অর্পিতা দাসগুপ্তের কবিতা
১.
নগ্নতা
পাতার পোষাক খুলে রেখে
শুধু রোদ ছায়া
পরে গেছি তার কাছে
যুবক ঝড়ের কাছে গেছি
কোটালের ভরা টানে ভেসে গেছে
সবটুকু ফাঁকি
ঝড়ের সামনে আদি নারী
লিলিথের মতই অপাবৃতা
কায় মনে নগ্ন হলে নারী
এলোমেলো হয়ে যায় নান্দনিক
হাওয়া , ঈশ্বরের সাধের বাগানে
পচে যায় ছলনা আপেল
অমর্ত্য সুখে কেটে যায়
আদমের শৈশব কাল
যুবক ঝড়ের হাত ধরে
স্বর্গের পঞ্চায়েতে সম্পূর্ণ
নগ্ন হয়েছি
নপুংসক দেবতারা ত্রাসে
চোখ ঢেকে
স্বর্গচ্যুত করেছে আমাকে
মুক্তির মেঘে সহস্র ফণার মত
পিঙ্গল চুল ভাসিয়ে
নেমে এসেছি দৈত্যকুলের দরজায়
বেয়াব্রু , বেশরম !
যুবক ঝড়ের হাত ধরে !
২.
বিষক্ষয়
কত যুগ বসে আছো
অনার্য দেবতার মত
প্রবাদের চূড়ায় ,
হে বিষপুরুষ !
গুহামুখে পরে আছে
নারীদের উড়ুহাড়
নৈবিদ্যের মত
হননের অর্ঘ্যে সাজানো
যজ্ঞ বেদী
পদ্মরাগ মণির মত
জ্বলছ
শতবর্ষের অনিদ্রায় !
কতবার ভেবেছি
ওই ত্রিকোণ আলেয়ার
অনুবর্তিনী হই
জাগাই অতৃপ্ত দেবতাকে
শ্বদন্ত থেকে শুঁষে নিই
অমোঘ
মৃত্যু ও অমর্ত্য সুখ !
তুমি বারে বার
সভয়ে ফিরিয়েছ
আমার উপাচার
আমি সেই বিষকন্যা
যার প্রশ্বাসে
তোমার বিষক্ষয় হত !
৩.
অমানবী
আবছা দেখতে পাচ্ছি তোমার
বাড়িটার ভগ্ন দেহে বাসা বাঁধছে
এক ছায়ামানুষ
ঝুঁকে আসা
চিলেকোঠায় মাকড়সার জালের
মত সে বিস্তার করছে নিজেকে !
তোমার সিগারেট খাওয়ার ধরণ
থেকে সামান্য কুঁজো হয়ে
খবরের কাগজ কুড়িয়ে নেওয়া
সবই শিখে নিচ্ছে একে একে
শিখে নিচ্ছে মুদ্রাদোষ , পরকীয়া
প্রেম ও প্রেমহীনতার মধ্যে অবাধ
বিচরণ !
তুমিও টের পাচ্ছ এক প্রেতের আঙুল
সর্বদা বিলি কাটছে তোমার চুলে
একটু একটু করে
খুলে নিচ্ছে তোমার নির্মোক !
ওই প্রেত আমার প্রেরিত
তোমার জন্য আমি আত্মা
বিক্রি করে প্রেতসিদ্ধা হয়েছি
এতদিনে !
তোমার জন্যে এক ছায়াবাড়ি
গুছিয়েছি আমার পাড়ায়
তোমার জন্য আমি
অমানবী হয়ে গেছি
ঈশ্বরের চোখে !
৪.
অন্য ওথেলো
চাক চাক অন্ধকার ছুঁড়ে
দিচ্ছ ইজেলের দিকে
ঘষে ঘষে মুছে ফেলছ পেন্টিং এর
পেলব সকাল
দাঁড়াচ্ছ জানলায় অতৃপ্ত প্রেতের
মতন
একবারও দেখছনা চিত্রার্পিত হয়ে
আছে রাত
নির্বাক মেঘমালা জমে আছে রক্তাভ
চোখে
বিস্ফারিত তারারা দেখছে অন্য এক
ক্লাসিক ট্র্যাজেডি
রুমাল রহস্য কিংবা অন্য কোনও
দীর্ঘ সলিলকি !
তোমার অন্ধ আঙুল এবার আঁকুক
দেয়ালি পোকায় ঠাসা ত্যক্ত কেবিন
যৌন হতাশার মত ধূসর বনস্থলী
কালো প্রজাপতি !
ফ্যাকাসে নীল নদীর
নির্জনতম কোনও ঘাট
সেখানে শুইয়ে দাও আমার নিথর
দেহ
ঘাতক রুমাল আর ডেসডিমোনার
মাঝামাঝি !
৫.
ইশকিয়া
আরেকটু মদ দিয়ে যাও হেমন্ত রাত
তাকে দেখা বড় দায় , দিওয়ানা দহলিজে
তার পা পরে না রোজ রোজ , নক্ষত্রপথে
কি ইশারা আসে বছর দশেক পর পর
খুলে যায় যবনিকা সাহারায় ইশকিয়া
মরুদ্যান রচে
খেজুরের রস মাখে সাকী
ওড়নায় বেঁধে রাখে মিঠে রন্জিশ ,
মিঠে ধূলো মিঠে ইন্তেজার , মিঠে তার এসে চলে
যাওয়া !
আরেকটু ভ্রম দিয়ে যাও মুসাফির , কাফির
রাতের চোখে মরীচিকা আঁকো !
নমকিন চাঁদনিতে লিখে যাও গড়ঠিকানা
বওন্ডরের হাতছানি , রাত্রির মত এই
ছায়াও ছলিয়া !
তুমি যে তৃষ্ণা দাও ফরেবী
ফকীর , চেয়ে দেখ ছাতি জুড়ে কত হয়রানি !
আরেকটু মৃত্যু দাও হিজরের চাঁদ , রাতের
হিজাবে কলঙ্ক বুনেছি , বুনেছি হীর এর
ফরিয়াদ , এবার তখলিয়া হোক , সরে
যাক দুনিয়ার মুখ , মিটে যাক লেশ পাশ
তেশনাগি চাঁদের শরাবে !
গলে যাক নায়াব কোহিনূর !
সেহরার চাঁদনীতে মিশে থাক শুধু
বেপন্হা রুমানীর হাসিন দাস্তান !
৬.
জীবনানন্দ
বড় অন্তরঙ্গ হয়ে বসেছি তোমার কাছে
যেভাবে মাঘের রাতে বুকে টেনে নিই লেপ
যেভাবে আঁকড়ে ধরি দয়িতকে সঙ্গমশেষে
মলিন পেপারব্যাকে আলোআঁধারির গ্রাম
মনখারাপের চালে বসে আছে বিধুর সম্রাট !
জলসিঁড়িটিরে বোলো আমিও এসেছি
হয়ত ছিলাম ঘাসফুল হয়ে কিংবা জলফড়িং
মালয় সাগর সাঁতরিয়ে
এসেছি আবার কত জন্মের পর
এ শহরে
দেখেছি মানুষের মুখে থরে থরে ইঁট
জানলায় জানলায় অসহ্য আলো
উড়ালপুলের অষ্টপাশে সহস্র চাকার
গর্জন !
এ শহরে ফিরে এসে নাটোরের বনলতা সেন
বললেন কোথায় কাঁঠালছায়া ! কলমির ঘ্রাণ ?
কোথায় ক্ষুধিত কবি , ছায়া নীড়ে কে গাহিবে
জীবনের গান ?
হয়ত এসেছ রাত হয়ে
এশহরে ঘুমায় না যারা তারা চেনে সুদর্শন
তোমার !
তুমি ফেরো , আমরাও ফিরি বারে বারে
ধানসিঁড়িটির টানে , নবান্নের ঘ্রাণে
এই বাঙলায় .......
৭.
ঘট
তুমি যাকে বিল্বপত্রে ঢাকো
সেই ঘটে পাঁক আছে, পাঁকে আছে
রতিমগ্নতা
নিপুণ খননকার্যে উঠে আসে রিপু
হিরণ্ময় ক্রোধ ও লাস্যময়তা
সমস্ত শিকার শেষে বিন্দু বিন্দু
ঘাম, চরিতার্থ মনষ্কাম জঙ্ঘা
তিমিরে, শবরীর হাহাকার মরেও
মরেনা !
বলী, রক্ত, অবসাদ
ঘটের ভিতরে
পবিত্র জল, স্বস্তিকা, সকলি
রয়েছে কিন্তু বাগাড়ম্বরে !
সিন্ধু এসো, প্রবিষ্ট হও
কায়ায় ধরুক মায়া টুকু
শুকিয়ে যাওয়ার আগে
পঙ্ক নীল জলে একখানি
অন্তত পদ্ম ফুটুক !
সব কটাই সুন্দর । তুমি তো লেখ সবসময়ই সুন্দর
উত্তরমুছুনKya baat..khub sundor
উত্তরমুছুনProtiva konodin dhaka thakena .Tomar lekhar ami baro fan.
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন