বিশেষ্য বিশেষণ আত্মকথন
১
ফুটিয়ে ফুটিয়ে দুধ গাঢ় করে বসে থাকে মেয়ে।এককালে
যত খিদে ছিল আমার, লোকে যাকে অভর, রাক্ষুসে, পাশব
বলে গালাগাল দিত। এখন ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত আকাশ জুড়ে।
এখন মেয়েটি আকাশ বিষয়ে কিছু লিখতে পারে।ভাবের
সম্প্রসারণ করে দেখাতে পারে।অথচ সম্প্রসারিত ডেজিগনেশনহীন
এক বিস্তার ,ভাবনার শরীরে কোনো মায়াবী বা সস্তার
পোশাক দিচ্ছে না।
পোশাকের রং, মাপ, স্বচ্ছতা ও দাম নিয়ে বিভিন্ন ভাষার জ্ঞানকোষে
জ্ঞান প্রায় তলানিতে।একসঙ্গে একাধিক সম্পর্কের আবেদন আমি
পাঠিয়েছি মেয়েটির কাছে। অপৌরুষেয় আকারের খোঁজে
সার্চ-অপশনে ক্লিক করেছি আজই।
২
একটা অহর্নিশ তার মালিককে পেতে চায়।বলতে চায়
তাকে আরও ভরিয়ে দিতে।একটা ছোট্ট গাঁদাগাছ যে রকম
অনেক কুঁড়ি পেতে চায়।এই 'আরও' ও 'অনেককে' কতটা
পরিমাণ বা সংখ্যা দেওয়া যেতে পারে তা কি মালিক ঠিক
করবেন? মালিককে সর্বময়, একমাত্র, অসীম ক্ষমতার ব্যাটারি
বলা হবে কি? অহর্নিশ সেসব কিছু জানে না। সে কেবল
আকুলের কাছে মতো হতে শিখছে।
মানকচুর জঙ্গলে ঢুকেছে আফিমের কুয়াশা।সে তার আত্মপরিচয়
কীভাবে দেবে জানতে চায়।ছোটো ছোটো কীটপতঙ্গ, খুব ছোটো কয়েকটি
পাখিও তার কারণ বোঝে না।অথচ মানুষের তাড়নায় আফিম খুব
তাড়িত।সে নিজেও কী কখনও বুঝত নেশার ধরণধারণ কেমন!
একটা জলের ফোঁটা গড়িয়ে যাচ্ছে।পেছনে যে দাগটা পড়ছে সেটা
হাল্কা, না সরল, না রঙিন বুঝে ওঠার আগেই হাওয়া।
৩
উল্লসিত মানুষটি উল্লাস হারিয়ে এখন পড়ে আছে
জনারণ্যের নিভৃতিতে।কীসের যে উল্লাস ছিল তার
মানুষ বোঝেনি। মানুষ কখনও কোনো বোঝা নিতে চায় না।
চতুর্দিকের বাকি চিত্রপট চিত্রকরের ইচ্ছে মতোই আছে
যথাযথ।ছোটো বড় ঘাসের সংসার, যাকে তোমরা বলো
তৃণভূমি, নির্বিকার আছে।সদ্যবিদায়ী বর্ষার ঋণ স্বীকারে
তৎপর।বিভিন্ন সাইজের প্লাস্টিক, হর্ষ ও ধর্ষ মেখে
এখানে ওখানে পড়ে আছে।
উল্লাস হারানো মানুষটির গায়ে এখন কি তবে খানিকটা
বিষাদ দেব? অবসন্ন পায়ের সামনে প্রচুর বিষণ্ণ পাথর।
যদিও জিজ্ঞাসার সুযোগ হয়নি তার পচ্ছন্দের তালিকায়
পাথর কখনও ছিল কিনা।
অদূরে কোথাও আগুন, কেন কে জানে, উল্লসিত খুব।
৪
তোমাকে চিনি না। চিনতে পারিনি। তোমার বিশেষণকে চিনি।
একটি গাছের পাতা কতদূর বর্ণময় হলে প্রজাপতিদের নিরাপত্তা বাড়ে
অনেকেই জানে। তবু ,জানে না এমন লোকও আমাদের প্রতিবেশী হয়।
তোমার সম্পর্কে কিছু জানি বা না-জানি ,যায় আসে না। অথচ জানতেই হবে
তোমার চুলের সম্পর্কে কিছু কথা।জুড়ে দিতে হবে আগে ও পরে ,ছোটো বড়
নানান সরল ও জটিল বাক্যে। নগরবাসীরা দাবি করে।
সোনালী রঙের এক ঘন বিস্ময়, মুগ্ধতাকে সঙ্গে নিয়েছে খুব প্রকাশ্যে। যদি
এর জন্য কারো কোনো পেন্টিংএর আয়োজনে বিঘ্ন ঘটে তবে
তোমার শরণাপন্ন হবো।
৫
সমাজে সকলের মতো আমারও কয়েকজন প্রতিবেশী আছে।
সেই প্রতিবেশীরা ভালো না মন্দ, সরল না জটিল, এসব বিষয়
কখনও আলোচিত হয় না আমার উঠোনে।একটা বকুলফুলের গাছ ,
মঞ্চ ছাড়া কয়েকটি তুলসী, অসময়ের করমচা আছে।
জনৈক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে মোজেইক তুলে ফেলা হয়েছে।
তাদের ভাঙা ভাঙা টুকরোগুলো বাড়ির বাইরে এসে অনাদর
উপভোগ করছে। যে মালিন্য তাদের শরীরে সংক্রমিত হয়েছিল
তারা দ্যুতি দান করছে বাইরের পৃথিবীকে।
আমি এই পৃথিবী সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না।সেও আমার
উচ্চতা, দৃঢ়তা এবং জটিলতা নিয়ে।ভাঙা মোজেইকের সঙ্গে
এখন আমার যা ঘটছে,তাকে ব্যাকরণে সিদ্ধ বলে না। বলে
দুর্গন্ধ ও বীজানু সৃষ্টির আধার।
হে দুর্ভেদ্য, হে ধোঁয়াটে, হে অর্থহীনতা, এসো সঙ্গমের আসনে
দেখা করি পরস্পরে।
৬
রাত এমন বেইমানি করে প্রায়শই আমার প্রতিযোগীর সঙ্গে ।
সেইযে কল্পফুলের গাছ, রূপ-সৌরভ-নম্রতা যার পায়ের কাছে
স্তূপাকার করে ঢেলে রাখা আছে, তাকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মাথায়
বসিয়ে, টেনে আনে আমার ব্ল্যাকবোর্ডে, সাদা অক্ষর করে।
আমি সেই প্রতিযোগীকে ভালোবাসি। তীব্র, অন্ধ, নিঃস্বার্থ, ক্ষুদ্র -
অনেক রকমের হয় ভালোবাসা।তেমন কিছু কেনার জন্য বাজারে
যাইনি।অনলাইনের কেনাকাটাতেও আমার তীব্র অনীহা।এসব
বরং তার কাছে থাক।না পেলে সে মিছিমিছি হিংসেকে গ্রাহ্য করবে।
কল্পফুলের গাছ আমি রোপণ করতে পারি।নির্বোধ, অন্ধ, মন্থরা রাত
আমাকে লোভাতুর করতে চায়।চুরি করার প্ররোচনা দেয়।
শেখাতে চায় মল্লযুদ্ধ।
একদিন সেই বেইমান-রাতকে ডিনারে আমন্ত্রণ করে প্রিয়
কল্পগাছের আপেল খাওয়াব প্রচুর।
৭
নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে।বাংলার দিকেই
সে আসবে। পায়ে পায়ে অন্ধ্র, উড়িষ্যা খানিকটা ঘুরে
অবশেষে।নিম্নচাপ কিংবা ঘূর্ণিঝড়, কেউই কিন্তু
বাংলার পূর্ব পশ্চিম বোঝে না।স্বরাষ্ট্র ,পররাষ্ট্র বোঝে না।
পেতে চায় সম্পূর্ণটুকু।
যে বাড়িটি আমি কখনও দেখিনি, হয়তো সেটা এখনও
তৈরিই হয়নি কোথাও, তার বারান্দায় দাঁড়িয়ে যে এখন
আকাশের দিকে উৎকন্ঠায়, তার ভালোবাসা নিয়েও বাণিজ্য
হয় বাজারে।বিক্রিবাট্টাও বেশ ভালোই হয়।এমনকী
সেই বিষণ্ণ মেয়েটিও, চাপমুক্ত হতে, সেই পণ্যই কিনে খায়
আইসক্রিমের মতো।
আইসক্রিমের সঙ্গে শীতলতা থাকে, মিষ্টতা থাকে, সুগন্ধ থাকে
রঙের বাহারও থাকে বেশ জম্পেশ।
৮
স্পর্শ হবে, এটা ঠিক ছিল আগে থেকেই।আলিঙ্গন হবে,
কথা বিষয়ক দাবা হবে, এও ঠিক ছিল।হয়তো সবই
ঠিক থাকে এরকম আগে থাকতে।কেবল কল্পনা তার
ঠিকানায় গিয়ে বসার জায়গা পায় না।যেখানে থাকার কথা
প্রশান্ত মহাসাগরের, সেখানে হাঁটু-জল বিলও থাকে না।কতটা
দূরত্ব বজায় রেখে রেখে জন্মায় গাছের পাতারা,তা পূর্বনির্ধারিত।
এই প্রাক-নির্ধারণ কী কারণে? যে কারণই হোক, হঠাত্ সে
গাছের ডালে কলম বাঁধার কথা ইতিহাসে উল্লেখ ছিল না।
আপনি আপনার হার্ট-অ্যাটাকের কথা বললেন।সেখানে কী কী
উপায়ে নতুন চলার পথ তৈরি করেছেন ডাক্তাররা, তাও বললেন
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।
বিনয় এবং বিপুল, দুটি বালক।সোনালী ও উজ্জ্বলা, দুটি মেয়ে।
এরা কেউই জানত না, রাস্তায় সেদিন একটা দুর্ঘটনা হবে
তাদের সামনেই।
৯
মিষ্টতা ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। তা যদি কোনো মেয়ে বা ছেলের
গায়ে লাগত, লাগতেও তো দেখি এখানে সেখানে, পথে ঘাটে
প্রায়দিনই, ছবি আঁকা সহজ হয়ে যেত।এভাবেই এক একটা
ছবির জন্য এক একজন চিত্রকর বিখ্যাত শিল্পী হয়ে ওঠে।
সুগন্ধ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পথিককে ডেকে নিয়ে আসে বকুলগাছের
কাছে। তার নিচেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে সেই সব মালা,
যারা গাঁথা হবে লতার প্রশ্রয়ে।
একটা গভীরতর-ভেসে-থাকা মানুষকে ক্রমশ পথ দেখাচ্ছে।
আর সে পথ গর্ভ দেবে ও ধারণ করবে তার নির্বিকার আশক্তি
দিয়ে।ভিজে আনন্দের এতো উষ্ণতা থাকে, যাকে ঈর্ষা করে
যেকোনো উষ্ণতার ধারক।ধারক তো বুঝতে পারে, ধারণ
করার ক্ষমতা তার কতটা কম।
সব দ্রুততাকে আমরা মানুষের স্থিতির মধ্যে ভরে দেব, যেন
শর্করা কখনও তিক্ততার কারণ না হয়।
১০
বাড়িটি জানে তার সম্পর্কে বলা হয় প্রাচীন, ভঙ্গুর আর ভৌতিক।
যেসব পাখি ঘুলঘুলিতে বংশানুক্রমিকভাবে ডিম পেড়ে আসছে
এ বাড়ির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঘুনসির মতো।কাক এবং কোকিল
উভয়েই কালো মেয়েটিকে চেনে। কিন্তু কর্কশ এবং মিঠে ব্যবহারের
সময় ,বাছাবাছি করতে শেখায় বাক্য রচনার ওস্তাদরা।
মেঘলা ও রোদেলা, দুটি দিনের জীবনী পড়ছিল এক মাছরাঙা।
নগর জীবনের অ্যান্টেনায় তাকে মানায় না, সে জানে। তবু
গ্রামের খোঁজে বার হলে, ক্লান্তি তাকে একসময় বিশ্রাম নিতে বলে এখানেই।
সবুজ ও হলুদ, দু রঙের দুটো পাতা, হয়তো একই গাছ থেকে
উড়ে এসেছিল।কেউ ছিঁড়ে, কেউ খসে।তারপর হাওয়া তার
ঘূর্ণির নেশায় ,দুজনকেই একই সম্বোধনে ডাক দিল।সবুজের
ছিল তখনও কিছুটা দেমাক।হলুদের ছিল অক্ষমতা।সাড়া
দিল না কেউই।
১১
কোন খ্যাতি কার গায়ে এসে লেগে যাবে, অনুমিত হয় না।
ঘটনাটা ঘটে যাবার পর, মানুষটা চিনতে পারে, উজ্জ্বলতা
কাকে বলে। কার পোশাকের জন্য কত মাত্রার ঔজ্জ্বল্য চাই
তা নির্ণয় করে গণিত।গণিতকে যদি মানুষ বলো তো, সে এক চরম
উদাসীন ব্ল্যাকবোর্ড।ভ্রান্তি অভ্রান্তির পরোয়া করে না।দুটোই অঙ্ক।
দর্শন বলে একটা শাস্ত্র বহুকাল ধরে রয়েছে এই পৃথিবীতে।
যে তাকে চেনে, যে চেনে না, দুজনই তার কাছে পরিচিত।এই
শাস্ত্রটির মতো কোমল হাড় অন্য কারো শরীরে দেখা যায় না।
অথচ, খ্যাতি ছুঁয়ে ফেলা মানুষেরা তার কাঠিন্য প্রমাণ করতে
শহিদ হয়ে যেতে চায় সহজে।
প্রথম যেদিন তেঁতুল খেয়েছিল মানুষ, কেমন লেগেছিল? চমকে
উঠেছিল? ভয় পেয়েছিল? ঘুম ছুটে গিয়েছিল রাতের? হয়তো।
অথচ স্বাদের কারণে সে ক্রমেই হয়ে উঠেছিল খুব আকর্ষণীয়।
১২
বহুতল বাড়ির ছাদগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাকে
জায়গা দিয়েছে। ছোটো বড় নিয়ে দেমাক বা দীনতাকে তারা
তেমন আমল দেয় না।গ্রীষ্মের দুপুরে,শীতের রাতে কিংবা বর্ষণমুখর
বয়সে তারা গোল হয়ে বসে গল্প করে।
একেবারে নিচেরতলায় কিছু ঘটনা,নিজেদের মতো করে ঘটছিল।
উদ্বেগ, উত্তেজনা কিংবা কিসে-কী-যায়-আসে ,এরা কেউই
প্রাসঙ্গিক হতে পারে না সেখানে।মাউসের ক্লিক সব জায়গা থেকে
একইরকমের রস আনতে পারে না।
হতচকিত হওয়াকে আর তেমন পাত্তা দেয় না প্রশ্ন।সে বোঝে
মানে আর অর্থহীনতার মধ্যে কেবল শূন্যের ফারাক।বাড়ির
ছাদ বলতে তাহলে ঠিক কী বুঝায় ? বুঝিয়ে বলার লোক তেমন কেউ নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন