অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদে –বাসুদেব দাস
রাজীব বরা-র কবিতা
১
ইরেজার
ভূচিত্রাবলীতে অদ্ভুত কাটাকাটি ।বাঁকা-সোজা রেখা এপাশ-ওপাশ
ভুল করি মানচিত্র ভূগোল-শরীর।এখানেই ছিল কি নিয়তি পাখি
গাছটা এঁকে উঠে দেখি,ডাল-পাতা আছে গোড়াটা নেই
মুছে রাখি সযতনে ভুল ইরেজারের আবিষ্কর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে
কীভাবে ভাগ করি পৃথিবী-ভূগোল কোথা দিয়ে আঁকি
শরীরটা এখানে,ধ্বনি সেখানে।জন্মেছি যেখানে,মরিনি সেখানে
তিনি যেখানে ছিলেন সেখানে নেই। যেখানে থাকার কথা ছিল
সেখানে জায়গা নেই। যে সভ্য ছিল সে বিস্মৃত। যে অসভ্য ছিল
সে সাধু। যে মরেছিল সে জীবিত। যাকে মেরেছিল সে অমর।
হকিং! হকিং! পৃথিবীটা কার?
আমরা কতদিনের জন্য ব্রহ্মাণ্ডের? ব্রহ্মাণ্ডটা কতদিনের জন্য আমাদের
কীভাবে শোধরাব লক্ষ-কোটি ভুল
অসমর্থ আঙ্গুলে ইরেজার
সভ্যতা এবং ইরেজারের সম্পর্কটা সেখানেই
ভুলগুলি মোছার জন্য শোধরানোর জন্য অপূর্ণকে পূর্ণতা দানের জন্য
বর্তমানকে মাড়িয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটা নির্ভুল আঁক
তথাপি সভ্যতা ভুলের ভাঁড়ার,অসমর্থ ইরেজার
শ্যামপুরী কাগজে শিশুর তেল-কালির দাগ
শক্তি পৌরুষ যোগ্যতার শতকোটি খেলার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে
অদেখা বায়ু,দেখা তরঙ্গ,প্রাণের প্রাণে অসংখ্য কাঁকড়ার-বাচ্চা
জীবনটাও ভুলেরভাঁড়ার।ইরেজারে হয় না স্মৃতি নাশ
ছাইদানীতে মন-ভূগোলের বিবর্ণ পাতা।একটা দুটো…
২
হাওয়াই স্যাণ্ডেল
বর্ণনাধর্মিতা ভালো কবিতা নয় জেনেও আসুন
সেধরনের দুটি স্তবকে চোখ বুলোই। ভালোর খোঁজে বাজারে
মাছ বা সবজি কিনে একবারও আপনি ঠকেননি?
ঠগাও সহজে খেতে পারা প্রপঞ্চ। টোপ দেওয়া নীতিতে ঝুলে আছে
রাজনীতি।
শিকনি না থামা দিনে হুক ছেঁড়া হাফপেন্ট পাটের জরিতে বাঁধলাম।
ফিতা ছেঁড়া হাওয়াই জোড়াতালি দিয়ে কত পরলাম।দুপয়সা যাদের আছে
জরি বেঁধে স্যাণ্ডেল পরতে দেখলাম না।কবিতারও বিকল্প দেখলাম –পুরোনো হাওয়াই
কেটে চেয়ারের খুরায় খড়ম পরালাম।ঘিরে নিলাম,পরলাম,দেখলাম না,পরালাম
-শব্দ মিলের এই খাটনিতে আপনার শব্দ-উপেক্ষার দরজায় খটখট করলাম।
আমার কবিতা ঘাসের জেলুক-আপনি ছেড়ে দিলেও আমরা ছাড়ছি না।
হাওয়াই আপনার বাস্তব।বাস্তবের সাক্ষী হলেও পোশাকি-সভায় স্থান নেই।
জায়গা দিলে নিঃস্ব বলে লুকিয়ে ঘৃনা করে।চোখ পাকিয়ে বলে-ধন-ধান
ঢাকার জন্য হাওয়াই উত্তম উপায়।সত্যি কি? কবিরাও নাকি আজকাল
দ্রষ্টা নয়।আপেলটাকে সামনে রেখে নিউটনের আত্মাকে কামড়ে চিবোয়।
কাঁধে থলে আর হাওয়াই স্যাণ্ডেলের কবিকে ও ফোরজি গ্রাম থেকে তাড়িয়ে
শহরে ছেঁচড়ে নিয়ে যায়। কবিতাও বাইক স্টান্টের মতো।তার জন্য
গ্রামে পথ-ঘাট নেই।
শিহরণ লাগে।কবিতায় ও শিহরণ। জীবনতো –জীবন যদিও বাইক নয়।
উৎকণ্ঠার অন্তে চোখের জল।ছেঁড়া স্যাণ্ডেল কে পরে? মানী না ধনী?
খড়ম আর স্যাণ্ডেল পরা চরিত্রগুলি ছিল জুতোর নিচের গল্পে।
জুতোগুলি আমাদের দিয়ে জুতোর মালিকেরা চলে যাবার পরে
জুতোর পথ আমরাই বাঁধিয়ে দিয়েছি।স্যাণ্ডেলের পথ আমরাই খুঁড়েছি
কে কোথায় হাঁটবে স্থির করেছি।জুতোর সভায় স্যাণ্ডেল নিয়ে আখড়া করেছি।
টম মেদক-এর কবিতা
১
ধর্ম
পুরোনো কালের মন্দিরটিতে এই সেদিন চোর ঢুকল
আর সর্বস্ব লুটে নেওয়ার পরেও
নির্বোধ জনগণের মন থেকে ঈশ্বর কিন্তু বহিস্কৃত হল না
এই হাত ঈশ্বরের হাত' এই পা ঈশ্বরের
শরীর এবং মন ও, চোর ও ঈশ্বরের
ঈশ্বর রক্ষা কর্তা, ঈশ্বর চোর
দেশের প্রতিটি মন্দিরে চোর প্রবেশ করে এবং
সর্বস্ব লুটেপুটে নেয়
জরাজীর্ণ মন্দিরটিতে এখন ভক্তের সমাগম
এমনিতেই কম
অবশ্য বাঁদরের দল বেড়েছে
মহাত্মার তিনটি বাঁদরের একটি বাঁদর ও
দেখতে পাওয়া যায় না।
২
কম্পাস
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ– বাসুদেব দাস
তিনি বেঁচে থাকতে একবারও মরতে পারলেন না
ইনিই আবার জন্মই পেলেন না
উত্তরে না দক্ষিণে কোন দিকে
মনের কম্পাসে হল ভুল
ইস, আমার জন্মের বয়সের চেয়ে
আমার মৃত্যুর বয়স বেড়ে গেছে ক্রমান্বয়ে
আমি আর নাই সেখানে বা এখানে
আমার স্থিতি শূন্য
বর্তমানে বিমুখ মনে কখন এলাম চলে
নিজের ছায়ায় ভিন্ন রঙে আঁকাবুকি করে
দুটো প্রিয় কবির কবিতা আউরে
সূর্যকে দিলাম বিদায়
কাঁকড়ার গর্তের সূর্যকে
আমি কি অলীক স্বপ্নেই বাস করছিলাম
যা সম্ভব ছিল কেবল স্বপ্নে
পূর্ব-পশ্চিমে চারদিকে
থাকতে পারলাম না কোথাও
যেখানে আমার জন্মের বয়স অনুপাতে
আমার মৃত্যুর বয়স বাড়ে দ্বিগুণ
নীলাক্ষী চলিহা গগৈ-এর কবিতা
১
ক্যালেণ্ডার
কালো ফোঁটা নিয়ে
তারিখগুলি দাঁড়িয়ে থাকে
শোকে ম্রিয়মান হয়ে।
মাস খসে পড়লেও
একটু একটু করে খসে রঙ
বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত।
কুয়াশা দূর না হওয়া
ধোঁয়াশা চোখে খুঁজে বেড়ায়
কোথায় বসন্তের গান
অগ্রহায়ণের সুঘ্রাণ?
ফুটে উঠা ফুল
নৃ্ত্যরতা নদী
কিম্বা উপত্যকার স্বপ্নও
সুখী না করা
রূপকথা হয়ে
খসে পড়ার পরেও
দেওয়ালে দাঁড়িয়ে থাকে
কাল।
একটা তীক্ষ্ন গজাল।
২
তৃষ্ণা
কে খুঁড়েছিল
গ্রামের কুয়োটা?
কে পুঁতে ফেলেছিল?
তৃষ্ণা পেয়ে পেয়ে
কুয়াটা শুকিয়েছিল
নিশ্বাস নিতে না পেরে
চোখ বুজেছিল।
সেইযে
কাকগুলি কুয়োটার
পারে বসেছিল।
সভা পেতেছিল।
কোথায় আছে পিঠা-পরমান্ন?
উড়ে যাবার আগে
জলে মুখগুলি দেখেছিল
আর কলরব করছিল ।
সাগরের মতো ছিল স্বচ্ছ।
আকাশও ছুঁয়ে দেখেছিল
আকাশের চোখের জল পড়ছিল
তখনই নাকি কুয়োটা মজেছিল।
কাকগুলি উড়ে গেছিল
টক মিষ্টি অন্য এক পৃথবীতে
আকাশ উপচে দিয়েছিল
ভরা না ভরা অনেক জলাশয়।
পারে বালতিটা পড়েছিল
তখনই তুলে রাখা
আধা বালতি জল নিয়ে
জলগুলি লাল হয়ে উঠেছিল
মরচে ধরা বালতিটাতে
ছাপ লেগেছিল
একটা পিপাসিত হাতের।
বালতিটা পড়ে ছিল
পড়েই ছিল
আধবুক জল নিয়ে
আধমরা গ্রামটির জন্য।
দিব্যজ্যোতি বরা-র কবিতা
১
দুঃখ
যে দুঃখ তুমি দিলে
তাকে ভোলার জন্য
আরও অল্প দুঃখের প্রয়োজন
যে ভুল আমি করলাম
হৃদয় অপচয় করে তোমায়
তা শোধরাবার জন্য
আরও কিছু ভুল করার প্রয়োজন
হৃদয়ের সঙ্গে মুখোমুখি না হয়ে যে
চালনা করে তাকে শরীর
বুকের ভেতরে ফুল যদি ফোঁটে নি
চোখের জলের কাঁটায় বালিশের ওয়ার
লাল হয়ে যায় আর
দাগ থেকে যায় ক্লেদাক্ত অতীতের
ভুলে যাওয়া গান,তোমাকে বললাম,মনে করিয়ে দিও না
আমার খাণ্ডব দাহে,তুমি জান,হাড় আর ছাই পাবে
যে দুঃখ তুমি দিলে
তাকে ভোলার জন্য
আরও কিছু দুঃখের প্রয়োজন
পুঁতে রাখা কঙ্কা্ল থেকে মানুষ হওয়ার জন্য
তোমার হাতে আমার মৃত্যুর প্রয়োজন
২
দুঃখ কর না
দুঃখ কর না,দুঃখ করনা
জনগন খেতে পাবে দুর্ভিক্ষ হওয়ার পরে,দুঃখ কর না
শিক্ষক বেতন পাবে আত্মহত্যা করার পরে,দুঃখ কর না
পুলিশ আসবে রাস্তায় বলাৎকার হওয়ার পরে,দুঃখ কর না
ঘোষখোর,দালালরা শাস্তির সম্মুখীন হবে নরকে,দুঃখ কর না
শান্তি স্থাপিত হবে দেশ শ্মশান হওয়ার পরে,দুঃখ কর না
দুঃখ কর না।
ধুতুরা গুটি খাওয়
জ্যোতিরেখা হাজরিকা-র কবিতা
১
গোপনীয়তা
সমস্ত সুন্দরতার আড়ালে থাকে গোপনীয়তা
গোপনীয়তাই কানে কানে বলে যায় সুখের গোপন মন্ত্র
অথচ জেনেও জানিনা চিনেও চিনিনা কোথায় আছে সেই সুখের উৎস
যা খুঁজছি তা পাওয়া পর্যন্ত গোপন করি একান্ত নিজের কিছু অনুভব
আর একদিন সেই পথেই নেমে আসতে পারে প্রাপ্তির মুকুট পরে
মনে মনে যা খুঁজে বেড়াচ্ছি
আর কখনও?
নামতে পারে হতাশা
ভাঙ্গতে পারে দুপুরের স্বপ্ন
সমস্ত ভাবনার প্রস্তাবনায় থাকে গোপনীয়তা
সমাপ্তিতে উন্মোচিত হয়ে ফুলে উঠে ধীরে ধীরে
নিজেকে ভালোবাসি বলেই আলগোছে সাজাই সকাল-বিকেল মনের
পদুলি
গোপনীয়তা গোপনে আনে ভালোবাসার সাত রঙ
গোপনীয়তা গোপনে সঞ্চয় করে জীবনের সর্বোচ্চ রহস্য
হঠাৎ একটা ভাটিয়ালি সুর এসে বুকে ধাক্কা মারে
ডঁরিয়লিত থেকে থেকে ফুঁপিয়ে উঠি খোঁজে খোঁজে
অল্প হাসি অল্প অশ্রু অল্প ভালোবাসা
গোপনীয়তার উৎসভূমিতে যাবার একটাই পথ
জ্ঞানের বিস্তৃতি –জীবন যার পাঠশালা
নিজেকে ভালোবাসতে শেখার একটাই কৌশল সকাল-বিকেল পাখির
কাকলি
এসো সেরকম অনুভব করি
কোথায় আছে গোপনীয়তার
চৌম্বকত্ব এই পৃথিবী্তে…
টীকা-
পদুলি-মানুষের বাড়িতে প্রবেশ পথের সামনের ভাগ।
ডঁরিয়লি-দূটো পাকের মধ্যে থাকা নদীর সোজা অংশ
২
সীতার গীতিকা
পথে ঘাটে কদাচিৎ কোথাও থাকে একজন প্রেমিক রাবণ এবং
সত্যে প্রতিষ্ঠিত বলে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ছদ্মবেশে ঘরে ঘরে থাকে একেকজন রাম
ধীর-স্থির,শান্ত-শিষ্টের ভুয়া পোশাক পরা রাম এবং
রাক্ষসের সমস্ত লক্ষণ নিয়েও চূড়ান্ত প্রেমিক রাবণের যুগে যুগে সংঘাত
যুগে যুগে সংঘাত প্রেম এবং প্রতিহিংসার
বৈধ এবং অবৈধের
আর সীতা?
এভাবেও তো একবার আমরা সীতাকে ভেবে দেখতে পারিঃ
একটি ঘরের একটি বিলাসি আসবাব না ক্রমশ পুরোনো হয়ে আসা
একটি আলমারি,একটি পুরোনো সোফা –যাকে ফেলতে গিয়েও ছুঁড়ে ফেলতে পারি না
যার সমস্ত প্রয়োজন শেষ হয়ে এসেছে অথচ উপেক্ষা করা যায় না
নিজে থেকে মৃত্যু এসে স্পর্শ না করা পর্যন্ত
মনে করা হল –
আজকের সীতা লাজুকিলতা নয় –ছুঁলেই মূর্ছা যাওয়া
রামের অগ্নি পরীক্ষর তুলাদণ্ডে বারবার উঠায় কিসের গরজ সীতার
কতটা প্রেম বুকে থাকলে সইতে পারে রামের সমস্ত বঞ্চনা
আজকের সীতা তা ভালো করেই জানে
আজকের সীতা বিনা বাক্যে পরে না বক্লল,নতশিরে মানে না স্বামীর সঙ্গে বনবাস
মায়ামৃগের মোহে পড়ে বন্দি হয় না রাবণের অশোক বনে
আজকের সীতা হাতের তালুতে মেপে নিতে জানে প্রেম এবং প্রতারণার দুটো মুদ্রা
হে বিজ্ঞজন,আপনাকে জিজ্ঞেস করছি –
এধরনের মানসিকতার সীতাকে গ্রহণ করবে কি সমাজ?
আজকের রাম বারবার সীতাকে জন-অরণ্যে ত্যাগ করতে পারে,কোনো দোষ নেই
আজকের রাম বারবার পদাঘাত করতে পারে সীতার প্রেমাঞ্জলি,কোনো খেদ নেই
আজকের রাম বন্ধ করতে পারে সীতা অযোধ্যায় ফিরে আসার সমস্ত পথঘাট,সমাজ অন্ধ
আজকের রাম বারবার করতে পারে সীতার সততার অগ্নি পরীক্ষা,সমাজ নীরব দর্শক
আজ রামের কাছে সীতা নয় প্রেমের প্রতীক,কেবল স্থূল যৌনতা-
এটা দিনের আলোর মতো সত্য
নারীর যোবন কেনার জন্য চাই কেবল অর্থ-প্রাচুর্য
পথে-ঘাটে নারীর দুদিনের প্রেম কেনার জন্য চাই কিছু যশ-নাম
আর কিছু সামাজিক স্বীকৃতি
আর সেইপথে রামের জীবনে যে নারী আসবে
সে কি সীতা হতে পারে?
রাবণের প্রেম সত্যি-সীতাও জানত সে কথা
নাহলে কি অযোধ্যায় ফিরে এসে আঁকতেন রাবণের ছবি
এবং রামের ছলনাকে বারবার প্রেম বলে ভুল না করলে
সগর্ভা সীতার বনবাস হত কি?
রামের সঙ্গে সীতার সম্পর্ক প্রথম থেকেই ছিল ভুয়া ,হরধনু ভাঙ্গার নামে কেবল প্রহসন
তাতে প্রেম ছিল না,ছিল সামন্তকে হারিয়ে জেতার আনন্দ
যুগে যুগে নারীকে সীতার সহনশীলতার পাঠ শেখানোর জন্য অগ্রণী সমাজ জানে কি
আজ সেই রাম ও নেই ,অযোধ্যাও নেই…অঅ
মানসী বরদলৈ-এর কবিতা
১
সময়
সময় জানেনা
মানুষের সুখ-দুঃখ আশা আকাঙ্খার কথা।
যেভাবে সূর্য জানেনা চন্দ্রের কথা।
তবু যেন
সময়ের সঙ্গে মানুষের একটা বোঝাপড়া আছে
কারণ,
সময় মানুষকে
দিয়ে যায়
বলে যায়
নিয়ে যায় এবং
তুলে রেখে যায় উচ্চ শিখরে।
সময়ের গতিময়তায়
মানুষ স্বপ্ন রচনা করে
সারকে মাটি করে
রক্তকে জল করে।
জল হয়ে যাওয়া রক্ত
সময়ের বুকে
মানুষ সাজিয়ে নেয়
আকাঙ্ক্ষার জীবন।
কারুর জন্য দুঃসময় হয়
অনাকাঙ্ক্ষিত হয়
ধূসর হয়
তাম্র বর্ণের কিম্বা
ছাই বর্ণের হয়।
এভাবেই পার হয়ে যায় সময়
প্রতিটি মানুষের…
গতানুগতিকতায়
অবধারিতভাবে।
সময়ের শৈলীকতায়
কর্ম এবং ধর্মের নিপুণতায় অমরত্ব লাভ করে
মানুষ রেখে যায় নিজের স্থিতি
অনাদি অনন্তকাল পর্যন্ত
যেখানে খোদিত হয়ে থাকে
সময়, চিরস্থায়ী হয়ে।
২
সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন
তোমার মতোই ছিল
আমারও একটি বর্ণময় পৃথিবী
আকাশ ছিল
অরণ্য ছিল
আর ছিল
মানুষ থেকে মানুষ পর্যন্ত
আন্তরিকতা গড়ে নিতে পারা
এক সুস্থ মানসিকতা!
আকাশে তারার মেলা ছিল বলেই
স্বপ্ন ছিল হৃদয়ে
অরণ্য ছিল বলেই
আকাঙ্ক্ষা
কিলবিল করছিল
মানবতাবোধ ছিল বলেই
ছিল ভালোবাসার অবকাশ।
আর এখন…
মানুষের শক্তির প্রতিযোগিতার পরমাণুর
অস্ত্রের প্রতিফলনে হামাগুড়ি দিয়ে গুনছি
মৃত্যুর ক্ষণ।
যদিও বা মানুষের প্রগতি আজ চন্দ্রকেও করেছে
স্পর্শ!
তবু যেন মানুষ ফিরে গেল
আদিমতায়।
ফিরে যাওয়া মানুষের শক্তিতে আমি যেন আজ
মেরু ভাঙ্গা একজন বিকলাঙ্গ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন