দেবানন্দ ভট্টাচার্য 






ভোরের খোঁজে

তুমি রূপসায় নেমে যেতে না যেতেই ক্ষমাসুন্দর
নিষ্প্রভ সূর্যও দিনের ইতি টেনে দিল।

ভৈরবকন্যা রূপসা
পদ্মার শাখানদী
ওকে নিয়ে কতো গান কবিতা ও ছবি........
                                      সন্ধ্যা নামে লঘু ছন্দে।

সময় ভেসে যাচ্ছে রূপসার জলে 
একলা ভেলার মতো।
চোখে ঘুম নেই। শেষরাতে একটু যেন পরিশ্রান্ত,
তন্দ্রার ঘোরে তুমিই এসেছিলে!

রূপসার গতিমুখে এক ঝলক সোনালী আলো
                                      ভোরের খোঁজে........!

                                





সোম-গান

আলোয়
অন্ধকার খুঁজে পাইনি। 
যেমন‌ অন্ধকারেও
আলোর চিহ্নমাত্র নেই!

তবে অলৌকিক যাবতীয় কিছু পাওয়া যায়
কবিতার শব্দ-বর্ণে
এখন কোন প্রশ্ন নয়-----
কবিতার সত্য বাস্তবিক বিচিত্রধর্মী হয়। 

জলের আগুন থেকে উঠে এলেন এক বীর্যবান
আদিম পুরুষ! বল্কলের আচ্ছাদনে
বিদ্যুতের দাগ! 

শুদ্ধমনা নারীগণ সোমলতা পেষণ এবং
সমবেত গানে ইন্দ্রের আবাহনে ব্যস্ত

ঋগ্বেদে ঋষি অপালার কবিতা পড়েছি।

                           





কান পেতে রই                  

এক পাত্র তরল
খানিকটা অন্ধকার আর
উপকূলের বালি
মিলেমিশে একাকার। 
সবটুকু জোছনা পরগাছা পাঁচিলে অথবা
আবাসনের অহমিকায় গা এলিয়ে দেয়----দৃশ্যত

এছাড়া আর কোন উপমা খুঁজে পেলাম না।

বর্ধিত নগরায়নের নিচে 
মজা খাল বিল  পুকুর ও নয়ানজুলি
মৃত বক, মাছরাঙা, গুগলি শামুক...... বহুবিধ
মাছের কঙ্কাল
এমন কি বাবলা হিজল সহ শিরিস ও নিম
ওরা ভীড় করে আসে মৃতস্মৃতি সঙ্গে নিয়ে।

ভিজি যোগের মুর্ছনায় কান পেতে  রাখি
সারারাত-----নরম মনের মোম পুড়ে যায়, ‌ঝরে
পড়ে ফোঁটা ফোঁটা!
       
                             




কবিতা সফর             

প্লিজ! কবিতার মানে খুঁজবেন না। বরং একটি
শীতলদিঘি ভেবে নিয়ে এক-পা  দু-পা  তিন-পা
জলসিঁড়িতে নামেন যদি  ..... এই বলছিলাম 
আর কি! তাহলে কী কী হয় দেখুন----

জলসংসার নড়েচড়ে উঠবে।

অনেকগুলো চক্র বাড়তে বাড়তে পাড় ছুঁয়ে
বিন্দুতে শেষ হবে।
জলপোকা  বুদবুদ  শ্যাওলা ব্যাঙাচি  কাদা-পা
আলোছায়া  কাটাকুটি ইত্যাদি  কাছাকাছি
এসে দূরে সরে যাবে।

কিছু কি বোঝাতে পারলাম? 

ভিতর ঘরে ধূপের ধোঁয়া ততক্ষণে গন্ধ ছড়িয়ে
নীল ডানা মেলে দিয়েছে!

অচিরেই আপনার মেধা আপনাকে এই মর্মে
জানিয়ে দেবে : জটিলতার যাবতীয় সহজ
সংক্ষিপ্তসার আর সাব্যস্ত হয়ে যাবে
ঠিক তখনই যে----

এ এক নির্ভুল ও নিখুঁত কবিতা সফর।
                  
                              





যতিচিহ্নের ফাঁকে ফাঁকে               

সারিবদ্ধ কালো কালো পিঁপড়ের দল হেঁটে যাচ্ছে
শব্দও ঠিক কদম কদম এগিয়ে চলে এ রকমই।

যতিচিহ্নের ফাঁকেফাঁকে পিঁপড়েরা শর্করা খোঁজে
এক যাত্রা শেষ হলে পুনর্যাত্রায় শামিল হয়।

একটা লাইনের নিচে আরও একটা লাইন। 
একতারা দোতারা বেহালা বা সেতার---
নানাবিধ সুরেলা যন্ত্রভঙ্গি! অতঃপর
অঙ্গসজ্জায় শব্দবিন্যাস, 
ভাবগাম্ভীর্যে কখন যেন এক অধরা
কবিতা হয়ে যায়। হঠাৎ এমনও যদি‌ হয় :

কবিতার মহানুভব আয়তনে প্রবল ধস্ নামে
ভয়ঙ্কর ও লাগাতার বিস্ফোরণ!  দুমড়েমুচড়ে
ভেঙে যায় বসতির হাড়পাঁজরা। স্বপ্ন দেখার
থ্যাঁৎলানো চোখ ; যেমন যেভাবে
গুঁড়িয়ে যেতে দেখি প্রায়শই।
   
                              





এক অলৌকিক গল্প                  

এসরাজ বাজিয়ে শোনাচ্ছেন অচেনা অজানা 
কোন এক আত্মমগ্ন শিল্পী।পুরোনো বাড়িটার
ইটের কঙ্কালে, বেপরোয়া বটের শিকড়বাকরে 
কাঁপন জেগেছে। চতুর্দশীর চাঁদেও 
ঘোর লেগেছে। নক্ষত্র মন্ডলী আপন মনে
আলপনা এঁকে যাচ্ছে।
এই সন্ধ্যা মন্ত্রমুগ্ধ  এক বিরল স্থিরচিত্র যেন। 

যে কোন গান বা সুরের অন্তরালে বিষাদের
আভাস ও দু-ফোঁটা চোখের জল........ ‌‌‌‌‌‌‌যেমন
মোমদহনের স্মৃতি হয়ে থাকে।

পরমেশ্বর! আসুন আমার ঘরে। এই ব্যতিক্রমী
সন্ধ্যায় এসরাজ----আহা ! অভাবনীয়!

গোলাপি পেয়ালা!  মায়াবী চুমুক!  
তরল তলানিতে জন্মান্তরের অলীক ভাষ্য ;
এসরাজ একটানা বেজে চলেছে।
পরমেশ্বর ও আমি-----দুটিতে নেশায় বুঁদ ও
বেহুঁশ! একটি অলৌকিক গল্পেও ঈশ্বরের কোন
ভবিষ্যত খুঁজে পেলাম না।
                              





ঋতু-মূর্তি              ‌‌‌‌‌‌‌‌‌             

নয়ানজুলির তলানি জলে এ মুখটুক ধুয়ে 
এইমাত্র উড়ে চলে গেল ছায়াপাখির দল।
নীল ক্যানভাসে গায়ে ফুঁ দিয়ে 
অলস ভেসে যাচ্ছে দখিনা মেঘ।
শিমুল পলাশ ঢেলে দিচ্ছে পর্যাপ্ত লাল।

এমন তাৎক্ষণিক আসা যাওয়ার কোন ছবিই
জলে বা দর্পণে আগাম জানানো থাকেনা।
ছায়াপাখিরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই  
অতিক্রম  করে যাবে দ্বিতীয় ব্রহ্মান্ডের সীমা!
ওদের গতিবিধি পাঠ করে জেনেছি----   

ঋতু-উপাদানে নয়নাভিরাম মূর্তি গড়া সম্ভব!
সম্প্রতি আমি এই সব নিয়ে খুবই ভাবিত 
সচল থাকতে থাকতে কাজ শেষ করতে হবে।  
        
                                





নিজের সঙ্গে কথাবার্তা                  

মৃত হাঁস  ভেসে যাচ্ছে জলপুকুরে!

নিজের সঙ্গে সব ধরনের কথা নিয়ে কবিতা হয়ে
উঠতে পারে। সংলাপে কান রাখি। রপ্ত করি
মঞ্চের আদবকায়দা। মান্য করি সুধী দর্শক......!

আলো জোরালো হয়। কখনোবা কমেও আসে
মিউজিকের তালে তালে শরীর দুলিয়ে নেওয়া :
একক অভিনেতার মুখ শুধু আলোকিত অথবা
বৃত্তাকারে মধ্যমঞ্চে কেন্দ্রীভূত।

মৃত হাঁস দৃশ্য থেকে বিদায় নেয়নি। 

আজ এই বিরলতম এবং আত্মমগ্ন রাত প্রকৃতই
সোম-সুধারসে বঞ্চিত।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন