উমাশঙ্কর রায়-এর কবিতা





মাটি, সিঁড়ি এবং জলস্তর

ঘাটের সিঁড়ি মাটি থেকে আলগা হয়ে কতটা হেলে গেল এটাই বৈঠকের আলোচ্য বিষয়। 
গণতন্ত্রের চার স্তম্ভের মতো পুকুরের চতুষ্কোণ ছুঁয়ে আছে আকাশ। তাদের ছুঁয়ে থাকা জলস্তর আর ঘাটের সিঁড়িগুলোর মধ্যে মিতালীর কথা মাছেরা জানে। 
কেউ কেউ এও জানে মাছেরা জলস্তর মাপতে জানে। 
তাই ভিন্ন ঋতুতে জলস্তরের ওঠানামায় মাছেদের
নবান্ন উৎসবের রং বদলায়। 
ঘাটের সিঁড়ি মাড়িয়ে লোকেরা গা ধুয়ে যায় জলে। তাতে মাছেদের নাক উচুঁ হয় না। যদিও হতে পারতো এমনটাই মানুষের গায়ের আঁশটে গন্ধে। 
পরিযায়ী সারস এখন ঘাটে বসে ডানা শুকোয় রোদে। 
একসময় এই ঘাটেই সূর্যধোয়া সকালে মেঘ এসে  বসতো গায়ে রোদ জড়িয়ে। উত্তাপ নিত। ডানা মেলে উড়বার আগে মেঘেরা শুনতে পেত জলস্তরের শপথ আর সাম্যের কথা। 




আয়োজন

গেটে তালা ঝুলানোর পর ফিরে এসে দেখলাম
আমার বসত-ভিটিতে অসংখ্য ছিদ্র। 

আদমশুমারিতে ধরা পড়ল প্রতিবেশীর হোল্ডিংয়ের উত্তরাধিকার অনেক ! যুক্তিসম্মত বিভাজনের প্রশ্নে ওরা এখন ডাইনিং টেবিলের ডিশে মশলা মাখানো লেগপিস! 

তাতে অনেকের অনেকটাই যায় আসে। মশলার গন্ধে চারদিক ম ম। বাতাসের ঢেউ আছড়ে পড়ছে গেটে।

খোঁজ নিতে গিয়ে শুনলাম, আসলের খোঁজ নেওয়া দস্তুর নয়। শুধু ইন্টারেস্টেই কৌতূহল থাকা বাঞ্ছনীয়। 

সীমানায় প্রাচীর বাড়ছে। সেই প্রাচীরের গা বেয়ে চলছে ইঁদুরের ছোটাছুটি। কোনো প্রাচীরই ইঁদুর আটকাতে পারে না। তবুও প্রাচীরের মাথা উঁচু হচ্ছে। বাড়ছে গেটের সংখ্যা। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে সুদর্শন তালা। 




ঝাড়ু 

ধুলোর এমন মাহাত্ম্য সে বুঝতে পারেনি। 
বুঝতে পারেনি কী কারণে তার এই জনপ্রিয়তা আজ। 

প্রায় সবার গায়েই লেগে আছে ধুলো
নাকে মুখে হাতে পায়ে নানা অঙ্গ জুড়ে।       

যে ধুলো সচরাচর দৃশ্যমান নয় 
সেও পাহাড় গড়তে জানে 
এ কথাই বলেছিল সে নত মস্তকে। 

সেই থেকে তার কোনো ফুরসত নেই
চূড়ান্ত ব্যস্ত ঝাড়ু। বেকারত্বের জ্বালা নেই। 


সে জানে না তাকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির কোনো তত্ত্ব বা সূত্র জেগে উঠেছে কি না। 

সে জানে, সে ধুলো ঝাড়তে জানে। 
পৃথক করতে জানে আবর্জনা। 




ভ্রমর আখ্যান 

দৃশ্যটা এমন: যমরাজের সাথে সন্মুখ সমরে ভ্রমর। 

ভ্রমর জানত, সুযোগ পেলেই মারবেন বাণ। কারণ তিনি যে স্বপ্নকেই খুঁজছেন! 

সেই স্বপ্নই ভ্রমরের ভালোবাসা। তাই সে সন্মুখ সমরে। সময়ে বিঁধে দিল হুল। 

- বৃথাই খুঁজছেন মহারাজ। স্বপ্নকে ছুঁতে পারবেন না আপনি। 
স্বপ্ন আদি। আপনি দ্বিতীয় অধ্যায়। 
আছে কি ছাড়পত্র প্রথম অধ্যায়ে যাওয়ার? আছে পাসপোর্ট? দুই অধ্যায়ের সীমানা পারাপারের? 

এমন অদ্ভুত গল্প শুনে উদভ্রান্ত যমরাজ। আদেশ হল। স্থায়ী ঠিকানা চাই স্বপ্নের। জাত বংশ গোত্র সবকিছু চাই। 

আহ্! কোথায় ঠিকুজী স্বপ্নের? কোথায় নথি, মহারাজ? 

ভ্রমর গুনগুন গাইতে জানে। ডেকে বলে, ওহে মহারাজ, এতদিন ধ্রুপদী শুনেছেন। এবার শুনুন এক গাঁয়ের গান। 

কে বাউল কে স্বপ্ন! আহা ধন্দে পড়ি হায়! তার জাত নাই। বংশ নাই। গোত্র নাই। ঠিকানাও নাই। 
ওরে মন, এবার হাসবি না কাঁদবি বল? সে ভাসে চোখে। সে ডুবে চোখে। আহা তার যে মরণ নাই! 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন