সুজিত কুসুম পাল







অ্যাটউডীয় সাহিত্যে ঊরুর রাজনীতি

যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের কমনওয়েলথ এবং পোস্টকলোনিয়াল সাহিত্যের অধ্যাপক গ্রাহাম হাগ্যান (জন্মঃ ১৯৫৮) তাঁর ‘পোস্টকলোনিয়াল এক্সোটিক: মার্কেটিং দ্য মার্জিনস’ গ্রন্থে ‘মার্গারেট অ্যাটউড, ইন্ক.,’ নামে একটি বিশেষ অধ্যায় রচনা করেছেন। ব্রিটিশ উপনিবেশোত্তরকালে ক্যানাডার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষদে ক্যানাডার লিটার‍্যারি সেলেব্রিটি মার্গারেট অ্যাটউড (জন্মঃ১৯৩৯)-এর বিস্ময়কর অভিযাত্রাকে ‘দ্য অ্যাটউড ইন্ডাস্ট্রি’ হিসেবে মূল্যায়ন করে তাঁর অবিস্মরণীয় সফলতার নানানমুখি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। হাগ্যান তাঁর মূল্যায়নে এই সেলিব্রেটির সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক সত্তার উন্মোচন করে দিয়ে তাঁকে ক্যানাডিয়ান জনতা তথা বিশ্বমানবতার বন্ধু হিসেবে দেখেছেন। তিনি তাঁকে লেখক ছাড়াও একজন নারীবাদী, জাতীয়তাবাদী এবং পরিবেশবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। উত্তর গোলার্ধের অধিবাসীরা যেমন স্নোবাইট (তুষারের কামড়) শব্দের সাথে পরিচিত, অ্যাটউডের লেকচার/ইন্টারভিউ/লেখনির শ্রোতা-পাঠকরা তাঁর ‘সাউন্ডবাইট’-এর ভয়ংকরতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। তিনি প্রতিপক্ষের গায়ে জমাট বরফ ছুঁড়ে মারেন না, বরং তাঁর নিক্ষিপ্ত কোমল তুষারই লক্ষ্যবস্তুতে দন্ত হয়ে ভেদ করে। সামাজিক আচরণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী এই ক্যানাডিয়ান নারীর অসাধারণ ব্যঞ্জনাপূর্ণ রসাত্মক বাক্যের মধ্যে মিশ্রণ করে দেয়া এক ফোঁটা শ্লেষরস বিবাদীর মস্তিস্কে জাগিয়ে তোলে বিষময় প্রতিক্রিয়া। 
আমরা সবাই একটা ব্যক্তিজীবন চাই, চাই এমন একটা জীবন যেটি হবে একান্তই নিজের এবং অন্যজনের জীবন থেকে ভিন্নতর। যে জীবনে কোনো শাসক কিংবা শাসিত থাকবে না, রাজনীতি থাকবে না, শ্রেণিগত বিভাজন থাকবে না। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতে এটা সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের জীবনাচার বা সংস্কৃতি রাজনীতিভিত্তিক হওয়াতে পার্সোনাল লাইফ গড়ে তোলা সম্ভব নয়, কিংবা গড়ে তোলা খুব কঠিন। অ্যাটউড চিরকাল এই পাবলিক এবং প্রাইভেট (পার্সোনাল)-এর মধ্যে একটা যোগসূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর কাছে মনে হয়েছে, এই দুই জগতের মাঝখানের পর্দাটা বেশ ঝাপসা; পার্সোনাল বলতে কিছু নেই- ‘দ্য পার্সোনাল ইজ পলিটিক্যাল’। অ্যাটউড একজন সাহিত্যিক হলেও তাঁকে রাজনীতির আয়নায় না দেখলে তাঁর পূর্ণ অবয়ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি যেহেতু অ্যামনেস্টিইন্টারন্যাশনাল এবং ক্যানাডিয়ান রাইটার্স ইউনিয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাঁর অন্তর্দৃষ্টি সব সময় সাহিত্যের সীমানা পেরিয়ে রাজনীতির মাঠ পর্যন্ত বিস্তৃত। অ্যাটউডীয় সাহিত্যে যৌন নিগ্রহ আর ক্ষমতার রাজনীতি জাতীয় সীমানা পেরিয়ে বৈশ্বিক ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। ‘পাওয়ার পলিটিক্স’ গ্রন্থে এই সমস্যাটি অংকুর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরে উপন্যাস ‘সারফেসিং’ এবং ক্যানলিট বিষয়ক সমালোচনামূলক গ্রন্থ ‘সারভাইভাল’-এ ডালপালা ছড়িয়েছে। 
‘পাওয়ার পলিটিক্স ইন ব্লুবিয়ার্ড’স ক্যাসেল’ শিরোনামের এক প্রবন্ধে  সমালোচক গ্লোরিয়ান অন্লে লিখেছেন, ‘পাওয়ার পলিটিক্স’ কাব্যের  নারী ও পুরুষরা একটি যৌনতাবাদী সমাজের কারাগারে রাজবন্দী হিসেবে আটকে আছেন। বন্দীদের কেউ ভিক্টর, কেউ ভিক্টিম। কাব্যের উদ্বোধনী চার লাইনের শিরোনামহীন কবিতাটি এই গ্রন্থের সব চাইতে শক্তিশালী এবং প্রতীকী কবিতা।
you fit into me
like a hook into an eye

a fish hook
an open eye 
কবিতার দ্বিতীয় লাইনে ‘হুক’ শব্দটি উপমা (‘লাইক অ্যা হুক’) হিসেবে ব্যবহার করাতে পাঠক এটিকে একটি ভালোবাসার অণুকথা হিসেবে গ্রহন করেছেন। তৃতীয় লাইনে গিয়ে ‘হুক’টি অতর্কিতে অপ্রতর্ক্য চিত্রকল্প (‘অ্যা ফিস হুক’) হয়ে গেলে ভয়াবহ একটি দুঃস্বপ্ন দেখে পাঠকের নিদ্রা ভঙ্গ হয়ে যায়। যে কোনো হুক মাছ ধরার জন্যে অত্যন্ত কৌশলে ব্যবহার করা হয়। বড়শির হুকটি খাবার দিয়ে মুড়িয়ে নদী কিংবা সৈকতে ছুঁড়ে মারা হয়। জলের মধ্যে সুতোর প্রান্তে ঝুলে থাকা খাবারটি মুখে নিয়ে টান দিতে গেলেই বড়শিওয়ালার হুকে আটকে যায় পড়শি মাছের ঠোঁট। প্রতারকের সুতোর চূড়ান্ত টানে ঠোঁট ফুটো হয়ে যায়। যন্ত্রণাকাতর মাছ তার খোলা চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখে প্রতারকের ঠোঁটে নোংরা হাসি। ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে পরক্ষণে সেই চোখে ‘হুক’ ফুটিয়ে আনন্দোল্লাস করা মানে বিকৃত যৌনতার পরিচয় দেয়া। এতো হেঁয়ালি রসের মধ্যে ব্যঙ্গার্থক ব্যঞ্জনা ডুবিয়ে দিয়ে এই রকম একটি সিরিয়াসনেসসমৃদ্ধ বক্তব্য কবিতায় ফুটিয়ে তোলা, মনে হয়, একজন অ্যাটউডের পক্ষেই সম্ভব। 

মেকি রোমান্টিকতা নিয়ে ব্যঙ্গ করার ক্ষেত্রে বাজারে অ্যাটউডের প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। এই কাব্যের আরেকটি কবিতার নাম ‘দে ঈট আউট’, যেখানে প্রেমিক আর প্রেমিকা  রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। সাধারণত রেস্টুরেন্টে বন্ধুরা খেতে গেলে খাওয়ার পর বিল দেয়ার সময় বিল দেয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, কে সব বিল পরিশোধ করবে। কিন্তু এই কবিতায় রেস্টুরেন্টে খেতে বসে খাওয়া শুরুর আগেই প্রেমিক আর প্রেমিকের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হলো কে কার ফিউনারেলের বিল পরিশোধ করবে। 
In restaurants we argue 
over which of us will pay for your funeral
… 
though the real question is 
whether or not I will make you immortal.
পাঠকের কাছে, আমার মনে হয়, এখনো বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি, এই কবিতাটিকে ব্যঙ্গার্থক বলা হলো কেনো। কবিতার শুরুতেই দেখুন, প্রেমিকার ফিউনারেল বিল দিতে চান প্রেমিক; প্রেমিকের ফিউনারেল বিল দিতে চান প্রেমিকা। তাঁর মানে, এক পক্ষ অপর পক্ষের মৃত্যু নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু আজকের খাওয়ার বিল পরিশোধের গরজ কারো নেই; তাঁর মানে সত্যিকারের ভালোবাসা পরস্পরের মধ্যে নেই। ভালোবাসার কাঙাল হলে ফিউনারেলের বিল নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন হয় না। কবি নারীকে দিয়ে এখানে প্রকৃতির ভূমিকা পালন করিয়েছেন। প্রেমিককে ‘অমর’ করে রাখা হবে কিনা সেই প্রসঙ্গটি কবিতার চতুর্থ লাইনেই চূড়ান্তভাবে এসে গেছে। 
একটি অনামিকা (নামহীন) কবিতার প্রথম লাইন যদি হয় ‘মাই বিউটিফুল উডেন লিডার’, পাঠক তো মজা পাবেন শুরুতেই। নারীর নেতার শরীর (কাঠের তৈরি ঘোড়ার ওপর আসীন) কাঠের তৈরি হলে মজা তো হবেই। নেতাকে যোদ্ধা সেনাপতি সম্বোধন করে মেয়েটি বলছেন, 
My love for you is the love 
of one statue for another: tensed 

and static. General, you enlist 
my body in your heroic 
struggle to become real: 
though you promise bronze rescues 

you hold me by the left ankle 
so that my head brushes the ground, 
my eyes are blinded, 
my hair fills with white ribbons.
“আমি জানি, তুমি মরিয়া হয়ে লড়াই করছো, কাঠের মজ্জাকে বিলুপ্ত করে, রক্ত-মাংসের শরীরে রূপান্তরিত হতে। আমি জানি, তোমার শরীর রক্ত-মাংসে পরিণত হলে তুমি ভালোবেসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে; তোমার বাম পায়ের গোড়ালি দিয়ে আমাকে কাবু করে মাটিতে শোয়ায়ে দেবে। তোমার শরীর নাচবে, আমার মাথা নাচবে, চোখ বুজে আসবে; আমার মাথাটা মাটিতে নাচতে নাচতে একসময় থেমে যাবে, চুলগুলো উড়তে উড়তে লুকিয়ে যাবে সাদা ফিতার আড়ালে।“ ভালোবাসায় পর্যুদস্ত একজন নারীর আক্ষেপের কথা এইভাবে উঠে এসেছে অ্যাটউডের কবিতায়। 
অ্যাটউড তাঁর কিছু কিছু কবিতায় আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও যৌনতার রাজনীতিকে একই সরলরেখায় বসিয়েছেন। তাঁর ‘সারভাইভাল’ গ্রন্থের ভিক্টিম থিউরি অনুযায়ী সব পুরুষ সবসময় ভিক্টর নয়। দুর্বল পুরুষ সবল পুরুষের কাছে ভিক্টিম। একজন দুর্বল নারীও আরেকজন সবল নারীর কাছে ভিক্টিম। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুর্বল দেশ শক্তিশালী দেশের কাছে চিরকালই ভিক্টিম। ক্যানাডা, শক্তিশালী অ্যামেরিকার প্রতিবেশী, যেহেতু ব্রিটেনের একটি কলোনি রাষ্ট্র ছিলো, সবসময় অ্যামেরিকা ও ব্রিটেন ভিক্টর ছিলো। তাই, তিনি ক্যানাডাকে এই ধরণের কবিতায় ‘নারী’র উপমা দিয়ে এবং শোষণকে ধর্ষণের রূপকল্প দিয়ে তাঁর বিষয়ভাবনার কাব্যিক প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আবার কখনো কখনো নারী ও পুরুষ এবং দুর্বল ও সবল দেশ  নির্বিশেষে সবার কাছেই প্রকৃতি ভিক্টিম হয়েছে। ধর্ষণের শিকার শুধু নারী নয়, সুযোগ পেলে প্রকৃতিকে ভিক্টিম বানিয়ে সবাই ভিক্টর হতে চায়। 
‘ইম্পেরিয়ালিস্ট’ কবিতাটি শুরু হয়েছে এইভাবে –
Imperialist, keep off 
the trees I said. 

No use: you walk backwards, 
admiring you own footprints. 
সবল দেশের দৃষ্টিতে দুর্বল দেশ হয়ে ওঠে ধর্ষণযোগ্য নারীদেহ। জর্জ বাউয়ারিং এই কাব্যের সমালোচনাকালে বলেছেন, এই কাব্য়ে নারীধর্ষণ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় শোষণের চিত্রকলা। অ্যামেরিকা এককালে ক্যানাডার বনাঞ্চল ধ্বংস করেছিলো; ‘ফরেন ল্যান্ড’ অ্যামেরিকার চোখে তখন ছিলো ‘ওম্যান বডি’। সেই বেদনা এখনো অ্যাটউডকে পীড়া দেয়। তাই, বৃক্ষ উজাড়বৃত্তির প্রতিবাদ দিয়েই এই কবিতার শুরু। 

সেই যে ১৯৭০ সালে ‘পাওয়ার পলিটিক্স' অস্ত্র দিয়ে অ্যাটউড যুদ্ধ শুরু করেছিলেন বিকৃত যৌনতার বিরুদ্ধে, সেই যুদ্ধ ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেইল’ এবং ২০১৯ সালের ‘দ্য টেস্টামেন্টস’ উপন্যাসে এসেও থামেনি। ১৯৮৫ সালের বেস্ট সেলার ‘দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেইল’ উপন্যাসে রাষ্ট্রীয় প্ররোচনায় নারীর শরীর নিয়ে পুরুষের শৃগালবৃত্তি সমগ্র মানবজাতির সভ্যতার মাত্রাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বন্ধ্যা কম্যান্ডার ফ্রেডেরিক গৃহপরিচারিকা অফ্রেডকে তাঁর স্ত্রীর ঊরুর ওপর রেখেই গৃহপরিচারিকার সাথে মিলিত হন। বাইবেলের ‘দ্য বুক অব জেনেসিস’-এর ত্রিশতম অধ্যায় (১-৩) থেকে পাঠ করে তাঁকে শোনানো হয় এবং বিশ্বাস করানো হয় যে, একজন স্বামী তাঁর বন্ধ্যা স্ত্রীর অনুমতিক্রমে স্ত্রীর সামনে তাঁর দাসীর সাথে মিলিত হলে তাঁকে ঈশ্বর শাস্তি প্রদান করেন না। একই ধারাবাহিকতায় ‘অ্যা ওম্যান’স ইস্যু’ কবিতায় অ্যাটউড নারীর দুই পায়ের মাঝখানে ('বিটুইন হার লেগস') পুরুষের ‘অরক্ষিত’ সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব চিহ্নিত করে সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ এক ব্যঙ্গাত্মক ব্যঞ্জনা। 
‘দ্যে আর হোস্টাইল নেশন্স’ কবিতায় দুই অরি রাষ্ট্রের মধ্যে ‘মহব্বত’ থাকলেও, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেমময়(!) স্পর্শে আক্রমণের ঝাঁজ পাওয়া যায়। নিজেদের মধ্যে বিনিময়কৃত উপহারের মধ্যেও গোপন অস্ত্রের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ায় দুই পক্ষ। স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, অ্যাটউড তখনকার অ্যামেরিকা ও অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নকে উদ্দেশ্য করে কবিতাটি লিখেছিলেন। সেই সময় দুই দেশের ‘কোল্ড ওয়ার’ তথা নানান পারমাণবিক অস্ত্রের গবেষণা আর পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের কারণে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পরিবেশ দূষণ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কিছু কিছু প্রাণী তখন বিলুপ্তির পথে। 
Here there are no armies
here there is no money
 … It is cold and getting colder
…surviving / is the only war / we can afford…  
সমুদ্রের জল, ফসলের জমি আর বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন – সবকিছুই অস্তিত্ব সংকটে। প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে পড়ে থাকা বিরান ভূমিতে জমাট তুষারের দিকে তাকিয়ে কবি বলছেন, “দেখো, এই তুষার ভোজ্যও নয়, বিক্রিযোগ্য কিংবা দখলযোগ্যও নয়। এখানে সৈন্যও নেই, অর্থও নেই। আছে শুধু শীতলতা; পৃথিবী ক্রমশ শীতলতর হচ্ছে। চলো, আমরা আবার গত বসন্তে ফিরে যাই; পারস্পরিক বাহুবন্ধন থেকে উষ্ণতাকে বের করে নিয়ে আসি।“ এই কবিতাটি দুই বৃহৎ শক্তির প্রতি অ্যাটউডের একটি কাব্যিক অভিযাচন।
হানাহানির এই পরিবেশে বেঁচে থাকার প্রশ্নে ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্ট হ্যাজ অকার্ড’ কবিতায় অ্যাটউড ডারউইনের  ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ (Survival of the Fittest) থিউরিকেই নিয়ে এসেছেন।
The accident has occurred, …  
we are alone in the sand, the ocean,
the frozen snow
 
… I know I should be digging shelters,
killing seabirds and making
clothes from their feathers,
cutting the rinds from cacti, chewing
roots for water, …
 
… Which of us will survive
বনাঞ্চল উজারের ফলশ্রুতিতে পরিবেশ দূষণের পর্যায় ক্রমঊর্ধ্বগতিতে ছুটতে থাকলে পরিণতি যে কী ভয়াবহ রূপ নিতে পারে তার একটি অসাধারণ চিত্র এঁকেছেন তিনি এই কবিতায়। দূষণের কারণে, এখন জাহাজের চাকা আর চলে না, গাড়ির চাকা ঘুরে না। জীবনের চাকা নড়ে না। জীবন ধারণের জন্যে জীবনীশক্তি ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে জীবনের ভূমি থেকে। সৈকতের তীরে এখন মাটি খনন করে আশ্রয় খুঁজতে হয়; গাংচিলকে নিধন করে তার পালক দিয়ে লজ্জ্বা ঢাকার বসন বানাতে হয়; ক্যাকটাসের খোসা, গাছের বাকল আর শৈবাল হয়ে ওঠে ক্ষুধার্তের আহার্য কিংবা বৃক্ষের শিকড়নিংড়ানো জল হয়ে ওঠে চূড়ান্ত পানীয়। কবিতার নাম ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্ট হ্যাজ অকার্ড’ হলেও, জীবনের এই দুর্দশার জন্যে কোনো ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ বা দুর্ঘটনা কিন্তু আদৌ ঘটেনি। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি পরিণাম, প্রকৃতির প্রতি বিরূপ আচরণের পরিণাম। তাই, প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, কার উদ্বর্তন হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে, প্রকৃতির, নাকি আমাদের?
‘পাওয়ার পলিটিক্স’ গ্রন্থে নারী-পুরুষের যৌনতা যুদ্ধ ক্ষমতার লড়াইয়ের চিত্রকল্প হলেও গ্রন্থের ২২তম পৃষ্ঠায় একটি অনামিকা কবিতায় আঁচ করা যায় যে একজোড়া নর-নারীর মধ্যে মিলন হয়েছে। প্রথম চার লাইনেই উষ্ণ নিঃশ্বাসের লঘু নিনাদ আছে।
yes at first you
go down smooth as
pills, all of me
breathes you in and then it's
a kick in the head,
orange and brutal, sharp jewels
hit and my       
hair splinters  
দ্বিতীয় চার লাইনে সুখময় বৃষ্টিপাতের একটি অনুষঙ্গ আছে। অ্যাটউডভুবনে সাধারণত মিলনের আবহ মিলে না। অনুরূপ একটি দৃশ্য পাঠক অবলোকন করেছেন ‘সারফেসিং’ উপন্যাসে। উপন্যাসের কথক প্রতারিত একজন অনামিকা নারী। আন্না ও ড্যাভিড বিবাহিত যুগল। অসুখী আন্না বিয়ের পর থেকেই নানানভাবে নির্যাতিত হয়েছেন স্বামীর হাতে। পাশের ঘর থেকে এই অসুখী অসম দম্পতির রতিক্রিয়ার নিম্নতরঙ্গের আওয়াজ পেয়ে কথক নারীর মনে হয়েছে, পাশের ঘরে শিকারীর জালে পশু অন্তরীন হয়েছে – ‘an animal at the moment the trap closes’ (পৃষ্ঠা-৭৬)। অ্যাটউডের ‘পাওয়ার পলিটিক্স’ কাব্যগ্রন্থে বিভিন্ন সময় ‘সেক্স’ নিজেকে মৃত্যুর চিত্রকল্প হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। কোনো কোনো কবিতায় নিকষিত হয়েছে লিঙ্গ-সহিংসতার অভিমুখ। ‘ইউ হ্যাভ মেড ইওর স্কেপ’ কবিতায় ((পৃষ্ঠা-১৩) নারী কণ্ঠে যখন উচ্চারিত হয়ঃ
You have made your escape
… nothing
remembers you but the bruises
on my thighs and the inside of my skull.
পাঠক তখন উপলব্ধি করতে পারেন নারী ভিকটিমের উরুর যন্ত্রনার তীব্রতা, যে তীব্রতাকে লালন করা হয় সর্বকালের সকল ভিকটিমের স্নায়ুমণ্ডলে। 











 











2 মন্তব্যসমূহ

  1. সুজিত কুসুম পালের প্রবন্ধ মোহিত করল।
    শুভেচ্ছা।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. চন্দ্রনাথ শেঠের মোহনীয় মন্তব্যে সুজিত কুসুম পাল মোহিত এবং প্রাণিত। অনেক ভালো থাকুন।

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন