রাখী সরদার-এর কবিতা





তোমাকে পেরিয়ে যেতে যেতে



১.
তোমাকে পেরিয়ে যেতে যেতে
নেমে আসে ঘোর অন্ধকার...
ছায়া ছায়া বাবলার বন
শ্রীরাধার গাত্ররঙ দু'টি চারটি তারা
আলো ভেঙে ডুবে যাচ্ছে ধীরে
ম্রিয়মাণ পৃথিবীর কোলে
যে যার মতো ঘুমিয়ে শ্রান্ত,

আমি একা নিদ্রাহীন...


একে তো অঘ্রাণ রাত
তায় গাঢ় কুয়াশার স্বগত সংলাপে
চরাচর বিস্ময়ে বিমূঢ়,
ঠাণ্ডা, হিম হাওয়ায় কিছুতেই
এগোতে পারিনা। অশ্রুত শিশির
স্পর্শে ছন্দ কেটে যায় বারবার,
তবু যেতে হবে কলঙ্ক গল্পের দেশ ছেড়ে...




২.
দু'পায়ের পাতা বেশ ভারী,
শ‍্যামলতা জড়িয়েছে বুঝি!
কেন এত বাধা সখা!যার গোত্র
পলায়নপর,তাকে কেন এত
নির্বাসন দিতে ভয়?যে নারী তোমাকে
আড়ালে বেসেছে ভালো
তার জন্য কবে শেষ কেঁদেছিলে ?
কবে তার খোঁপার জ‍্যোৎস্নায়
গুঁজেছিলে কুন্দমালা!

ভাবছো,এত প্রশ্ন কেন করা!
সব আলো নিভে গেলে
নিভু নিভু তারাটিও মন ছুঁয়ে
নয়নাভিরাম।




৩.
এই পথ এত দীর্ঘ! এত কন্টকাকীর্ণ!
অথচ সে বালিকাবেলা কতবার
এ পথেই বাজিয়ে গিয়েছে মুঞ্জ
নুপুরের ধ্বনি । তৃণফুল রূপস মর্মরে
ছড়িয়ে দিয়েছে বৃন্দাবনী ব্রত জল

বুঝি আজ নোনা বিচ্ছেদে
মুছে যায় সমস্ত পদাবলী...




৪.
সখে,তুমি কী অন্ধ জাতক!
বোঝনা হৃদয় অভিমান,
দেখেও দেখো না কিছু, তোমা বিনে
শোকাতীত ফুল কেন ঝরে !

কেন আজ একাকী বিরহী
অসম্ভব নীরব!কোন অপ্রণয়ে
সে কামিনী একাকী কাঁদে ...
জানো কিছু খবরাখবর?
মনে পড়ে অতীতের প্রেমগাথা?
বলেছিলে -চাঁদ ও নারীর বুকের
সুগন্ধ অতি প্রিয়...


এখন সব‌ই যেন পুরাতন মোহময়ী ছল।যেমন অতীব শীতে যত গাছ
হয়ে পড়ে মৃগ,ঋতু অজুহাতে
খেয়ে ফেলে পাতার মর্মর।
শীত পরবাসে বোঝা যায়-

ঝরাপাতার ভেতর শিলীভূত
কবেকার পীতবাস মায়া...



৫.
ইচ্ছে হয় ফিরে আসি
স্পর্শ করি পদ্মাভ আঙুল
হাত রাখি তোমার ওই সুবর্ণ জ‍্যোৎস্নায়।

মায়াবিনী চাঁদ গুমরে গুমরে
এতটাই দগ্ধময়,যেন আমার মরণ
উঠে পড়ে চাঁদের চিতায়।

আয়ুহীন ব‍্যথার মোচড় কোন
মুগ্ধ হৃদয়ে লুকাবো?
হু হু দ্বিধার বাতাসে ফেটে পড়ে
ভিতর কার্পাস।



৬.
নিঃসঙ্গ ঝিঁঝি়র সাথে হাঁটলে
মনে হয় কেউ পাশে আছে।চুপ্
দীর্ঘশ্বাসে ঝরে পড়ে নক্ষত্রের ধুলো,
তার ছায়াচ্ছন্ন মুখটি ঠাণ্ডা বাতাসের
দিকে...,তুমি কি কোনো রমণী?
দূরের বিষাদ প্রতিমা? নাকি বিদর্ভ
দেশের কোনো মোহান্ধ পুরুষ!

পরিচয় নাই দিলে,দূরে থাকো...
আমার ধ‍্যানের মধ্যে অন্য কেউ,
যে আমার আজন্মের প্রতিশ্রুতি...



৭.
এই রাত আকাশ ফেরত অনন্ত ভৈরব
ওগো ভিতর পথিক তোমার কি
ভয় করে?

পথ পাশে কে গো পাগলিনী!
বুকের মালঞ্চ খুলে শুয়ে! একটি
ছাইরঙ শেয়াল গন্ধ শুঁকে শুঁকে
ফিরে গেল,পাগলিনী স্তন গন্ধে
বোধহয়, তার মায়ের কথা মনে
পড়ছে...
যতই যাহোক, পশুর আদলে ওরাও
তো কারো সন্তান।

দূরে ওই দ‍্যুতিময় কোন্ গাছ দেখি!
বোধিবৃক্ষ! বোধিবৃক্ষতলে কারা যেন চুপিচুপি সুজাতার গল্প করে ...


বুঝলাম ভালোবাসা শব্দটির পাশে
সবাই যে হাঁটু মুড়ে বসে।



৮.
যে পথ নারী জানে,
যে পথ চেনায় ভালোবাসার সুঘ্রাণ
তাকে কি বিভ্রান্ত করা যায়?

যা কিছু ভাবিনি, নির্জন রাতের স্রোতে ভেসে আসে বোষ্টুমির গান!
এ আমি কি শুনি!পথের সমাপ্তি ধারে
মুরজমুরলী বাজে!

প্রভু , বুঝেছি তোমার গান
যত শূন্য হবো ,মহাশূন‍্যতায় তুমি
টেনে নেবে অপার প্রণয়ে।
তবে তাই হোক,
চেতনাময় এ অভিমান
পুড়ে যাক  অনন্ত বেদনায় ...

                      

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন