আমিনা তাবাসসুমের কবিতা


জীবন্ত স্মৃতি ঘেরা


বুকের ওপর বুক রাখলে ধুয়ে যায় সব অভিমান
রাত জাগা গল্পের কিস্যা হয়ে ওঠে অভিনব
কিছুটা মেঘমেদুর নেশা, কিছুটা জল হাওয়ায় বৃষ্টি
ছুটে ছুটে আসে দু ঠোঁটের নৌকার মুখোমুখি
না, বিষাদের কোনো পরোয়া করি না আর
এখন তো নদীর সাথে মিশে যাওয়া মন
তিউনিশিয়ার ভাঁজ করা নরম চিবুকে
প্রিয়তম, তুমি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠো অবলীলায়।
তবুও তো বুকের ভেতর লাল আগুন
তবুও গ্রীষ্মের দাবদাহে অসীম ফাগুন
বন্ধ হৃদয়ের কোনো চিলেকোঠায় 
টুকরো টুকরো জীবন্ত স্মৃতি ঘেরা জীবন।
এখন আমি নাবালক হলে তুমি সামনে তাকাও
খোলা চুলে সরে সরে যায় ঘড়ির কাটা
ওহ সোনা, অপবাদের খাতাটা এবার বন্ধ রেখো
এ নারীর অর্ধেশ্বর তুমি, এঁকে নিও চোখের তারায়।


আদিম ধ্রুবতারার অনুপল হাসি

প্রচণ্ড শীৎকারে ভেসে যায় দুটো শরীর
কিছুটা বল্গাহীন অথবা মিশে যাওয়া দূরত্বের সুর
জিসম কি খুশবু নিয়ে আসে আত্মার শান্তি
বহুযুগ এক সাথে থাকা, বহুযুগ ফিরে ফিরে আসে
ঠিক যেন মৃত্তিকার সঙ্গে রোদ
কিংবা কপোত কপোতীর রোম রোম ঘিরে অভিষেক
এখন তোলপাড় অন্ধকার, বাইরে ঝোড়ো হাওয়া
ঠোঁটের ওপর এক পশলা বৃষ্টি
শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাগল করে দেয় তোমার নেশা।
তোমার খোলা বুক আর চোখের তারায়
আদিম ধ্রুবতারার অনুপল হাসি!
তবুও আমার ঠোঁটে বিষ
একটার পর একটা ঘড়ির কাঁটা মাপছে অন্ধকারের গাঢ়ত্ব
সমস্ত ক্লেদ আর গ্লানির মৃত্যু উৎসবে
শোনা যাচ্ছে শীৎকারের শব্দ।
ঘামের গন্ধ শুষে নিয়ে অবিরাম গতিতে
বৃষ্টি পড়ছে মখমলের মতো...


বৃষ্টির আদিম মদিরতায় 

বাইরে অনর্গল বৃষ্টির হাতছানি
অথচ...
ভেতরে একচেটিয়া তোমার বসবাস
তাই কাব্যের পথে হাঁটলেই শরীর নিংড়ে প্রেম আসে
আর গোপন তরঙ্গে ইতালির নগ্ন সেই ভিসুভিয়াস!

তবু প্রকৃতির প্রেমে কার্পণ্য থাকে না আগেই মতোই
যেমন তোমার দু পাশে মিশে যাওয়া কোনো রেণু
একটার পর একটা কবিতা ধুলোয় মিশে কাকবন্ধ্যা হলে
একফালি চাঁদ মুখ থুবড়ে পড়ে
বহু বছর আগের মতই
গভীর আগুন নিয়ে তোমার পাশে এসে দাঁড়ায় 
আমার ডুকরে ওঠা অন্তিম নিশ্বাস।

কিন্তু এদিকে পাখিদের ঘুমন্ত বিছানায়
চমকে ওঠে বিদ্যুতের অস্থি মজ্জা থেকে আলো
তাই চোখের কাজল ঢল হয়ে বৃষ্টি হয়
আর চেহারায় কিছু আদিম মদিরতা
ছুটে ছুটে যায় তোমার জাগতিক দুর্বলতায়।


গোধূলির নৃত্য 

সন্ধ্যার শুভারম্ভে লাল হয়ে ওঠে প্রকৃতির রূপ
সবুজ পাতা থেকে মসৃণ ত্বক
সবই সূর্যের ঢলে পড়া ঠোঁটে আগুন জ্বালায়।
এখন একটা নাম না জানা পাখি ডেকে চলেছে একটানা
তাই সামনে কোনখানে পা ফেলবো সে নিয়ে মাথা ব্যাথা থাকলেও
বিশ্বাসের থলিতে ফাঁক নেই এতটুকু।
এই তো কিছুক্ষন আগে কথা বললাম জীবনসঙ্গীর সঙ্গে
ধাপে ধাপে বেড়ে ওঠা সিঁড়ির এখনও অনেকটা পথ বাকি
জানি, হাঁটতে হবে লক্ষ্যের চূড়ান্ত সফরে।
তারপর তাক লেগে যাওয়া চোখের নিচে 
যে অবজ্ঞা লুকিয়ে রেখেছিল মানুষ
তার পরতে পরতে সাজিয়ে দেবো শিউলি ফুল।
গোধূলির নৃত্যে তখন আবারও নতুন করে আলো জ্বলবে
সেই সঙ্গে জ্বলে উঠবে আরও একটা আগুন
বহুদিন আগে ছেড়ে আসা কোনো প্রাক্তনের বুকে।


বুনিয়াদহীন রহস্যের হাতছানি

বুনিয়াদহীন রহস্যের হাতছানি নিয়ে
এগিয়ে যাওয়া। এগিয়ে যাওয়া অলীক কল্পনায়
ঘুমহীন রাতের অন্ধকারে সাদা ছত্রাক
একখণ্ড ছাই থেকে মাথা তোলে।
সেখানে অন্যায়ের একটা পর্দা সরিয়ে নিলে
মন খারাপের আসা যাওয়া।

বারুদে ঢল নামে গন্ধের
মৃত্যুর পর পুড়ে যাওয়া মনের অলিতে গলিতে
শ্রাবণ আসে দুর্বিষহ।

সীমানায় সৈনিক পাহারারত, তবু
সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে
দুটো ডানায় কল্পনার রংধনু, সোনালি আলো।
ফুরানো অতীত জুড়ে ভুলে যাওয়া কিস্যা
এগিয়ে আসে বিমূর্ত ভাবনার থরে থরে।

3 মন্তব্যসমূহ

  1. কি অসাধারণ কবিতাগুচ্ছ! পড়া হয়েও পড়ার রেশ থেকে যায়। সবগুলি মিলে যেন একটাই জার্নি। খুব সুন্দর।

    উত্তরমুছুন
  2. প্রতিটি কবিতাই অসাধারণ!!শুভেচ্ছা রইল অন্তহীন!!

    উত্তরমুছুন
  3. বাহ্ নতুন কবিতার সজীব অনুভূতি। আপ্লুত হলাম

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন