রিতা মিত্রের গল্প

চেতনা
    
সকাল - সকাল উঠে হাঁটতে যাওয়া বহুদিনের অভ্যেস।  তবে আজ সকালে উঠতে দেরি হয়েগেছে। তাই হাঁটতে বেরিয়ে চেনা পরিচিত কাউকে দেখতে পেলাম না। 
একা একা পথ চলছি। যে পথে রোজ সকালে হাঁটি  সে পথ এখন গাড়ি ঘোড়া চলাচলে বেজায় ব্যস্ত। 
তাই গলিপথ ধরলাম। এখানেও নিস্তার নেই। সেই সাইকেল রিকশা আর টোটোর ঠ্যালা। দিনদিন যেন রাস্তাগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। 
তা যাই হোক, যতটা গা বাচিয়ে হাঁটা সম্ভব ততটাই সাবধানে পা ফেলছি। 
অনেকটা হাঁটার পর একটা খোলা জায়গায়। মাঠ বলা চলে না তবুও মোটামুটি খোলা জায়গায়। দুএকটি গাছ আছে মাঠটি ঘিরে।তার চারপাশে বাড়িঘর। 
হঠাৎ খেয়াল করলাম এক জায়গায় বেশকিছু লোক জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কৌতূহল বশতঃ আমিও এগিয়ে গেলাম। 
  দেখি একটি গাছের নিচে একটি তরুণী দু হাঁটু মুড়ে নিজের মুখ লুকিয়ে বসে আছে। তার শরীরে কাপড় বলতে কিছু নেই যা দিয়ে সে লজ্জা নিবারণ করবে। জীর্ণ শরীর, চুল এলোমেলো, সারা গায়ে ক্ষত র চিহ্ন। না জানি গত রাতে তার উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গেছে। কোন ক্ষুদার্ত রাক্ষসের কবলে পড়েছিল কে জানে! 
  সে কে? তার নাম, বাড়ির ঠিকানা কেউ জিজ্ঞেস করল না। 
    কেউ বলল - মেয়ে মানুষটি বদ চরিত্রের, কেউ নষ্টামেয়ে, বেহায়া, কেউ বলল- আজকাল  টাকা পয়সার জন্য   মানুষ কী না করে ---
      আশেপাশের বাড়ির ব্যালকনি থেকে মানুষের উঁকিঝুঁকি শুরু হল। 
অনেকে পরিবারের মহিলাদের ভেতরে ঢুকতে বলে নিজেরা দাঁড়িয়ে থাকল।  ভিড়ের যুবকরা কুৎসিত  মন্তব্য করে। তাদের নজর যুবতীর শরীরের ভাঁজ দেখে। মাঝ বয়সী ভদ্রলোকেরা কিছু না বললেও বাসনার লালা জমতে থাকে মুখগহ্বরে, তারা ঢোঁক গেলে মাঝেমাঝে। 
হঠাৎ ভিড় ঠেলে একটি ভিখারি সেখানে উপস্থিত। সে আর কেউ না
বাজার চত্ত্বরের পাগলি। যাকে সব সময় এদিকে সেদিকে কাপড় কুড়াতে দেখা যায়। তার কাঁধে সব সময় একটা পোটলা থাকে,ছেঁড়া ময়লা কাপড়ের। কুড়িয়ে বাড়িয়ে যা পায় খায়। কেউ দয়া করে কিছু দিলে হাত কপালে ঠেকিয়ে সেলাম করে।  সারাদিন আপনমনে বকবক করে ঘুরে বেড়ায়। 
সে ভিড় ঠেলে মেয়েটির কাছে যায়। তারপর নিজের নোংরা  পোটলা খুলে একটা ময়লা কাপড় বের করে তরুণীর শরীরে জড়িয়ে দেয়। 
দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের দিকে চেয়ে দ্যাখে, আকাশের দিকে তাকিয়ে হাততালি দিয়ে দিয়ে হাসে। 
  আস্তে আস্তে ভিড় সরতে থাকে। আমিও বাড়ি ফেরার পথ ধরি। আমার মধ্যে অনেকগুলি প্রশ্ন জন্মাতে থাকে। 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন