উৎপলেন্দু পাল-এর কবিতা






জীবিতবৎ 

আমি স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে আছি 
সহস্র যুগ ধরে ঠায় 
পদতলে চলমান পৃথিবী 
ঘুর্ণায়মান যুগান্তর কালান্তর 

দূর থেকে হাত বাড়ান ত্রিশঙ্কু 
সকাল সন্ধ‍্যা নিশায় 
বরাভয় মুদ্রায় মৃদুহাস‍্যে 
কালচক্রে অধিষ্ঠিত মহাকাল 

আমার শিকড়বিহীন অস্তিত্বে 
অনন্ত ষড়রিপুর বাস 
আমার দ্রাঘিমা পরিক্রমণে 
সপ্তাশ্ববাহন জবাকুসুম মিহির 

এখনো স্থির সহোদর ধ্রুবতারা 
উপেক্ষা করে আকাশ 
অপলকে শুধু তাঁকেই দেখা 
অনন্তকাল ধরে যুগপৎ জড়বৎ 

আমিও মৃতবৎ জীবিত রয়েছি 
সালান্তর বা জন্মান্তর 
আমার প্রতিবেশী তিনিও 
অযোনিসম্ভব সর্বব‍্যাপী ঈশ্বর । 




ঈশ্বরের রান্নাঘরে 

বৃষ্টিভেজা সকালে হেঁটে গেলাম 
ঈশ্বরের নিভৃত গোপন ডেরায় , 
একটা কাকভেজা কাঠের উনুনে 
তিনি এক মনে চোঙা ফুঁকছেন , 
ঘরময় দমবন্ধ কুন্ডলিকৃত ধোঁয়া 
উলু খড়ের শান্ত চালা ভেদ করে 
সে ধোঁয়া পৌঁছে গেছে মহাকাশে , 
হাঁড়িতে ফুটতে থাকা ভিক্ষের ক্ষুদ 
ছড়িয়ে দিচ্ছে মহাপ্রসাদের ঘ্রাণ , 
আমি নির্বাক দাঁড়িয়ে দেখছি শুধু 
ধোঁয়ার ওপারের আবছায়া কায়ায় 
আমার মায়ের অবিকল প্রতিমূর্ত্তি । 




জেনেটিক কোড 

তিস্তা যখন জন্মেছিল 
ম‍্যাঘা কবিরাজ খুঁজতে বেরিয়েছিল 
তার ইউনিক জেনেটিক কোড , 

তার নামের পেছনে খুঁজে বেরিয়েছে 
একটা পুরুষবাচক শব্দ 
ঘাড় বাঁকা শকুনের দল ,

তাকে বেঁধে ফেলেছিল 
একটা লিঙ্গতান্ত্রিক শৃঙ্খলার খাঁচায় 
টিকি টুপির আড়াল থেকে , 

তারপর থেকে লাগাতার 
গোত্র খুঁজতে চলেছিল চিরুনি তল্লাশি 
মায়ের অন্তর্বাসের ভাঁজে ভাঁজে 

তিস্তার চোখ বেয়ে যেদিন 
নেমে এসেছিল রক্ত মেশা অশ্রু ধারা 
ঈশ্বর দুয়ারে খিল এঁটেছিলেন 

তবে যেদিন চোখ থেকে আগুন ঝরবে 
কে‍ঁপে উঠবে বিশ্ব চরাচর 
ঈশ্বরও নতজানু হবেন নিশ্চিত 

ম‍্যাঘা কবিরাজেদের অবশ‍্য লজ্জা নেই 
ওরা খুঁজেই যাবে জেনেটিক কোড 
আর পুরুষ বাচক শব্দাবলী । 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন