চঞ্চল নায়েক-এর কবিতা




পাসবুক কখনও শূন্য হয় না


আমার ব্যাংকের পাসবুকের শেষতম আপডেট বলছে
   ওখানে ব্যালেন্স আছে চোদ্দোটি নতুন টব এবং শীতের নতুন অতিথি...
  ছোট্ট ছাদে এক অসীম_আকাশ
নিজেকে বিশুদ্ধ হাল্কা রাখার জন্য 
  প্রতিটি টবের নারীকে একটা করে নাম দিয়েছি...

 দক্ষিণের বাতাসে কিছুটা শহুরে দূষণ... 
  এসব নিয়ে মাথা ঘামাই কিন্তু যন্ত্রণা পাই না ! 
গভীর রাতে যখন অনাহুত ঝড় আসে মনে কিংবা ছাদে---
  প্রণয়ের উন্মাদনা জাগে,
 উঠে যাই আমার ছাদ-বাগানে...

  পাসবুক কখনও শূন্য হয় না... 
সূর্যোদয়ের আগে ভরে ওঠে বিবিধ ফুল এবং প্রেমের নবীনতম কলা নিয়ে।




শীত

  একটি অলস সকালের আড়ষ্ট হাতে
       দায়বদ্ধতা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ছক কষা যাক,
কোনও বন্ধনীচিহ্ন ছাড়াই একটি অংক...
    তারপর নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করালে
যে সমাধান সূত্রটি আসে তা হলো---শীত


  আজকাল বেশিরভাগ মানুষই চায়
আরামের বিছানায় শীত দীর্ঘাঙ্গ ধারণ করুক...


অথচ, স্বপ্ন দেখা পাখিরা রোজ কালো অক্ষরে দিয়ে
গনগনে আগুনের মতো কবিতা লিখে যায় ঘুমহীন চোখে...




পুরনো গল্পের ভিতর নতুন গল্প


বয়স বাড়ছে কারকের বিভক্তির মতো, 
           পরিচিত গল্পের ভেতর ঢুকে যাচ্ছি আবারও 
কেন জানি না ভেতরটা আরও বেশি গভীর মনে হচ্ছে...

 খুব ইচ্ছে করে পাহাড়ি নদীর স্রোতে ভেসে 
    অগণিত কুমারী প্রস্তরখন্ড কুড়িয়ে নিই।
সেইসব সংঘবদ্ধ বালুকাদের নিয়ে সমুদ্র থেকে অনেকদূরে একান্ত নির্জনে বসে কিশোর বয়সের প্রথম প্রেমিকার জন্য একটি বিশুদ্ধ বেলাভূমি তৈরি করি...

বয়স বাড়ছে ---
গল্পের ভেতর নতুন নতুন গল্প খুঁজে পাচ্ছি,
স্মৃতিগুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্য
একটি বটগাছের ছায়া নিতান্ত কম নয়।
এখন আর সঙ্গমের ইঙ্গিত নেই...

শীতল ছায়ায় বসে ছায়ার দূরত্ব মাপছি,
এত কাছে আছে দূরত্ব? 





কল্পবিজ্ঞান থেকে ব্রিগেড পর্যন্ত 

কোয়ান্টামফিল্ডের ভেতর ঢুকে 
   দেখে আসা যেতে পারে ব্যক্তিগত ভূত ও ভবিষ্যৎ,
কিংবা অন্য আরও অনেকের...
ফিরে আসার পর (যদি ফেরা যায়)
হয়তোবা হাতছাড়া হতে পারে সিদ্ধান্ত সমকালীন 
যাবতীয় জাগতিক বন্ধন---

এটাই ছিল গতরাতের স্বপ্ন,
    তারই অনুবাদ করলাম একটি নিম্নচাপের প্রভাবে ! 
যন্ত্রণা রঙের যত দুঃশ্চিন্তা ছিল
        ব্রিগেডের মিথ্যে ভাষণের মতো 
সবকিছুকে গুঁজে দিলাম কল্পবিজ্ঞানের গর্ভে...

    আজকাল উন্নয়ন ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে...
       বেহায়া বলে ইদানিং আর কেউ নেই,
সুতরাং, বধিরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে...





শৌচ


কিছু শব্দ ব্যয় হয়ে গেছে
    অশৌচকালীন ডাইরির পাতায়।
বর্ণে বর্ণে বিশ্লেষিত হয়েছে উপত্যকার নিরবতা,
কিংবা ঝড়ের পরে আঁকা সামতলিক চিত্রে ফুটিয়ে
তুলেছি আলোপোকার ভুল সংকেত


দিনের পেঁচার মতো নীরবে প্রহর গোনে
    অবশিষ্ট বিকেলের মেঘ ও সঞ্চিত অভিধান
উৎকট দিনলিপি ভাঁজ করে রাখছে
   যাবতীয় খেদ ও রোমন্থন...


পাক খাওয়া নিম্নচাপের ভেতরেও
   শ্যেনদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে বাতিঘরের আলো 
নাবিকের ফেরার আশায়
      আঁচল পেতে রাখে শঙ্কিত বন্দর


কুলীন পাখির চোখে ফুটে ওঠে
      অভিশপ্ত দ্বীপের প্রসব বেদনা
ক্রমশ লোপ পেয়ে যাচ্ছে প্রকৃত নাগরিকের সংজ্ঞা
চলো, পৃথিবীর জন্য একবার শৌচ হই...



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন