আমি একজন নির্বোধ বলদ
আমাকে দিয়ে দিনরাত হাল চষা যায়
আমাকে দিয়ে গাড়ি বানিয়ে বোঝা বহন করা যায়
মাতব্বর,নব দম্পতি আমাকে নিয়ে
শ্মশুর বাড়ী ও মেলায় যায়
কর্মক্ষম হলেই, মানুষ আমাকে
কোরবানি দেয়,ফাতেহা ওরশ করে
তারা  পুণ্য নেকি হাসিল করেন।

আমি একজন বিশ্বস্থ কুকুর
বিদেশের লাট সাহেবেরা আদর করে
কত নামে ডাকে,পাহারায় ও রাখে
এই দেশে ধনির বাড়ী বিশ্বাসের সহিত পাহারায় থাকি সারা রাত
বিনিময়ে তাদের উচ্ছিষ্ট হাড়,গুড়,কাটা খেয়ে জীবন বাঁচাই
পাহারায় ঘেউ ঘেউ করতে করতে চোর ডাকাত দৌড়াই
আমি কুকুরের জাত।

আমি একদা হরিণ ছিলাম
আমার চিত্রল রূপ,সরু ট্যাং লোভনিয় তাহাদের
বাগান বিলাসে থাকতে থাকতে
আমার ভাস্কর্যপুর্ণ শিং গজিয়েছে
একদিন এক স্থাপথ্য শিল্পি আমাকে দেখে ফেলে
সে তার ঠিকাদারি বিল বাড়াতে হত্যা করে আমাকে,আমার
শিং গুলি শোভা পাচ্ছে নেতার শোভা ঘরে
যে কসাইটি আমাকে হত্যা করলো
সে পেয়ে গেলো অমুল্য রতন 'মৃঘনাভি"
এসব আমাকে মানুষেরাই করেছে।

আমি একজন মরুর উঠ
পরিব্রাজকের তৃষ্ণা মিটাতে
নিজের দেহেই গড়ে নিয়েছি জলকূপ
আমাকে হত্যা করেই মানুষ পিপাসা মিঠায়
মরুর পথে ক্ষুধা লাগলে
জবাই করে মাংস পুড়িয়ে খায়,তাদের জীবন বাঁচায়
আমার দেহের তৈলাক্ত চর্বি দিয়ে আগুন জ্বালায়
রাজা - আমির - বাদশা আমাকে দিয়ে  দৌড় প্রতিযোগিতা করে,মানব শিশু হয় দৌড়ের ঝকি
শিশুর কান্নায় রাজা মহারাজারা খুশিতে হয় আত্মহারা।

আমি একজন দ্রুত গামী ঘোড়া
আমি বাহন,গতির পরিমাপন
আমার ওলানের দুগ্ধ অতি পুষ্টিকর
আমি ছুটতে পারি ঝড় বৃষ্টি স্থল মরু জলধি
আমি পেছন পায়ের আঘাতে শত্রু করি ঘায়েল
সব মানুষের জন্য,
তাহাদের বুদ্ধি আছে বেশ
আমরা প্রাণী আমাদের বিবেক আছে, বুদ্ধি নাই
তবুও মানুষ আমাকে
তবুও মানুষ আমাদের
তারপরেও কি মানুষ শ্রেষ্ট জীব?





তবুও মানুষ ভালোবাসি

মানুষ কে ভালোবাসার অভিজ্ঞতা কম নয়
মানুষ কে ভালোবেসে তিক্ততাও কম নয়
মানুষ কে ভালোবেসার রিক্ততাও আছে ঢের
মানুষ কে ভালোবাসে বিক্ষত হয়েছি প্রচুর
মানুষ কে ভালোবাসার  ক্ষত নিয়ে করি যাপন
মানুষ কে ভালোবেসে মৃত্যু পারোয়ানা পেয়েছি কতো!
মানুষ কে ভালোবেসে ফেরারি হইনি তা নয়
মানুষ কে ভালোবেসে গঞ্জনা সয়েছি নিয়ত
মানুষ কে ভালোবেসে অপমান সয়েছি প্রত্যেহ
মানুষের কথা,অধিকারের কথা কইতে
মানুষেরই জেলে বন্ধি ছিলাম সহস্র বছর
মানুষ কে ভালোবেসে হইনি কো যন্ত্র,
তবুও মানুষ  থামায়নি ষড়যন্ত্র!
মানুষেরই জন্যে মানুষের দেশ,মানুষের দেশ মানুষ দখলে নিতে
যুদ্ধও হচ্ছে হররোজ

কি পাইনি মানুষকে ভালোবাসে
মানুষের প্রেম,মানুষের আদর,স্নেহ অভিনন্দন, শুভেচ্ছা,
  জনতার যোয়ার

আমি মানুষের কোন কোন অবদান অস্বিকার করব
মানুষ কে ভালোবাসি,মানুষের জন্য লড়ি।

হোক না সে চোর,ডাকাত,পীর-দরবেশ, 
আউলিয়া,সাধু,সন্ত, ভবঘুরে,নারী,পুরুষ,শিশু-কিশোর,
হোক না সে প্রমোদ বালক,বেইশ্যা,ছলনাময়ি,ষড়যন্ত্রকারি
কামুক।

  মানুষই এই পদাংকারের স্রষ্টা
লিখেছি যা, তাও মানুষের জন্য
এখনো  লিখছি মানুষের জন্য
মানুষ কে ভালোবাসি
মানুষের জন্য শিল্প গড়ি
নাইবা হলো নিপুন কারুকার্য
তবুও মানুষ, তারপরেও মানুষ

প্রকৃতিরই এমন সত্তা,আমি যে প্রকৃতি
শুধু মানুষের জন্য তৈরী।
১লা বৈশাখ ১৪২৫

মনুষ্যাচারি

মানুষ
প্রতিক্ষায় রাখতে প্রছন্দ করে
আমি আশায় থাকি
ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা
তবুও নিরাশ হয়না মানুষ।

আমি মানুষের জাতে নাই
আমার কোন ধর্মানুভূতি নাই
আমার কোন সুখানুভূতি  নাই
আমার কোন দুঃখানুভূতি  নাই
আমার অনুভূতি নুনুভূতি গন্ডারের চামড়ায় মোড়া।

জীবন দাশ দৌড়ে ট্রামে ঝাপ দিলো
তখোন তাঁর মরণাভূতি  জন্মে ছিলো
আমিও চেয়েছিলাম,জোরে ডাক দিলাম
চরমপন্থা অর্জন করার শক্তি লাগে
জীবন দাশ তিলে তিলে তা অর্জন করেছেন।
আমি পারিনি,আমার ভেতর মায়াছিল
আমার ভেতর জীবনের  লোভ কাজ করে
জীবন দাশ লোভের উর্ধ্বে  উঠেছিলেন
জীবন দাশ জন্মান্তরবাদে  অর্জিত
আমি কি পুণরোত্থান বিবর্জিত?
জীবন দাশের পাপ পূণ্যের উর্ধ্বাকাশে
আমি কি পাপ পূণ্যের সমান লোভি?
লোভের ভেতর,চাওয়া পাওয়ার আশায়
আমি কি মানুষের সমাজে বিচরণ করি?
জীবন দাশ  সমাজেই বেমানান
মানান সই হতে আমার কি কসরত?

মানুষ _ব্যক্তি - কবি জীবন দাশ সহজলভ্য নয়
আমি কি রকম সহজলভ্য হয়ে গেছি
জীবনের লোভে হাত পাতি দারে দারে
অথচ
জীবন দাশ নিয়ত চাহিদা হজম করেছে
জীবন বাবু প্রশ্ন করেন  কানেকানে
বৈরাগী তুমি ভন্ড লোভী উচ্চাকাঙ্খী
জীবন দাশ কি হীমেল নৈরাশ্যবাদী?
বৈরাগীর ভেতরে  প্রচন্ড লোভ লালন করে
তুমি লালায়িত থাকো মানুষের প্রতি
লালায়িত হতে ও নুন্যতম যোগ্যতা চাই
তাও তোমার নাই,চাপা টা আছে বেশ
তোমার চাপাবাজি ব্যবসার দিন শেষ
নি:শ্বাসেরে ছুটি দাও,হও অনিশ্বেস।





বেহেস্তি খোয়াব

মা যখন পোয়াতি আছিল তখন বাপ মইরা গ্যাছে
নানির মুখে হুনছি আমারে বিয়োনের লগে মইরা 
গ্যাছে মা
নানি তোলাদুধে, ভাতের ফেন জাউ খাইয়ে ডাঙ্গর
কইরছে
মায় নানিরে অছিহত কইরা গেছে এতিমখানায় দিয়া
হাফেজ আর মলই বানাইতে।

নানা মইরা নানি এখন একলা রাড়িবেড়ি
এ বাড়ি ও বাড়ি ঝিয়ারী করে খায়
আমি যহন আস্তে আস্তে ডাঙ্গর হইতাছি
বাপের লাহান চেহেরা - ছুরত টুকটুকে লাল
নাদুসনুদুস দেহের গড়নে দৌড়াদৌড়িতে পাড়া
মাথায় তুলি
একদিন এক হুজুর আইসা নানির লগে হাদিস
কোরানের বয়ান দিল
বয়ান হুইন্না নানির চোখে পানি আইলো
নানি আমায় সোনারূপার পানি দিয়া গোসল দিলো।

তারপর আমার জামাকাপড় গাট্টি বাইন্ধা হুজুরের
হাতে দিয়া কইল, নাতিরে আমার
কোরআনে হাফেজ বানাইয়া দিও
মরনের পরে যাতে নাতি আমার জানাজা
পড়াইতে পারে
হাসরের ময়দানে সে-ই তো আমার বেহেস্তের লাঠি।

কিন্তু কে জানিত হায়
নানির খোয়াব বেহেস্তের হাউস দুনিয়াতে মইরা যাবে !
একদিন গভীররাতে আমার ঘুমঘোরে
দাঁড়িওয়ালা হুজুর দৈত্যের লাহান
আমার উপর হামলে পড়ে।

পায়ুকামী নূরানী হুজুর
তার ঈমানিদণ্ড সমেত আমার পায়ুর সরলপথে
ঘোষণা দিতাছে স্রষ্টার অপার মহিমা
মাঝে মাঝে জেহাদ জেহাদ আওয়াজ তুলে
আমারে রক্তাক্ত করে তিনি হলেন মহাকালের গাজী
আর আমি বেহেস্তের গেলমান হইয়া
সুরাবন তহুরার পাত্র হাতে লইয়া ঘুরি। 

এদিকে নানি আমার কবরে কাঁদতে কাঁদতে
হয়ে গেল জনম উম্মাদিনী।















মানিক বৈরাগী


নব্বইয়ের সাবেক ছাত্রনেতা, কবি, শিশুতোষ গল্পকার, সাংস্কৃতিক কর্মী। জন্ম ২৮জানুয়ারি ১৯৭১। সিকল ঘাটা, উত্তর লক্ষ্যারচর
চকরিয়া। এখন থাকেন বিমানবন্দর সড়ক, পূর্ব নতুন বাহারছড়া, কক্সবাজার।

প্রকাশিত গ্রন্থ:

কবিতাগহীনে দ্রোহ নীল শুভ্রতার কলঙ্ক মূখস্ত করেছি
নৈনিতালের দিন
শের এ মানিক বৈরাগী
ছাইস্বর্ণ অম্লজলে
মৃত্যুর গান গাই
একলব্যের আঙুল।

প্রবন্ধ

বুবু থাকুন নিরাপদে।

শিশুতোষ গল্প

বন বিহঙ্গের কথা
ইরাবতী ও কালাদান
ডোলবাতি।

সম্পাদক  

গরান ছোট কাগজ।
পিতা মুখপত্র বঙ্গবন্ধু স্টাডি সার্কেল।
নির্বাহী সম্পাদক
কবি অমিত চৌধুরী মুল্যায়ন স্মারক সংকলন।

ধুলোর প্রবাল
কবি তৌহিদুল আলম ৫০তম জন্মদিন স্মারক সংখ্যা।

সম্মাননা

কবি অমিত চৌধুরীর মুল্যায়ন সম্মাননা পদক
কক্সবাজার অন্তরা সাংস্কৃতিক একাডেমি কতৃক গুণীজন সম্মাননা পদক
বঙ্গবন্ধু জাতীয় সাহিত্য পরিষদ প্রদত্ত সম্মাননা পদক।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন