অর্ঘ্য দে-র গদ্য
গানের খেয়া
"সব দিবি কে সব দিবি পায়, আয় আয় আয়"...
নিঝুম হচ্ছে হৃদয়পুর। হেলেদুলে একে একে মিলিয়ে যায় টোটো গাড়ি। মৃদু বাসন্তী হাওয়ায় সারেঙ্গির রেশ, যেন কত যুগের মেদুরতা। কিছু পিঙ্গল পাতা ঘুরপাক খায়, পতন উন্মুখ। আমাকে ছুঁয়ে যেতেই কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসন্তবৈরী ডেকে উঠল। বুঝি কোনও ঝিঁঝিট-বাউলের পূর্বাভাসে। যে বাউল জানে সব কিছু দিয়ে নিঃস্ব হাতে ফিরে আসতে, কন্ঠে কড়ি-কোমল নিয়ে আবার হারিয়ে যেতে ঋতুচক্রে। যতদিন গান আছে মাটির ঘ্রাণে, মাটির টানে। আমাকে ডাক দিয়ে যায় কোমল নিষাদে। বসন্তবিলাপের মতো সেই ডাকের ভিতর খুলে যায় আমার জন্মান্তর স্পষ্টতর হতে থাকে পূর্বাশ্রম। আমার চোখে স্রোত অথচ শরীরে সময়ের বাঁধন। আপাত ভালো থাকার পাপড়ি ঝরে যায়। জেগে ওঠে অপরিমেয় বিষাদ।
ঝিঁঝিট-বাউলের পায়ে দেয়া হলো না কিছুই! রুপোলি হয়েছে রাত। স্বর্ণরথের আশায় বসে থাকি শূন্য পথে, বোল ওঠে কাহারবার। পুরনো চিঠির ঝাঁপি খুলি। হলদে চিঠির ভিতর থেকে কিছু মথ বেরিয়ে আসে। ওদের আর প্রজাপতি হয়ে ওঠা হল না! ভিতর ভিতর বেড়ে চলে রিক্ততা। চিঠির ধুলো ওড়ে, বসন্ত চলে যায়। পলাশের ডালে রাত জাগে থমথমে চাঁদ। মরমী হাওয়ায় হিল্লোল, শ্যামলঘুঙুরের রিনিঝিনি। আলোছায়ামাখা প্রান্তরের ওপার থেকে ভেসে আসে ―"সব দিবি কে সব দিবি পায়, আয় আয় আয়"...
অপূর্ব অপূর্ব অপূর্ব!
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন