শ্রীমন্ত সেন-এর কবিতা
প্রত্যয়হীন
দুর্বল প্রত্যয়ের দেওয়াল জুড়ে ফাটল
চুপিসারে ঢুকে পড়ে অমার্জিত অসৈরন
বোধের দখল নেয় ঘুণপোকাদের অহংকার
সুখে কুরে-কুরে খায় সত্যসার—
ঘুণাক্ষরে লেখা থাকে চরম সর্বনাশ
জলো বাতাস এসে লুটোপুটি করে বুকে
কিছু অলৌকিক হাতছানি
সাবধানী বাণী লিখে যায় বুকের পাঁজরে
তবু প্রত্যয় হয় না
অপ্রত্যয়েই পড়ে থাকে সময়-কঙ্কাল
প্রত্যয়হীন বুকে অগ্নিজন্ম বুঝি
আর হবে না কোনও দিন
অগ্নিমিত্র
আজ আর আগুনকে ভয় করি না
আমার বুকেও আগুন মনেও আগুন
আগুনের ঘেরাটোপে বাস করি
আমার মিথ্যাগুলো আগুন হয়ে ঝলসায়,
আমার উঞ্ছবৃত্তিগুলো আগুনের হলকা হয়ে
আমার আত্মাকে দহনের চেষ্টা করে
যদিও আত্মাকে জানি
আগুন ছোঁয় না
যত কিছু অসামঞ্জস্যে স্বাক্ষর করে গেছি
বেলা-অবেলায় মেখেছি রক্তের লঘিমা
অগ্নিব্যূহ হয়ে
বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়
জানি না এভাবেই কখন
অগ্নিমিত্র হয়ে গেছি
তোমার খোলা বারান্দা থেকে তাই
দূর দূরে থাকি
পাছে অগ্নিকাণ্ড করে বসি
জরাসন্ধ
যতসব সন্ধি আজ একজোট হয়েবি
শ্বাস পেরিয়ে গেছে অবিশ্বাসের দলে
যতই ঝলমলে হোক শরীরের দেখনদারি আলো
বিশ্বাসেরা ঠিক জানে বুকে অন্ধকার
সন্ধির অলিতে-গলিতে কাঁদে
ব্যবধান অপার
স্বরসন্ধিদের দুঃখে গলা বুজে আসে
ব্যঞ্জনসন্ধিরা আজ নিতান্তই ব্যঞ্জনাহীন
অবিশ্বাসে ঢেকে যায় জোছনার রাত
অবিশ্বাসে দিন কাটে একান্ত অনিচ্ছায়
জরাসন্ধ সন্ধি নিয়ে জোড়াতালি-বুক
ছুরিহাতে শানিয়ে যায়
অভিষন্ধি-অসুখ
অপাবৃণু
আজ বুঝি তোমারও কারণ ছিল অনেক
আমাকে না বোঝার
কঠিন নির্মোক ছিঁড়ে হৃদয়-উৎসার
তোমার অগম্য ছিল স্বাভাবিক ভাবেই
তাই তোমার দিনরাত্রির কাব্যে
থাকি গরহাজির,
তোমার জলের মিনার একান্তই তোমার
আমার ছেঁড়াফাটা দিনরাতে
শুধু জোড়াতালি
আসলে খুলতে শিখিনি নিজেকে
অপাবৃণু তাই রয়ে গেল
কথার কথা হয়ে
যদি কোনও দিন নগ্ন হতে পারি মনেপ্রাণে
হয়তো ফিরতে পারি
তোমার গভীরে
আপাতত তোমার শেষের কবিতাতরী
অপেক্ষায় থাক তোমার ওপারেই
ছন্নছাড়া
বড় এলোমেলো লাগে বিকেলের আলো
বিষণ্ণতা মেখে আসে বিচ্ছিন্ন সকাল
আগোছালো জীবনের দুর্ভোগ ঘোরালো
হেঁটে আসে চুপিচুপি মগ্ন স্কন্ধমাল
গোছাতে গিয়েই দেখি সব ছন্নছাড়া
কত কী যে নেই আর জীবন-তোরঙ্গে
সেই ম্লান হাসিগুলি বড় মন-কাড়া
অনাদরে গেল ভেসে কালের তরঙ্গে
বড় আদরের দৃষ্টি অক্ষর-বিহীন
হঠাৎ বৃষ্টির মত ঝেঁপে আসা স্মৃতি
কিছু কিছু মগ্ন রাত, কিছু স্নিগ্ধ দিন
ধারাপাতে থরথর সুস্নাত প্রতীতি
আজ আর কিছু নেই—কোথায় হারাল
কোথা গিয়ে ম্লান মুখে দুহাত বাড়াল
অপাংক্তেয়
ছোট অপরাধ-চিহ্নগুলি হাতে লেগে আছে
তাতেই ছিছিক্কার রব
বড় অপরাধগুলির কোনও চিহ্নই রাখিনি
ধুয়ে মুছে সাফ করে নিয়েছি
অবিবেকী সাবান-জলে
তাই অনায়াসে জল ঘেঁষে চলি
মাথা উঁচু করে
মানুষ জানে না সময় জানে
কত অদৃশ্য রক্ত লেগে
জঘন্য দুহাতে
তাই সময়ের কাছে জলচল নই
অপাংক্তেয় হয়ে পড়ে আছি
একধারে
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন