দেবানন্দ ভট্টাচার্যের কবিতা

সামুদ্রিক নুলিয়ারা


যা অকল্পনীয়, তা সে কেমন হয় জানিনা!
মোট চার রঙের মানুষ আমি দেখেছি----
সাদা কালো হলুদ এবং বাদামি। হালকা
বাদামি হলে উজ্জ্বল তামাটে বলা যায়।

অনেক কালো মানুষও  নীল আভাযুক্ত হয়।

নীল-কালো মানুষ ভাবলে সামুদ্রিক নুলিয়ারা
ঢেউ চিরে উঠে আসে। অদ্ভুত সুন্দর নৌকো
ওদের! বালিতে বিছিয়ে অবেলায় ঘরে ফেরে
তাদের শরীরে শ্রমের লবণ ও স্বপ্নের নীল

আলো ও ছায়ায় মিলেমিশে গাঢ় হয়। 

তরঙ্গলাঞ্ছিত দিনযাপন, জল ও মানুষের 
কঠিন লড়াই! অজানা কোন এক উপসাগরীয়
ঝড়ে দুটি দুর্গত হাত ত্রাণের আশায় এগিয়ে
দিতে চাই ওদের দিকেই।
                       

ভিন্ন প্রেক্ষিতে

বাইরে থেকে উঠে এসেছি। এখন আমি ঘরে।
কবিতা সাজিয়ে বসে আছি। চার দিকে পর্দা
টানা। কৃত্রিম নীরবতা।
মহাকাশ  গ্রহনক্ষত্র  ছায়াপথ  মহাশূন্য নীল
অনুভূতির স্পন্দন এবং পরাবাস্তবতা---কোন
কিছুই পূর্বনির্ধারিত নয়, কবিতায় আংশিক
ছায়া বুনে যায়।

একদল ক্ষুব্ধ মানুষ প্রায় প্রতিদিনই যাবতীয়
বার্নিং ইস্যু : ছোটবড় পাথরের টুকরো আমার 
ঘরে ছুঁড়ে মারে। ভেঙে যায় জানলার কাচ।
মেঝেয় ছড়িয়ে থাকে কাচ পাথর দাবি ও
তথ্য-সংবাদ।
কীট পতঙ্গের মতো ঘরময় উড়ে বেড়াচ্ছে।
বাজারী খবরে আস্থা নেই।জানলা বন্ধ রাখি।

তবুও শান্তি নেই। নিভৃতে একক থাকা....এই
ঘোর দুঃসময়ে ঘরবন্দী আছি স্ব-ইচ্ছায়।
এখন রেহাই চাইছি। বেরোবার পথ খুঁজছি।
প্রকাশ্যে আমাকে দেখে পড়শিরা
ভূত দেখার মতো চমকে উঠবেই। দোষের
নয়। দেয়ালের আয়না আমাকে ডাকছে----
নিষ্ক্রিয় ছায়ার বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি।
                    

একদল উট

সেবার মরুদুর্ঘটনায় পড়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা
হল। বেশ কিছুক্ষণ জ্ঞান হারিয়ে বালিতে শুয়ে
ছিলাম। আমার জামা জুতো পকেট রুমাল ও
বোতাম চশমার কাচে মরুউটের নম্র স্বভাবের
গন্ধ ছেয়ে ছিল। অস্পষ্ট কিছু মনে আছে।

একদল উট আমাকে ঘিরে ছিল এবং বেশ
কিছুক্ষণ ছায়ামগ্ন রাখে। কয়েকজন
উটচালক কিশোরের আন্তরিক সেবায় দ্রুত
সুস্থ হয়ে উঠি। ওদের পরনে আলখাল্লা, ছেঁড়া
মলিন ও তাপ্পিমারা। উত্তাল সমুদ্রের
সাহসী মাস্তুল যেন!

সাদর আমন্ত্রণে ওদের গ্রামে একরাত্রি কাটিয়ে
এলাম। অপরিসীম আনন্দ পেয়েছি। সযত্নে
রেখেছি উপহারের কাঁটাঝোপ ও
মরুদ্যানের স্মৃতি!
                     

ঈশ্বর  ধর্ম‌  রাজনীতি

কোন সরলরেখা সর্পিল হাঁটবে না। ত্রিভুজের 
চতুর্থ বাহু সম্পূর্ণ অবাস্তব। চলার পথটা
কেন নদী বলে মনে হয় ;  কেনই বা
হাঁটা থামলে রাস্তাও গতিহীন হবে----এই সব
প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে পারেন পদাতিকগণ।

আমাদের যাবতীয় দুর্বলতার হেতু ওই এক
ঈশ্বরনির্মাণ! প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে তৈরি
হয়েছে সূচিপত্র। যদিও কালক্রমে ধর্মের
আধিপত্য বেড়েছে। এখন তো আবার সে-ই
ঈশ্বর ও ধর্মকে গিলেছে অসহিষ্ণু রাজনীতি!

                
ছায়ার অন্তরালে

যে কোন গল্পের মধ্যে একটা মোচড়, একটা
ঝাঁকুনি থাকে। থাকতেই হবে। তবে তোমার
আচরণের মধ্যে কোন প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া
চোখে পড়ে নি। আশ্চর্য এই সহনশীলতা!
মুখবুজে সব কিছু মেনে নেবার এই বৈশিষ্ট্য
তোমাকে মোটেই উজ্জ্বল করেনি।

ছায়ার অন্তরালে ঘর সাজিয়েছো। আলোয়
রেখেছো বহির্জগৎ। এ পর্যন্ত যদি সব ঠিকও
বলি, তবে বদ্ধ জলাশয় মনে হচ্ছে কেন?
স্বরলিপি ও গান কুয়াশাচ্ছন্ন। নীরবতাই বর্ম
তোমার। দূর নক্ষত্রের মতো অনুজ্জ্বল তুমি!

তোমাকে নিয়ে কোন গল্পই লেখা হল না।
 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন