উমাশঙ্কর রায়-এর কবিতা
প্রতিবিম্ব
১.
মজ্জায় মিশে থাকা স্খলনের চিহ্নগুলো
মাঝে মাঝে ধূমকেতুর মতো জেগে উঠে
আলোকিত করে বিচ্যুতির পথ।
অথচ যে ধূমকেতুর পতন হল
স্পর্শ করেনি ভূমি তবুও
সে জানতেও পারল না
পুকুরঘাটে আসন পেতে বসা
মালিনীর সান্ধ্যপ্রদীপের মুদ্রাটি
যুগোত্তীর্ণ। কালজয়ী তার আলো।
২.
পেরেক পুঁতে পুঁতে দড়ি বেঁধে মঞ্চ তৈরি হয়।
কোনো কোনো মঞ্চের সামনে দাঁড়ালে
নিজেকে দু'মুখো সাপ মনে হয়।
হাত বাড়ালে কাঁধ থেকে সরে গিয়ে সে
অজগর হয়ে যায়।
অথচ ময়দানী হাওয়া গায়ে জড়িয়ে নিলে মনে হয়
আকাশটা খুব দূরে নয়।
মাথার ওপর থমকে দাঁড়িয়েছে। দেখছে আমায়।
হাত বাড়ালেই হয়। মিলবে সমুদয়।
এমন একটা আকাশ আছে বলেই কি বলতে পারি
'বেঁচে আছি। হেঁটে চলো।'
শুধু ক্লান্ত সময় হাত বাড়িয়ে বলে -
বেঁচে থাকার সিঁড়িগুলো
আকাশে সম্পৃক্ত নয়।
৩.
একটা বাগান গড়ব ভেবেছিলাম।
হয়ে ওঠেনি আজও।
গড়তে কতকিছু চাই!
ভূমি চাই। জল চাই। বীজ চাই। চাই শুদ্ধ আলো।
আর একটা হাতিয়ার অবশ্যই।
নিতান্ত মূর্খ
তাই বুঝতে পারিনি ঠিক
এতসব চাওয়ার গলায় শেকল পরিয়ে
খোঁয়াড় গড়েছে কেউ!
আমি আমার জীবিকার গায়ে
শখের পোশাক পরিয়েছি
আর ওরা
শখের গায়ে পরিয়েছে জীবিকার পোশাক!
৪.
যে চারা গাছটি বেড়ে উঠছে 'উৎসব' নামে
তার মাথার ওপর শামিয়ানা
অজস্র ছিদ্র তার গায়ে।
সবাই জানে
ওসব পিপীলিকার কাণ্ড।
শুধু পিপীলিকারা হতবাক।
ওদিকে কংক্রিটে ঘেরা বাগানে
নজরবন্দি উৎসব ।
৫.
আর্ট গ্যালারিতে ঝুলে আছে
বর্ণময় বক্তৃতা
নানা মিডিয়ামের তরল শুকিয়ে গেলে
জেগে উঠবে গণতন্ত্র
নেপথ্যে রয়েছে
কয়েক শতাব্দীর ইমিউনিটি বুস্টারের গল্প
সুতো বেয়ে ঝরে পড়ছে কয়েক ফোঁটা
প্লেটোর বয়ানের গূঢ় রহস্য!
৬.
শুনেছি এই অরন্যের শেষে কোনো বিকল্প নেই
আছে এক সরোবর।
ডুব দিলেই ছলনা সব ধুয়ে যায়।
এসো হাতে হাত রেখে ডুব দিই।
এখানেই আত্মাকে ডুবিয়ে রাখি
দেশটাকে ডুবিয়ে রাখি...
কিছু পাওয়ার জন্য নয়...
শুধু ধুয়ে ফেলার জন্য।
অন্তত এভাবে এসময় সার্বজনীনতার মুখটা
উজ্জ্বল হোক।
৭.
ধরো 'রাত' একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক।
দৃশ্য রচনায় আলো জ্বলে উঠবে।
কেউ কারোর আসল মুখটি দেখতে পাচ্ছে না এখন।
শুধু একটি প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে...
কে তুমি?
কে তুমি?
দর্শক? অভিনেতা? না কি নেপথ্য শিল্পী?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন