আমিনা তাবাসসুম-এর কবিতা 






ঝিমলির বেঁচে থাকা 

ধূসর অন্ধকারে শুয়ে থাকে মৃত ইচ্ছে
আমি দেখি পুরোনো কতক বই
তুমি মিথ্যে আমায় রাগালেও ঠিক বুঝতাম
"ঝিমলির শ্বাসে মিশছে আরও গল্প"!

কথোপকথনে এখন বৈসাদৃশ্য অনেক জানি
তবু একলা ঘরের বুকে কবিতার লুটোপুটি 
সন্ধ্যে হলে তোমায় ডেকে চোখে বসাই
তুমি মুগ্ধ হও, মানবীর সদৃশ আচরণ ভেবে।

তারপর দীর্ঘ বইএর পাতায় অন্তহীন অপেক্ষা
জেগে থেকে দূর থেকে সুর তোলে কিছু শব্দ
এক্যুরিয়াম হোক ছন্দের কিংবা ভালোবাসা
ঝিমলি বাঁচে কল্পনার থেকেও সত্য।





মনের চিরকুটে ডমরু প্রান্তর 

প্রেমে স্টাইল চেঞ্জ হলে ভূমিষ্ঠ হয় কবিতার আগুন
দেওয়ালে থাকা টিকটিকি হোক 
কিংবা বাড়তে গিয়েও অসমাপ্ত থাকা রেনু
সবেতেই দীর্ঘ কোনো আলো বাতাসের অপেক্ষা ককিয়ে রাখে আধিপত্য।
সুনীল আকাশ, কর্মঠ জলবায়ু
আর চিলতে চিলতে ফুরিয়ে আসা আয়ুর কোঠায়
লেগে থাকে সত্য মিথ্যার নিগূঢ় রহস্য।
ঠিক যেমনি
কাব্যের যোনিতে কিংবা বোবা প্রেমিকার ঠোঁটে
আঁকা থাকে ভীষণ উপত্যকা,
তেমনই এই মনের চিরকুটের ডমরু প্রান্তর।
সেখানে কষ্ট আসে,
আঘাত আসে,
বেদনা আসে,
আসে সূর্যের রাগে ধ্বংস হওয়া ছাইয়ের ধূলিকণা!
তবু সে ভীষণই অভুক্ত...
তবু সে কাঙালের মতই তোমার কাছে ছুটে গিয়ে
খুবলে আনে রক্ত শূন্য ভালোবাসা
তারপর সন্ধ্যে হলে মহুয়ার গন্ধ আসে
আর অন্ধকার গিলতে থাকে কিছু বিস্মৃত শব্দের দ্যোতনা জুড়ে
চিমসে হয়ে আসা অতিমারীর গল্প!





গোধূলির নৃত্য 

সন্ধ্যার শুভারম্ভে লাল হয়ে ওঠে প্রকৃতির রূপ
সবুজ পাতা থেকে মসৃণ ত্বক
সবই সূর্যের ঢলে পড়া ঠোঁটে আগুন জ্বালায়।
এখন একটা নাম না জানা পাখি ডেকে চলেছে একটানা
তাই সামনে কোনখানে পা ফেলবো সে নিয়ে মাথা ব্যাথা থাকলেও
বিশ্বাসের থলিতে ফাঁক নেই এতটুকু।
এই তো কিছুক্ষন আগে কথা বললাম জীবনসঙ্গীর সঙ্গে
ধাপে ধাপে বেড়ে ওঠা সিঁড়ির এখনও অনেকটা পথ বাকি
জানি, হাঁটতে হবে লক্ষ্যের চূড়ান্ত সফরে।
তারপর তাক লেগে যাওয়া চোখের নিচে 
যে অবজ্ঞা লুকিয়ে রেখেছিল মানুষ
তার পরতে পরতে সাজিয়ে দেবো শিউলি ফুল।
গোধূলির নৃত্যে তখন আবারও নতুন করে আলো জ্বলবে
সেই সঙ্গে জ্বলে উঠবে আরও একটা আগুন
বহুদিন আগে ছেড়ে আসা কোনো প্রাক্তনের বুকে।





অনিশ্চিত অভিসারের স্বপ্ন কোলাজ 

এক কোটি বার জান ডাকার পর
আর সরে আসা যায় না বলে তুমি মনে করো
অথচ পাখির চোখে রক্ত গাঁদা ফুল।
এই রমরমা বৃষ্টির আগন্তুক মহলে
এখন পড়ে থাকা কাগজের শব কান্না করে দু'বেলা।
তাই ডাল ভাতে অপেক্ষা করে আঘাতের চিহ্ন
দু চোখে অর্জুনের দৃষ্টিতে অভিজ্ঞতার একশো পনের বছর হলে
দেবদারু গাছের কোনো প্রেমিক
মন খুলে কথা বলতে পায়।
সেসবের কথা বাদ দিলে অক্ষরে আসে নৌকার পাল
জন্মের পুরোনো কোনো আঁচলে আটকে রাখি চোখ
হতে পারে সেখানে ভূগোলের পাতা থেকে খুবলে আনা হয়েছে
কোনো মিশরীয় প্রেমের রহস্য
তারপর সামনের আরও কয়েকটা বছর
অনিশ্চিত অভিসারের জোৎস্না নিয়ে স্বপ্ন কোলাজ
যেন ভেঙে যাওয়া ফেবিকুইক নিয়ে
চলতে থাকা, চলতে থাকা অবিশ্রান্ত দুটি পায়ের ক্ষতচিহ্ন।


2 মন্তব্যসমূহ

  1. ০৪টি কবিতাই সুন্দর। মনে ঢেউ তোলে। পাঠকমন ভাবতে থেকে। অভিনন্দন কবি।

    উত্তরমুছুন
  2. প্রতিটি কবিতা সুন্দর।
    প্রকাশকূশলতা দেখে মুগ্ধ হলাম

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন