দেবানন্দ ভট্টাচার্য--এর কবিতা
হরপ্পার নগ্নিকা
শরীরের অভ্যন্তরে প্রকাশ্যেই অজ্ঞাতবাস
কঙ্কালের-----জানি, তবে চিনি না। দর্পণে
চিহ্নমাত্র নেই। জন্মপত্রিকায় এর কোন
উল্লেখও নেই।
অনিদ্রার ক্লান্তি ও আচ্ছন্নতায়
করোটির নড়াচড়া, হাড় পাঁজরার অনুরূপ
শব্দ অবশিষ্ট তন্দ্রার সুযোগটুকু
কেড়ে নিয়ে যায়।
চাঁদ যেন প্রাচীন এক মৃত মুদ্রা----চারদিকে
সিন্ধু সভ্যতার পুরু ধুলো।
ভগ্ন হরপ্পানগরী থেকে
এইমাত্র বেরিয়ে এলেন পাথুরে নগ্নিকা
সর্বাঙ্গে বিবিধ অলংকার!
স্বপ্নভূমি
কাছাকাছি কোন নদী নেই অথচ
জলের গন্ধ
গ্রহান্তরে যে সকল নদী ঠিকানা পালটে
চলে গেছেন তাদের তরল কাহিনি
ভুলে যায় নি।
অনেক ডালপালা ছেঁড়া মালা দেবী ও
আম্রপল্লব ভেসে গেছে। ভেঙে গেছে
নিষ্ঠুর বন্যায় কাদামাটির নম্র মুখ!
তীরবর্তী স্বপ্নভূমি----সেখানে দাঁড়িয়ে
সারারাত খুঁজি নীলাভ অস্বচ্ছ
অরুন্ধতী নক্ষত্রটিকে........ভিন্ন গ্রহে
যে সকল নদী চলে গেছেন----তাদের
পলিমিশ্রিত জলের গন্ধ ভুলে যায়নি!
চক্র
ধূপের ধোঁয়া হালকা আকাশিরঙে
মহিমান্বিত!
নানান অবয়ব ভাঙে আর গড়ে
অনাড়ম্বর নিঃশব্দে উড়ে যায়
মালা ছিঁড়ে অক্ষরদানা ছড়িয়ে দিচ্ছি
একঝাঁক পায়রা এখনি নেমে আসবে।
চক্রকৌশল জানার মধ্যেই
ভাঙার চাবিকাঠি!
অভিমন্যু সবটা জানতেন না।
পরাগ পাথর ও নদনদী
পরাগে ঢাকা হেম সমাচার
কুয়াশা সরিয়ে রোদজানলা
পাথরের চেয়েও বিশ্বস্ত আর
কোন বস্তু নেই অভ্যন্তরে
আগুনের খনি।
পয়মন্ত নদনদী নতুন বসতির
মানচিত্র খোঁজে। ওদের জন্য
ভূ-ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস দরকার
তারপর না হয় অরণ্যে
যাওয়া যাবে!
অবিকল কমলালেবু
অক্ষর বিন্যাসে উপসাগরীয় ছাপ
থেকে যেতে পারে। শব্দেও
ভিন্ন ভাষার প্রলেপ!
এই যেমন কয়েক লাইন নামলেই
ওয়েদার বুলেটিন......
পারদ ওঠানামার খবর!
এক নজরে ওই নক্ষত্র বারান্দায়
বলো তো শুনি, কী কী দেখতে পাচ্ছ ?
রাতে তো পাখি থাকার কথা নয়,
না হলে ওর চোখের কথা বলতাম।
কতো কারসাজি চার দেয়ালের
ভাঁজে ভাঁজে। নির্বাক চলচ্চিত্রের
মতো অবিরাম গল্প বলে সিঁড়ি।
আকাশ ছড়িয়ে দিচ্ছে
অনিত্য আলোর আলপনা!
তবুও যে চোখজুড়ে গেঁথে থাকে কেন
নষ্ট রুচি-বিজ্ঞাপন!
গতরাত বেসামাল থাকায় পাত্রমিত্ররা
কেউই স্বস্থানে ছিল না।
আজ সকালে অবিকল কমলালেবু
অভিমানে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন।
তিনবার সরি বললাম বটে----
মান ভাঙে নি!
০৩/০২/২০২২
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন