আমি অচেনা শহর


আমার অশ্রু দিয়ে আমি চাঁদকে ধুয়ে দিয়েছি
আমার আঙুল কেটে আমি গেয়েছি গান
যখন সমুদ্রের মাঝখানে নৌকা হারিয়ে মাতাল হয়েছিল বৈঠা আমার মতো
আমি রক্ত দিয়ে গেয়েছিলাম সব হারানোর গান

বেঁচে থাকার উত্তাল আয়না ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছি কতবার

একদা ছেলেবেলায়
প্রবল পাগলামি করে কবরের ধারে বসে বইগুলো পড়ে ফেলতাম
প্রাচ্যের বিশাল কবরখানা আমার শৈশবের বিষাদ
জোনাকিরা পরির মতো নাচত অন্ধকারে
আমি কবরের সিংহাসনের ওপর বসে থাকতাম একা

শরৎ কালের মেঘ
উন্মমাদগ্রস্ত বৃষ্টি
যেভাবে আমার থেকে পালিয়ে গেল আমার জীবন
আমি অচেনা শহর
আমি নিয়ে আসেনি মানবিকতার আসবাবপত্র 

এখানে আকাশ চামড়ার মতো কুঁচকে থাকে আর 
নক্ষত্ররা রক্ষা করে রাখে 
প্রতীয়মান আমরা হেঁটে বেড়াতাম আয়নার ভেতরে
ঘোড়ার গাড়ির ঘন্টার শব্দ
রেস্তোরাঁর  গাছ
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিঁড়ি
কুৎসিত গলি গুলোতে ঝুলে থাকা ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের পায়ের দড়িদড়া 

মহান গ্রন্থের পাতাগুলো উড়ছে  ইতর  আকাশে
শহরের  হাসি যেখানে চক্রাকারে ঘুরছে

আর সমাজব্যবস্থাগুলো সুতোর মতো ঝুলছে
 হাওয়া কাটাকাটি করে দিচ্ছে
আমরা হাওয়ার এক কোণ ধরে ঝুলে রয়েছি আলগা
মনুষ্যত্বের মতো

আমি পাঠ করছি ঈশ্বরের আই ফোন

আমার  হৃদয় একটি জলসাঘর
আমার শরীরের শিল্পীদের আমি বারণ করি নি
তারাও আমার মতো জানতো না কিভাবে মরতে হয়
                          





ক্রুশবিদ্ধ


আমার ছবি আমাকে আহত করেছে কাল সারারাত

এখন সকাল হয়েছে
আমার সামনে ধরা দৈনিক খবরের কাগজের 
অক্ষরগুলো পোকার মতো ভনভন করছে
আমি যাই
বাতাস নিয়ে আসি
তাদের  ওড়ার জন্য  দিই

অন্ধ শিশুদের মাথার ওপর সূর্য
আমি তাদের পাঠশালা অবধি এগিয়ে দিয়ে আসি
আর রহস্যেরা মৃত
আমি  তাদের রক্ত দেখি  সমাধি ফলকে

গভীর অতলস্পর্শী এক কাঁচ 
যেমন করে আকাশে ঠেকে থাকে পাখির ডানা
আর সুদূরপ্রসারী হয় আমাদের জীবন

শরীরের খুঁটিতে আমি ক্রুশবিদ্ধ
মাস্তুলের পাশে দাঁড়িয়ে দেখি বিশাল একটি পৃথিবী ডুবে যাচ্ছে শূন্যে
                 





সিম্বলিক এক সূর্যের আকাশ


উপাদানহীন সেই নৈঃশব্দ্য 
সকালে আমরা আর একটা রাত্রির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি
সিম্বলিক এক সূর্যের আকাশ

আমাদের শিশুরা ঘর বন্দি 
আর আমরা কবরে আলো জ্বেলে  নিচ্ছি বাঁচার জন্য

প্রবৃত্তির ছেঁদা
বিমূঢ় রাজার পাহাড়
আমরা বিপন্নতায় ঢুকছি
আমাদের বিপন্নতা সাজঘরের মতো

মেঘ নেই
অরণ্য নেই 
আমাদের কাঠুরিয়ারা হারিয়ে গেছে
তাও আমাদের শরীর রয়েছে
সমান্য  রক্ত রয়েছে 
আমরা বানিয়ে নিতে পারি সেই সব  মর্মর মূর্তি গুলো
যারা কখনো জানবে না কিভাবে মরে যেতে হয়

আমাদের দিন নেই
দিনের আসবাবপত্র গুলো এমন করে পড়ে রয়েছে 
যেন আমরা বানাতে পারি আবার একটি সূর্য

                   




তারা এমন করে চলে গেছে


উড়ন্ত কালো রঙের পতঙ্গের মতো তারা মরেছিল আগুনের ভেতরে
তারা এতটাই শিশু ছিল যে হয়ে উঠেনি নারী বা পুরুষ

তারা পবিত্র করে নিয়েছিল আগুন
আর হাত ধরাধরি করে মরেছিল

তারা কেঁদেছিল 
আর আগুন নিভে গিয়েছিল তাদের মৃত্যুর সাজ ঘরে

এখন সেখানে পাহাড় এসে রাতে ঘোরাফেরা করে
সমুদ্র ছবি পাঠিয়ে দেয়
রাইফেলের স্প্রিং থেকে বেরিয়ে গাছেরা হাওয়ায় দোলে

মৃত চোখ গুলো চেয়ে চেয়ে নৌকার মতো 
সরে সরে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতের দিকে

অথচ তারা এমন করে চলে গেছে 
আমাদের হাতগুলো প্রার্থনার জন্য খুঁজে পায় না তাদের হাত
               





ইতর কোলাহল


পরচুলা পরা পৃথিবী
জাহাজের হাওয়া আমার হাওয়া
রাস্তায় রাশি রাশি মানুষগুলোকে আমি সংগ্রহ করি 
যাতে আমি সবচেয়ে একা হই
জীবনের জন্য রক্ত দিতে গিয়ে কিছুটা রক্ত পড়ে যাক পাত্রের বাইরে
মানুষ ছেঁদা হয়ে যাক নিঝুম হওয়ার জন্য

এত রাত
আমি এতিমখানার স্তম্ভ গুলো নাড়া দিচ্ছি  
আর নক্ষত্ররা জেগে উঠছে কিন্তু খসে পড়ছে না 
কারণ বালকেরা খেলা করছে মসজিদের মাঠে

কুৎসিত রাত্রি
আর পবিত্র আমার জীবন
আমার শরীরের কিছু অংশ পোকায় খাওয়া
আমিও এতিমখানার পাথরগুলো খাচ্ছিলাম

এই সেই জীবন
যেখানে আমার হাতের সরু গলি দিয়ে 
হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি কবরখানার  ধারে
এখানে সব সময়ই আন্তর্জাতিক গান ধ্বনিত হয় 
একটি নিগূঢ় জাহাজের ভেতরে
কেউ কেউ কিছু লুকিয়ে থাকা দেখতে পায়
আমিও শূন্যের ছেঁদা দিয়ে আকাশের কানা দেখি
দেখি পাখিরা কিভাবে অসহায় উড়ছে

শহর বোঝাই জাহাজ
কারিগরী দক্ষতায় তৈরি আমাদের বিষাদ
রশির খুঁটি
আর জলের ইতর কোলাহল
অনিশ্চিত থেকে আমরা ছেড়ে যাচ্ছি ধীরে
 
একটা দোলা খাওয়া সাঁকো বেঁধে নিয়েছি 
আমরা শেষ হবো না কখনো
                      




দূরবর্তী জলের শব্দ


দূরবর্তী জলের শব্দ
আমার পাপের জাহাজের ওপর চাঁদ
আমি যেখানে জন্মেছিলাম  গম্ভীর একটি জায়গা
জন্মের সময় আমি নিয়ে আসি নি নুন বা রুটির মতো কিছু

আমি সুতো ধরে রয়েছি
কান্নার সুতো

আলাদা একটি দ্বীপ রাজ্য
আটা দিয়ে জুড়ে নেওয়া আকাশ আর পৃথিবী
তুমি কি বুঝতে পারছ না আকাশ নড়ছে

আমি একদম দেখতে পাচ্ছি না যাদের 
তারা আমাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ছে আর গড়ে উঠছে শহর

এভাবেই আমি ছবি আঁকি আবলতাবল 
এলোমেলো বিশৃঙ্খলা হওয়ার 
নিগূঢ় আঙুল আমাকে  পৌঁছে দেয় অনুপস্থিতিতে
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না সেই সব নৈঃশব্দ্য 

অপরিচিত আমি  
মৃত্যুকে  বলে রেখেছি
তার প্রাচীন অস্ত্রকে আমি কামড়ে ধরবো 
               













গোলাম রসুল

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন