এ্যালেইনা হোসেন-এর কবিতা






গ্রীবাহরণ

আমার সব প্রিয় কিছু কিভাবে যেন গলায় আটকে যায়। অথচ এমন নয় যে তারা কাঁটা জাতীয় পদার্থ 

যেমন একটা পথ কে বললাম তুমি নফসে সাঁতরে আসো পিচঢালাইয়ের দাসত্ব ছেড়ে
সে সমস্ত সুনামিপ্রেমী সমুদ্র নিয়ে গলার ভেতর দুলতে লাগলো অবিকার

একটা গানকে বললাম এভাবেই বেজে যাও হৃদয়ের রোমহষর্ক রাগিনী 
সে তার নিজের লিরিক ছিঁড়ে ছিঁড়ে গলায় পুরতে লাগলো নাশপাতি তুলোর মতো

প্রেমকে বললাম আগামী শুনানিতে এসে আমার পাঁচ খুনীর জামিন রদ করো
সে মস্ত বড় সব অপরাধী প্রেমিকদের জীবনী লেজে কন্ঠনালী প্যাচায়ে শুরু করলো ওঠানামা!

এভাবে সব প্রিয় কিছু আমার গ্রীবারে মনে করে একটা বাসযোগ্য নরক
আর এদের উগরাতে গেলে বের হয়ে আসে জলবন্ধ্যা আমিত্বের হাজার রকম দ্রবণ







মনুষ্যবাতি

রোদ বুঝে হাঁটতে বেরোই রাতে। বালিশের কভারের ভেতর খোলা চিঠি। কার কাছে? তবে ধন্যবাদ জানাই, প্রাপকের কাছে পিয়নের পিয়ানো বাজানোর মতো ঠিকানা লাগে না বলে...
আর অবশ্যই হাঁটি তখনই, যদি রাতের সবটুকু বাঁধানো থাকে মিডল ক্লাস টাইলসে। কারণ সেগুলো থেকে রোদের ভাপ সরবে না একদমই; এভাবেই রাতের এক ঢিলে দুই পা জীবিত হয়। 

এক সকালের বিরহ সরবত থেকে চিনি আলাদা করে তাতে ছেড়ে দিলাম হিপনোটিজমের পয়সা...তারপর নিজেই টসের মতো লাফিয়ে উঠে নেমে আসলো-- আত্মার উচ্চতর স্রোতের মৎসকন্যা হয়ে...আমরা তারপর খুব সাঁতার কাটলাম লাঞ্চের কিছু আগে। তারপর আমরা তুলনা করলাম রোদের আর মোমবাতির আর বুঝতে চাইলাম রোদকে সুতোয় বাঁধা গেলে তাকে কি সহজে ফুঁ দিয়ে নেভানো যেতো কি না।

রাতের অসীম চতুর্ভুজ সংখ্যায় রোদের লেগে থাকা ভাপের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাই। বালিশের কভারের ভেতর থেকে সেই হাঁটা পর্যন্ত চলে যায় পিয়নের পিয়ানো। রোদ কেউ নেভায় না, অথচ আমি রাতের টাইলসগুলো পায়ের নখ দিয়ে খুটে খুটে দেখি যেনো মোমের দলা উঠে আসবে শরীরে, আর প্রাপকের ঠিকানা কাটা সুতোয় আমি লেগে যাবো মনুষ্যবাতি জ্বালানোর জন্য






স্মোকি সোওল

ছোটবেলায় আব্বুকে দেখতাম ধূমপান করতে আর আমাকে মজা দেয়ার জন্য ঠোঁট গোল করে ধোঁয়া ছাড়তো। গোল গোল ধোঁয়ার মাঝে আঙুল রেখে আমি খেলতাম আর আব্বু আবার ধোঁয়া ছাড়তো। যেখানে অন্য বাচ্চাদের আকর্ষণ ছিলো সাবান ফেনার ফেলুন, আমি তামাকের কটু গন্ধে ধোঁয়াবৃত্তের অপেক্ষায় থাকতাম। বারবার তাদের আকৃতি নষ্ট করবো আর বারবার তারা ফিরে আসবে একটা শিশুর মায়ায় নষ্ট হবার জন্য...আব্বু বলতো আঙুল দিয়ে নষ্ট কোরো না। ওই গোলটাকে নিজের মতো মিলিয়ে যেতে দাও। আমিও পরে বুঝলাম যে আঙুল দিলে তাদের উড়ন্ত সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে...

একসময় আব্বু যখন আরো বড় হলো, আর আমি আরো ছোট হয়ে গেলাম, আমি খুঁজতাম এমন একজন (প্রেমিক নাকি জানি না), যে আব্বুর হার্টে পরা রিঙের মতো আমার মধ্যে বহন করবে স্বাভাবিক রক্ত ও সচেতন সুবাস...আর এরকম খুঁজতে খুঁজতে নিজের বাবার মায়াতেই ওই ধোঁয়ার মতো গোল গোল মিলিয়ে গেলাম নিরাকার তফাতে...


৯ই জানুয়ারি, ২০২১

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন