জাহাঙ্গীর আজাদ-এর কবিতা








শব্দদ্রুম 

মানব ঘুমিয়ে গেছে
আঁকড়ে ধরে বিড়ালীর হাত।
ঘুমহীন করোটিতে
কবিতার ঘুণ নিয়ে
মানবীটি জাগে নীল রাত।

কিছু পাখি রাত জাগে
এটা ইনসমনিয়া নয়।
মানব আর বিড়ালিও
ঘুমের খোঁয়াড় থেকে
বহুদূরে বুনে যায় স্বপ্নের ক্ষয়।

শুধু এই মানবীকে
ঘুণপোকা খুঁটে খুঁটে খায়।
পোকাখাওয়া প্রতি রন্ধ্রে
এক একটি শব্দ পুরে
তবুও সে পঙক্তি সাজায়।






নিত্যবৃত্তের পাখিরা 

তোমার ভেতর লুকিয়েছিলো স্রোতস্বিনী নদী
লুকিয়েছিলো উথলে ওঠা জোয়ার ভাটার টান
শুক্ল কৃষ্ণ চন্দ্রকলায় ভাঙা গড়ার নিত্য ব্যাকরণে
কেউ দেখেনি লুকিয়ে থাকা সরল অভিমান

লুকিয়েছিলো সাতটি আকাশ, আকাশভরা নীল
নীল পায়রার ঠোঁটে ছিলো লুকোনো ধানশিস
মেঘ-বিকেলে নীল ময়ূরীর নাচের মূদ্রাগুলো
তোমার বুকের সঙ্গোপনে জমতো অহর্নিশ

পোড়োবাড়ির পোড়োবাগান, তার এক কোণের ঝোপে
কেউ দেখেনি অপরাজিতা, একটি নোটন কুঁড়ি
জলে হাওয়ায় রৌদ্রছায়ায় কোন্ আঙুলের ছোঁয়া
কাঁপিয়ে দেয় অস্তিত্বের নীল নীল নীল সাতশো পাথর নুড়ি

সকল গোপন এবার এলো পাদপ্রদীপের আলোয়
হলুদ ফুলটি ফুটছে খোঁপার বিশদ উঠোন জুড়ে
দ্বিধার পাঁচিল উপড়ে ফেলে চাতক পাখির ঠোঁটে
তৃষ্ণার জল আসছে নেমে সকল আকাশ ফুঁড়ে







মেঘমল্লার 

মধ্যরাতে মেঘের ডম্বরু
উঠবে বেজে নিঝুম নীপবনে
সে দু'জনের কারুরই নেই বনের ধারে বাড়ি
একের ভিজবে জামাজোড়া, দোঁহার ভিজবে শাড়ি

পুরাকালের খরায় পোড়া জমি
কেউ ভাবে নি, সেই মাটিতে উথলে ওঠবে রজস্বলা পলিমাটির স্তর
চমকে ওঠবে বিরান কুমোর-পাড়া,
উড়নচন্ডি কোন্ সে ভাস্কর
রাধা-মাধব-মূর্তিতে প্রাণ জাগায় সয়ম্বর

ঝড় ওঠবে, ঝড় থামবে, নিঝুম হবে পাড়া
নিশিপোকা বিস্রস্ত ঘুমিয়ে পড়বে
জাগবে আবার মধ্যরাতে, যখন পড়বে মেঘমল্লারে সাড়া

একের থাকবে ডাকাতিয়া বাঁশি
দোঁহার আছেই প্রশস্ত তানপুরা
এক মোহনায় তুমুল যুগলবন্দী
দুই বিপরীত সংরাগে শীৎকারে
তবুও কি হয় চিরকালের সন্ধি?

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন