অনুপ মণ্ডল-এর গুচ্ছ কবিতা
চণ্ডীদাস
কতখানি বিভ্রান্ত হলে আমি চেয়ে নিতে পারি জোঁকের জীবন
আর জোঁক দাবি করতে পারে আমার শরীর
মন নয়।মনন নয়
আমরা একে অপরের মধ্যে নুন খুঁজে মরি
লবণ স্বাদেই সূর্যোদয়,শরীর ফেটে ছড়িয়ে পড়ে আলো
আর আমাদের রজোদর্শন হয়
আমরা এখনও সূর্যাস্ত দেখিনি, রক্তক্ষরণ উঁকি দিয়েছে মাত্র
নদীর পাড়ে গিয়ে বসি দু'জন
ভেসে যেতে দেখি বটপাতা তেঁতুলপাতা শিমুলপাতা
ভেসে যেতে দেখি কাঁকড়াদের ঘরবাড়ি
মধ্য গগনে বাসর আমাদের
চণ্ডীদাসের উঠোনে সদ্য কাচা কাপড় থেকে জল টোপাচ্ছে
ঈশান কোণে মেঘ;দুঃখের বারোমাস্যায় বিভেদের দোলাচল
তবু জোঁক আমার শরীর ছাড়ে না
জলের সঙ্গে পলিও লাল হয়
আমি জোঁকের শরীরে ডিম পেড়ে রাখি। দেখি
বটপাতায় চেপে একজন চণ্ডীদাস গান গেয়ে গেয়ে ভেসে চলেছে
অন্তরতর হে
তবুও যুদ্ধাভিমান! যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেরই লড়াই নিজের সঙ্গে
কতটুকু রক্তপাত, তার হিসেব রাখে কেবল নারী
পূষা নক্ষত্র নিকটে এলে গৃহঋণ দ্রুত বেড়ে যায়
যোনিটাকে নদীর এপার থেকে টানতে টানতে
কখনও কখনও আমি ওপারের ঘাটে নিয়ে গিয়ে বাঁধি
গড়ে ওঠে বালু ভাস্কর্য;বৃত গাঁথুনি
পুরুষই হারে পুরুষই জেতে পৌরুষের কাছে
হার-জিৎ ৫০/৫০
ডাউনলোড হওয়া থেকে প্রিন্টার পর্যন্ত গড়াতে যতক্ষণ
তবু মাত্র একটুখানি ;আর একটুখানি প্রচেষ্টায়
আমি তার আলজিভ ঠিকই ছুঁতে পেরেছিলাম
ফিনিশিং পয়েন্ট ছুঁতে আর মাত্র দেড় ফুট
তাঁবুগুলোর শীর্ষদেশ থেকে
একের পর এক মাস্তুল খুলে ফেলা শুরু হয়ে গেছে
খুলে ফেলা হচ্ছে একের পর এক এল ই ডি ল্যাম্প
জিভের ডগায় তুলে আমাকে সে তখন খুব করে নাচাল
পেইন বাম
বেথলেহেম থেকে ফিরছি। তোমার মাথা ধরার পেইন বাম
আমি কোথাও খুঁজে পেলাম না
পথে নৌকো ছিল অনেক;বাঘ ছিল পানও ছিল
বাঘ মানুষ ও পানের অঙ্কটা
আমি আজও রপ্ত করে উঠতে পারিনি
দেখলাম ভোঁদা খাঁড়ার জমিতে ট্রাক্টর নেমেছে
মেসিনের সাহায্যে ধান রোয়াও হবে ওখানে
চাষযোগ্য জমির উল্টো পিঠেই যত যাজন-যোজন
বাজনার তালে তালে কারা যেন নেচেছিল সেদিন
কারো অল্প একটু হরিণ
সেচের জল পেরিয়ে লাফিয়ে পড়েছিল রাস্তায়
একটা গাড়ি দুমিনিট নীরবতা পালন করল আর
এক বৃদ্ধ লাঠি ঠুকে ঠুকে রক্তকে ঠিকই পাশ কাটিয়ে গেল
তিনদিন হয়ে গেল আজও কেউ ঘটনার দায় স্বীকার করেনি
গোচর
ব্যথাকে যন্ত্রণা ভেবে পা দুখানা দুপাশে যতখানি বাড়াও
আমি তত বড়ো হাঁ দেখেছিলাম
তোমার ষোলোয় আর আমার বাইশে
হাঁ-এর মধ্যে ততক্ষণে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে
আলটাকরায় আটকে আছে আরও একটা মেঘ
পোস্টম্যান এসে খবর দিল
ছাতা মাথায় কেউ একজন এদিকেই আসছে
দূরত্বকে এখন আমি অবসর বলেই জানি
দু'হাতে ভর দিয়ে একটুখানি উঁচু হয়ে তাকাও
সামনে দিগন্ত।সরীসৃপ ও চৌম্বক বলরেখা মুখোমুখি
তোমাকে দিয়ে যেতে পারি
আঙুলের ডগায় সুঁচফোটা রক্তের বৈধতা কিংবা
সীবন শিল্পের অগোচরে ঝুলে থাকা বুকের বোতাম
দিগন্তে মেরু নেই মই নেই যা কিছু গোচর শেষ বেলায়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন