নতুনধারার কবিতা
ফাহিম ফিরোজ বাংলার (বাংলা ভাষার) 'নতুনধারা'র কবিতার জনক তথা প্রবর্তক। এই প্রসঙ্গে
ফারুক আফিনদী-র লেখা একটি টেক্সট-
ভূমিকা হিসেবে শুরুতেই রাখা হল:-
পুরনোর প্রতি মনোনিবেশহীনতা মানুষের অন্যতম স্বভাব। কেননা সহজাত প্রবণতা হিসেবে মানুষের চোখ নতুনের দিকে আকর্ষিত হয় দ্রুত। আর এই নতুন মানে হলো সাম্প্রতিক। যার সর্বাধিক চর্চিত, উচ্চারিত শব্দটি হলো আধুনিক। কিন্তু দেখা যায়- চিন্তা হোক, চেতনা হোক, শিল্প হোক, সাহিত্য হোক- কখনো দীর্ঘকালের জন্য সেসব আধুনিকতার লেবাস নিয়ে স্থায়ী হতে পারে না। সময়ের মর্জি ও প্রবণতা মাফিক একে প্রতিনিয়ত দৌড়াতে হয়। শব্দের দিক থেকে তাই এক যাযাবর আধুনিকতা, সাহিত্যে যা একটি আন্দোলন, যা মূলত ১৮৯০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে বিকাশ লাভ করে এবং এর পর শতাধিক বর্ষ কেটে গেছে; এখন মন বড় বিবাগী হয়ে উঠেছে। তাই জন্ম নিয়েছে নতুনধারা।
সম্প্রতি বাংলা কবিতায় ‘নতুনধারার কবিতা’ চর্চা চলছে বেশ জোরেশোরে। নব্বই দশকের একমাত্র স্বতন্ত্র স্বরের কবি ফাহিম ফিরোজ এ ধারার জনক।
ইতিমধ্যে নতুনধারার কবিতার ইশতেহারও ঘোষণা করা হয়েছে, যদিও মুদ্রিত আকারে নয়। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত সেসব ইশতেহার রয়েছে নতুনধারার ফেসবুক পেজে। অচিরেই মুদ্রিত আকারে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জানান দেয়া হবে সেসব।
নতুনধারার কবিতার কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রমিত ও আঞ্চলিক ভাষার শৈল্পিক মিলন এবং সম্পর্ক ও আত্মীয়বাচক শব্দের প্রয়োগ- এ দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। এর আদর্শও রয়েছে কিছু।
ফাহিম ফিরোজের ঘোষিত ইশতেহার অনুযায়ী, হাজার বছরের বাংলা কবিতায় কয়েকটি গ্যাপ রয়েছে। আত্মীয় ও সম্পর্ক বাচক শব্দ নেই। অথচ নাটক, গল্প, উপন্যাসে রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কবিতায় নেই কেন? নতুনধারা এসব যোগ করতে চায়। সম্পর্ক ও আত্মীয় কিন্তু পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অথচ এ শব্দগুলোই আধুনিক কবিতায় অনুপস্থিত।
নতুন শব্দ সৃষ্টিতে নতুনধারা বেশ জোর দেয়। কারণ, যত বেশি নতুন শব্দ সৃষ্টি হবে, তত বেশি আমাদের ভাষা সমৃদ্ধ হবে। হাতে গোনা কিছু কবি নতুন শব্দ তৈরি করেছেন অতীতে। যা হিসাবের বাইরে, বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। নতুনধারা তার ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। প্রমিতের সাথে লোক ভাষা যুক্ত হলেই তা আধুনিকতা থেকে পৃথক হয়ে যাবে। তবে দুয়েকটা মাত্র লোক শব্দ যথেষ্ট নয়। পঁচাত্তর ভাগ প্রমিতের সাথে পঁচিশ ভাগ লোক শব্দ অথবা সমহারে প্রয়োগ করতে হবে নতুনধারার কবিতায়।
পুঁজি ও অপুঁজির মধ্যে যে বিরোধ রয়েছে নতুনধারা সেটা ভেঙে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চায়। সংঘাত, সংঘর্ষ কোনো শান্তি বয়ে আনে না। সেসব বিপ্লবীদের কাজ। নতুনধারা বিপ্লবী নয়। তবে নীরব বিপ্লবের একটা ব্যাপার রয়েছে এর মধ্যে। নতুনধারার অস্ত্রটা হবে ভাষার। ভাষা থেকেই আঘাত আসবে পুঁজির অহমের ওপর। তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রজনদের ভাষার সঙ্গে অশিক্ষিত শ্রেণি তথা মাটির ভাষার মিলন ঘটিয়ে একটি কার্যকর ‘মানুষ সমাজ’ তৈরি করতে চায় নতুনধারা।
জয়তু নতুনধারা।
ফাহিম ফিরোজের কবিতা:-
এ.
দর্জি উপ্যাখান
আইলো অফিসে যে নতুন
খায়না কিছুই। নাক- মুখ- চোখ দিয়ে সব মিষ্টি ফেলে দেয়। কিযে ভালো!
আলোর ঝালর !
নাচতে নাচতে দাদুকে এসব
বাড়িতে আইসা কই--
মুখটারে, কামরুলের আঁকা টিক্কা
বানিয়ে বলেনঃ
দর্জি যে দিকে যায় সেলাই করবেই!
এ কথার অর্থ জানিনা--
দর্জি যে দিকে যায় সেলাই করবেই! সোহরাব স্যারকেও বলি।হাসি তার সান্ধ্যভাষা!
একদিন বাড়িটা মাপতে গিয়ে দেখি, সেই বিশ্বাসের সব ছিদ্রে নদী,সাগর সবই নিচ্ছেন হাইসা খুব।
শেষে, যখন অনেক পর বুঝলাম তখন আমার ভেতরে নাইরে আমি--
দেশটা গেলরে...
বি.
গেস্টিক চিত্র
কে যেন চামড়ার কুঠুরিতে কি রেখে গেছে!
বৈদ্য কয়, তেঁতুল পানি; আব্বাজান হারিয়ে যান পীরের ভেতর। দাদাজান, আঁকড়ে ধরে আছেন প্রানপণে
গাছগাছালি।
আর মামীমা,এখন ফকির কে সোফায় বসতে দেন। কিন্তু আমি লুকিয়ে চিবোই ঝালমুড়ি! এ দিকে ভেতরে সবই পাটজাঁক
ফোলে,ফেঁপে!
শিং হয়ে ওপরে মারছে ঘাই।
গোরস্তানের হাড়, পায়ের নখ দিয়ে ঢুকে
জামার উপর দিয়ে দেখছে আকাশ!
নাকি নভই দেখছে উল্টো দাঁত মেলে এসব?কাল,এন্ডোস কপি
তার পর আমি নামুম আকাশের ভূমিকায়...
নোট:- নামুম--- নামবো।
সি.
পর্যায় বা পরবর্তী
ক.
আমি আর কোনো দিন ফিরবো না।চোখের পানি পায় ফেললেও।
ভালোবাসা যখন ধারালো ছুরি হাতে দাঁড়ায়, ঈশ্বর তখন খুব পাল্টা আঘাত করে -- কারণ, তুমিই একদিন নিজ থেকে...
প্রথম লিপিকা
হায় প্রথম লিপিকা!
খ.
পাশের বাড়ির বুড়িনানি কয়েছিল -- আস্ত ছিনাল; হাংগার আগে, দেবরের লগেই গোপনে বানাইছে ফুটবল। জানালারা এখনো কানাকানি করে। মস্ত মাগী, চৌদ্দ জায়গায় হয়েছে রাতের ভাঁজে শক্ত ভেসাল। মাছিরা কয়ে দিছে বাতাসের কাছে সব। কত মাছ ধরছিলাে! অথচ দিছিলা প্রথম লিপিকা হায়
প্রথম লিপিকা!
গ.
চাওয়া, ফায়ার সার্ভিস মই দীঘল দীঘল। আরো চায়। ধরাখায় কত শরীয়ত জন!মন্জুর মা শোনো, হুনো
প্যান্ট ফেলে সব শালা দৌড়।
শাকিলের কাকী,
দ্যাখ, লেখ -- বানাইছে সবার ড্রেসিং মোরগ!এইতো সে জন!প্রথম লিপিকা হায়
প্রথম লিপিকা!
ঘ.
যেদিন দিছিলো গুঁজে, এই হাতে...
আছিলো বসন্ত খুব-- ফুল, পাখির ক্যাবিনেট। আছিলো আছিলো শিহরণ! কাম সেদিন দাফন হয়েছিল। সেই কিনা এই?
ফোনে মাছিরা জানায়, দিনান্তর রাতান্তর খাট ভাংগার বয়ান।
খাল পারের শেফালী বৌদি কয়, আরো কত সব !
ঙ.
এখন শিকল পরা; অন্ধকার। আর কত...। চতুর্ভুজ সময় উনার করেছে ডিলিট। পিশিমা, আমিও নেই। বানাইছে আগেই শুকনো নারিকেল। দীর্ঘশ্বাস তাই গাইডেড মিসাইল। ঘুরে,খোঁজে বের করবেই যেখানে আড়াল...
চ.
বইতে রয়েছে স্বর্গের পীরিতি, শরীরে কোথায়?
বি:দ্র:-(হাংগা-- বিয়ে।ছিনাল -- নষ্টা। দেবর--বরের ছোট ভাই। নানী-- মায়ের মা।হুনো-- শোনো।দিছিলো-- দিয়েছিল।আছিল-- ছিল।বানাইছে -- তৈরি করেছে।কয়েছিল-- বলেছিল।)
ডি.
সাত তালা
যে দরোজা খুলে না সে কিসের দরোজা?
রাইতে বাইরে শুধু দাঁড়িয়ে রলাম..
অপেক্ষায় সিংহ জন্মালো। মারলো সাতটি তালা বাইরে থেকে। খাইছে বহুত আখরে চিবিয়ে। মর মর শালী এইবার...! এত দিন কিছু কই নাই। দিদি ভাই, শোনো, দাঁতে দাঁত চেপে গেছি। মনির মা, ঝুলছি ড্রেসিং মোরগ হয়ে শত ক্যালেন্ডার,
আকাশের তারে।
কিযে হাসে দেখে আজ রোদ ও পাখিপাল...। নহে নহে সিংগেল রাত। বহুরাত দেহে জড়িয়ে থাকতে ভালোবাসে! সাতটি তালা তাই মারলাম সর্ব শক্তিময়। মর
কুত্তী,অন্ধ কুটিরে ফৈজী বাঈ রুপ!
আছিলো আছিলো ক্লাস ম্যাট রফি।আছিলো শাফায়েত নিজস্ব
মাছি। কিন্ত উনারা চুপচাপ আজ গামছা মুখে
ভরে। কয়না কিছুই! এতকাল হুদামিছাই গোপনে বনে আলো চলাচলের তথ্যদি দিছে !
আজ পকেটে যেই টান,দেখি সবার মুখে শুয়োরের মাস্ক! কইছে,বলছে সেই কফি দোকানী শাহবাগ মোড়ের আজিজ, কিছু দেখিনাই সাহেব-- চোখ থাকে আমাগো শুধুই কাপে! অথচ বেটা দীর্ঘ দিন উভয়ের নিউজম্যান ছিলো!
পথে একদিন দৃশ্যমান মোটা সেগুন চৌচির,পড়ে আছে। বুকের ভেতর হাত দিয়ে দেখি, এযে জীবন্ত উপমা! জীবন তখন সত্যি
আড়াল শিশি খোঁজে!
ই.
বইশক্তি
নরক থেকে ফিরিয়ে দেওয়া বইগুলো
স্বর্গে গিয়ে আজ বিশ্বময়
খালামনি, এতফুল আজ রাখবো কোথায়?
কারে দিমু? তার হাত আছে তবে কব্জিবিহীন
অক্ষম; কম্পমান
কুসুমগুলো সত্যি তুলনাহীন। মালিককে
আস্তরাত জাগ্রত রাখে
নিদ্রাকে রিপ্লেস করে দেয় সোজা হাবিয়ায়।
ভাতঘুম, তোমাকে সেলাম! না চেতেই পিসিমা সব আজ হাতের মুঠোয় – দিনগুলো পরিময় - ঢেউমালা অথৈ কতই...
কিন্তু ঠাক্মা, কিছুই ভাল লাগেনা আমার শুধু নাক-মুখ দিয়ে ঝরে, এতকাল ভিতরে রাখা মহাটান নিমফল !
নোট : কারে দিমু- কাকে দেব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন