এ্যালেইনা হোসেন-এর কবিতা
১.
আর্ট অফ ইনস্যানিটি
তাণ্ডবের পর উন্মাদের শান্ত চোখের ভেতর
যতটা দই পেতে রাখা থাকে
ততটা উপকারী হজমি ধরার জন্য
আছে কি বিস্তৃত তুরিন?
হে অভিজ্ঞ মানসিক বিশেষজ্ঞ!
দুদিন আপনার ওষুধ খেয়ে
খুব ঘুমাচ্ছি
মরা ঘুমের মধ্যে ঠাওর করি
শরীরে লোমকূপ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
লোমকূপ সংখ্যা ছাড়ায়
ইনসমনিয়ার গরম বলক।
কড়া ডোজের ভেতর
উষ্টা খেয়ে আছে টেবিল চেয়ার
ডাক্তার, মরা কড়া এসব ছড়ায় থেকে
আপনার কান্না শুনতে পাচ্ছি
বুঝতে পারছি না কিসে আপনার শোক!
ঘুম পাড়ানোর বেহুদা বিদ্যায়
নাকি রোগীর এমন কৌতুকে?
আপাতত চুপ করেন, বিরক্ত লাগছে
ঘুমের ভেতর আঠারোশ মিলিগ্রাম সজাগ
উন্মাদের সুস্থির চোখের মতো উন্মাদ।।।
১৬ই মে, ২০২১
২.
বনফায়ার
অতোটা জাহান্নাম ভেবো না
অতোটা গ্রাসপ্রিয়
দাউদাউ জিভ নেই
তৃষ্ণা আছে খুব, ঘামে ঘামে আগুন ঝরানোর
বসন্তে বিতৃষ্ণা;
ফুলের ত্রাণে ঢাকে না প্রাণবর্তী শীত।
কেউ কেউ বলে
বেনামী ব্যথা সবটাই, সস্তা দেশলাই
যতোটুকু জানি--
হাতটা টনটন টোকাইয়ের মত ব্যথায়
টনসিল ফুলে আছে--
ফুলবিক্রেতার অনুনয় ফুলে
ভিখারি ধরে রাখা ব্রিজ বসে আছে পিঠরেখায়
দলা পাকানো শেকলের গাঁথুনিতে;
কে যে মগজের ফন্দি বাজায়!
নিজেকে তাপানোর জন্য
পুড়ে পুড়ে সামান্যতম বনফায়ার শুধু
ময়লা পুড়ায়ে মাদারচোদগুলা অতটুকুও দেয় না!
তবু সহ্য হলো না?
তাও কেনো মনে হলো,
জাহান্নামের গুষ্টিশুদ্ধ উদ্ধারে বুক থেকে উড়ে যাচ্ছে ফুলকি--
বিভিন্ন কলিজা শৎকারে?
আগুন শুধু চোখের অঙ্গে কাঁপে
বাদামী নকশার থরোথরো নাচ
অতোটা বুঝেনি এখনো ইশারার বেশরম ত্রাস!
নিজেরে শুধু পাতার সাথে কুড়ায়ে কুড়ায়ে
সামান্য বনফায়ারে তাপাই
তৃষ্ণায় ভেজা হাড়।
এতটা ঘামাতে চাই পাইরোফোবিয়ার শীতে মাঘের প্রতিটা শিশিরফোঁটায় জ্বলবে নোনা মশাল।।।
৩.
মরিচ ধ্যান
কিছুদিন হলো একগাদা শুকনো মরিচের পাস ছাড়া, ভাতকে প্রবেশাধিকার দেয় না মুখ থেকে গ্রীবার সীমান্তরক্ষীরা । বলতে খুব লজ্জাই লাগে, তোমার স্বাদগন্ধ শহীদ করার লক্ষ্যে জিহবায় বুঝি গ্রেনেড হামলা করতে ইচ্ছা করে। খুব অল্পতেই এক বোতল পানি ভেতরে ঠাণ্ডা ঢুকে গেলে, দানা দানা জিদ একদম পান্তা হয়ে যায়। ঝাল প্রতিভা অল্প হওয়ার কারণেই কিনা, সেই ধ্বংসোন্মুখ ফ্লেভারকে দমানো খুব ছেলেখেলা জ্ঞান করি। 'জিভ অন্তত ফাপড় লাগা মানসের চেয়ে আনাড়ি নয়'-- এমন ভেবে খোঁজ করি 'গড স্টপার' মরিচের। ঈশ্বরে আস্থা না থাকলেও ঈশ্বররে থামায় দেওয়া ঝালের ব্যাপারে আস্থা আমি রাখতেই পারি।
পেট মোচড় দিলে মনে পড়ে, আলসার আমার প্রিয় অর্কেস্ট্রা। সে স্টেজে উঠছিলো এমন দরকারি সময়ে, যখন মুখোমুখি হওয়ার চুক্তিতে কিছু ওয়ার্ডিং এদিক সেদিক হওয়ার কারণে এক কার্মিক সঙ্গীর নির্মমতায় কোল্ড কফির সাথে থতমত খাচ্ছিলাম। তখন ঘায়েরা যেনো পেটের গাড়িতে করে এসে তড়িঘড়ি কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলো বাচ্চা বুকটারে। হরণে গিয়ে সে হরিণ, দুর্বৃত্তদের আগুন দেওয়া জঙ্গলে দিব্যি ঘুরতে থাকে নিরাপদ।
শুকনো মরিচ চটকাতে চটকাতে ভাবি, একদিন এমন 'ক্যারোলিনা' হয়ে উঠবো, আমাকে সামান্য মুখে নিয়েও সহ্য করতে পারবা না তুমি
৪.
যে ঘরের ঘর নেই ১৩
ঘরের মধ্যেই আত্মার জমজ আগুন। চোখের রিচুয়ালে জলমন্ত্র যে আগুনের জন্য বিশুদ্ধ ঘি, তাতে ভাত রাঁধা একাকী ঋষি হলে বুঝা আসে হৃদয় কোন ক্ষুধার মারফতে চোর হয়ে যায়
আসলে সেই দাউদাউ কায়াও কতটুকু জানলো নির্বাণ তত্ত্ব, জাগরণ বিলাপ? প্রতিজন্মে ভ্রান্ত ছাইয়ের ধিক্কার সয়ে যেতে হয় জীবনের জন্য, তবু জানলো না এ ছাই যে মূলত তার নিজেরই অশ্রু...শুধু পোড়ানোর লজ্জায়, ভস্ম বেদনায় দণ্ড নেয় বায়ূরসিতে, ভুলে তার আপন রশ্মির দমক
অসাধারণ সব কবিতার শব্দ বন্ধ।
উত্তরমুছুনঅনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় কবি
যে ঘরের ঘর নেই ১৩, আর্ট অফ ইনস্যানিটি, মরিচ ধ্যান এগুলো দারুণ লাগল।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন