তাপস গুপ্ত-এর ধারাবাহিক 

পর্ব : ৪





পোস্টমডার্ন  ভাবনা: কিছু কথা


পুনরাবৃত্তি হলেও আবার বলার বাহুল্য রাখছি পোস্টমডার্ন কবিতা হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হল মানেই যে তার মধ্যে পোস্টমডার্ন ঠুসে ঠুসে থাকবে তা নয়। এবছরের আগস্টের শেষের দিকে নেটফ্লিক্সে একটি সিনেমা রিলিজ করেছে যার নাম সুইট গার্ল, সিনেমাটি ভারতের ট্রেন্ডিং থাকলেও খুবই রদ্দি ঘরানার। যেটা কথা সেটা সিনেমার প্রায় শুরুর দিকে জেসন মোমোয়া একটি সংলাপে বলছে, অতীত মানেই স্বপ্নময়, স্বপ্নে ভরপুর এক পৃথিবী।।
-- " স্টোরি রাইটার জেনে বুঝে হোক অথবা না বুঝেই হোক এখানে কিন্তু পোস্টমডার্ন থিওরি এ্যাপ্লাই করেছেন"
আমাদের মনোটোনাস লাইফের কোন এক ঘর্ঘরে বিকেল অথবা প্রায় নির্জীব সন্ধ্যায় দুজন বা তিনজনের পথচলতি কথোপকথনে এই মুহূর্তে তার জন্য একটি  বিলো এভারেজ সিনেমা আলোচনায় উঠে আসে। এরপর আমরা হয়তো চলে যাবো চিংড়ি বা ইলিশের দাম চর্চায়, বা এখনো কি শিলিগুড়ির সেই গুমটি থেকে নেপালে প্রক্সিভন, ফেনসিডিল যায়, এপিডুরাল ইনজেক্ট করলে শুধু কোমর থেকে অবশ হয়, নাকি ওপরও? এইসব ডোপামিন সুলভ চাটনি আলোচনার মাঝে কিছুক্ষণের জন্য হলেও একটি থার্ড গ্রেড সিনেমা কে ঘিরে পোস্টমডার্ন বেঁচে ওঠে জিভের ডগায়।
কিন্তু যদি বলি ঠিক কতখানি মনের কতটা একক জুড়ে ছিল এই শ্রবণ, অর্থাৎ বেঁচে ওঠা?
ওই শ্রবণ মুহূর্তে আমার সামনে ছিল বারান্দায় বসা এক আকর্ষণীয় নারী, অস্তাচলের লালিমা ছিল তার গালে, তার সামনে ছিল ছোট  টেবিল, তখন আমার ডানদিক দিয়ে একটি অটো রিক্সা গেল শব্দ করে, কে একটা ছেলে ছাদের ওপর থেকে চিৎকার ছুঁড়ে দিল ভো কাট্টা বলে… এবং আরও কতকিছু… 
সুতরাং বন্ধুর জিভের ডগায় আসার আগে, এবং আমার শ্রবণে পৌঁছনোর আগে আমাদের মন অথবা আমার মন  নির্দেশিত করে নিতে চাইছিল কিছু। নির্দেশিত করে নিতে চাইছিল বিশেষ কিছুর ওপর। জার্মান দার্শনিক এডমন্ড হুসার্ল (১৮৫৯-- ১৯৩৮)  এরই নাম দিয়েছেন " নির্দেশনী আধেয়" বা intentional content। এই নির্দেশনা মনের মনের কোনো বিশেষ সংশ্লিষ্ট বস্তু তে আধেয় হতে চাইছে, অর্থাৎ বাকি বস্তু গুলোকে সে সরিয়ে দিতে চাইছে। আমি যদি বন্ধুর শোনা ওই জেসন মোমোয়ার উক্তি টি কে ধরে বন্ধুর শ্রবণ কথাকে গ্রাহ্যে এনে  ফেলি ,তখন আমার মনের প্রত্যক্ষণে থাকা বস্তু গুলিকে সরাবো কোথায়? হুসার্ল বললেন, বাকি গুলিকে ব্র্যাকেট বন্দী করে ফেলতে হবে, যেমন আমি ওই বারান্দায় বসা মহিলা, টেবিল, অস্তাচলের লালিমা,ছেলেটির ভোকাট্টা,  অটো রিক্সা ইত্যাদি ব্র্যাকেট বন্দী করে ফেললাম। এই ব্র্যাকেট বন্দী করে ফেলা পোস্টমর্ডান এর এক ধর্ম।  এবার ধরা যাক, আমি যা যা ব্র্যাকেট বন্দী করলাম তখনই সেগুলির অস্তিত্ব সংশয়াতীত অবস্থায় পৌঁছে গেল। এটাকে তিনি বললেন," রুপতাত্বিক লঘুকরণ " বা phenomenological reduction.
পরে তাঁর শিষ্য হাইডেগার এই চিন্তাকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং পোস্ট মডার্ন তত্ব কে সুদৃড্  ভিত্তি দিয়েছেন।
গত পর্বে  অনুবাদিত জন অ্যাসবেরির কবিতাটি লক্ষ্য করলে  এই রূপপতাত্বিক লঘুকরণ ব্যাপারটি আমাদের নজরে আসবে।  ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কাজ করা মানুষ টি তার জীবনের সংশ্লিষ্ট প্রিয়জন এবং অনুভূতি গুলিকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ব্র্যাকেট বন্দী করে ফেলেছে। 

এবারেও থাকল জন অ্যাসবেরির একটি কবিতার অনুবাদ , কবিতার নাম " anticipated stranger "  যেটির অনুবাদে নাম দিয়েছি " প্রত্যাশিত আগন্তুক " । 

মূল কবিতা:

The bruise will stop by later.
For now, the pain pauses in its round,
Notes the time of day, the patient's temperature,
Leaves a memo for the  surrogate: what the hell did you think you were doing? I mean...Oh Well, less said the better, they all say.

God will find the pattern and break it

প্রত্যাশিত আগন্তুক

বিবর্ণ কালসিটে ক্ষত থেমে যাবে পরে
বস্তুত এখন বৃত্তাকারে বিরতি ন্যায় ব্যথা
দিনের সময় স্মারকে চিহ্নিত হয়
রোগীর সহনশীল তাপমাত্রা,
পাতার রশিদে প্রতিনিধি চিরকুট লেখে:
আপনি কি ভেবেছেন আপনি কি কেলো করেছেন?
বলতে চাই,আচ্ছা বেশ, কথা না বলে
স্তব্ধ নীরবতা মেনে আমি বরং পোস্ট করি ডেস্কে

ঈশ্বর খুঁজে নিন সাকার শৈলী আর ভেঙে দিন চুরমারে।

ক্রমশ...

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন