তানিয়া হাসানের কবিতা
১.
অনিয়ন্ত্রিত শ্বাস -
দীর্ঘশ্বাসে কমে যায় শ্বাসের আয়ু।
টকটকে টিয়ে সাদাশাড়ি
পরলেও চোখের দোষকাটেনা
উজ্জীবিত হয়না স্নায়ুবিক দৃশ্যপট
তবুও চুল আওরায় অনিয়ন্ত্রিত ধোঁয়া।
এমন মনখারাপের দুয়ারে একটা আমি
পেখমমেলে, হিজল ফুলের কারিশমা দেখে
কুমার পাড়ের আরশি ঘুম পোড়ার গন্ধে
মেলে দেয় শ্বাস
একশত আট ভাঁজের সুখ বাড়ে
সদর ঠোঁটে সিলমোহর এঁকে
ইচ্ছেরা ভুগে সুরঙ্গ ক্ষুধায়
চমকের দুরত্ব হয় দীর্ঘ
শীতলচিত্রপটে চুপসে যায় বর্ণ
মানুষ ঘরে ফিরে
তাহাদের আয়ু ঝরে যায়
২.
ছলের বিনয়-
এই তিলকশয্যায় একটা জলপিরান
খয়েরী চোখের এমনতেমন
ভেলকি, বশে এনেছিলো সিল্কি সেলোয়ার
অবোধ বারান্দা সভ্য সভ্য ধান্দায় দুয়ার খুলে
হলদে মেঘের আঁড়খেয়াল
তারে ধুয়ে ফের আসে এঠো আয়নায়
ভোর হবে জেনেও চন্দ্রধ্যানে মগ্ন
নারিকেল মুকুর
উষ্ণআভায় তার বৃষ্টি বৃষ্টি ঝরে...
বিনয়ের সহজ টেক্কায়
নীল বিক্রি করা চাঁদ আর বসন্তনিয়ে
খেলা রোদের সরল অবস্থান
মোনালিসার ঠোঁটের কোণে
বিশ্বাস মূলত বিদ্যুৎভ্রম
স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে গিলে খায়
৩.
নোনা এসিডিটি -
তোমারে খুব দেখতে মন চায়, জানো তুমি ক্যান!
জানো না তো!
তোমার চক্ষে আমি, আমারে দেখি, আমার লাইজ্ঞা যে বালিশ আগলিয়ে রাখো, তার রঙ দেখি!
আমারে খুলিয়া পড়ার পরেও
তোমারে দেখিতে মন চায়!
নুনের জলে সাঁতার কেটে কতটা সুন্দর হয় তোমার দাঁত! তার আঁচড় খেতে মন চায়...
তোমার চোখ দেখলেই আমার এসিডিটি বাড়ে
বুকের ভাঁজ গুনতে হয় না
আমারে ভাইবা যেদিন তোমার এসিডিটি হবে!
সেদিন তোমার ঘরে
এক গ্লাস লবন পানি নিয়ে আসবো
তুমি চোখ খুলে খেয়ে নিও
আন্ধার ফুরিয়ে যাবে
৪.
সেলিব্রিটি বাজিগর -
যে পরগাছার আঁচড়ে শহর কাঁপে
দূরত্বের সীমা অতিক্রম করে দূরত্ব
পাহাড়ের চূড়ায় দাড় করিয়ে দেয় সকল দায়
একে কি নেহাৎ আগন্তুক বলেই গা ভাসাবে
তোমার আমার ঝুলে থাকা রাত
মোহনীয়তার মোহে
বাদুড়ের শরীরে খুঁজে আশ্রয়
পা বাড়াতে পারেনা কূসল ভূমিতে
চোখের বালির খয়েরী টিপ চুরি করে
তুমি সমুদ্র হও
গরদহীন খাঁচায়
অসীমসঙ্গের মুকট হয়ে
সেলিব্রিটি গালিচার গভীরে যাও
জোকারের ঢঙে
এইসব নোঙর এড়াতে শূন্য হয়
একটা সানস্ক্রিন জোছনা
মেঘ হয় কাশবাগান
তুমি-আমি থেকে যাই হু হু হাহাকারে
৫.
আক্ষেপের সাইরেন -
বিন্দু ঘামের মায়ায়
এক উজান লেবুর শরবত
টগবগিয়ে শান্ত হয় শ্রান্ত
কেটলির মাঝখানে
প্রবাহিত বিদ্যুতের লাইনগুলো
ঘুমিয়ে থাকা রোদের অপেক্ষায়
আক্ষেপ ভুলে অক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
একটা লাল সাপের
লালায় স্নাত হয়েও
রুক্ষচুলে হাহাকার চিত্রে
ঝুলে থাকে মাকড়সা
শূন্য বেডকভারে
ঝলমলে বারান্দায় বিড়ালের প্রণয়ে
একটা ধোঁয়া বয়
থোকা থোকা ধোঁকায় ঈশ্বরী হয় ঐশ্বর্য
শুকিয়ে যাওয়া চোখে
নুনকনা ফের আসে ফিরে
আমাদের বসন্তগুলো
সাইরেন না বাজিয়ে
এড়িয়ে যায় গন্ধরাজের দরবার
স্পর্শহীন ঠোঁটে
স্পর্শ করে রাজটিকা
সিসিক্যামেরার আওতাভুক্ত হয়ে
এক হই
মিসে যাই
মলাটবিহীন কাব্যগ্রন্থে
শব্দের ঝর্না বয়ে যায় ভুল ম্যাপে
রাস্তা হারিয়ে ঘুরে দাঁড়াই
রক্তস্রোতে
আমাদের গল্পটা ফুটেজ রেকর্ড
হয়ে বাজে ফুরিয়ে যাওয়া চৈত্রে
নিশী-ভোরের তোয়াক্কা না করেই
হই অমর ভবিতব্য
৬.
নিঃশব্দ তোলপাড় -
তোমার সাথে এই দীর্ঘ যাপন ক্রমশ উন্মুক্ত করেছে বেডকভারের ভাঁজ
ঘুমিয়ে থাকা ঠোঁটে উরন্ত হচ্ছে
অবলা সহায়
সেকেন্ডের সমীকরণ অসমাপিকা ক্রিয়ায়
একটা উগ্র কণ্ঠ ভস্ম করে ভাসায় বাহাত্তর কার্যক্রম
জমে যাওয়া নিরেট গুহায় বৃষ্টি নামে
বয়সের দোষে টসটসে ফোড়া টগবগ করে
তাদের শরীরে তুলো ছোঁয়াই না
জ্বর জ্বর ভয়ে
তোমার তলপুকুরের তোলপাড়
তলিয়ে দেয় আস্তিক শরীর
নিঃশব্দের
দোলায় দোলে লাউফুল
অশ্লীল হয় বখাটে বর্ণে
অন্তমূলে আকাশ পুষে
ভুগে আকাশী সল্পতায়
দ্বিধার ক্ষুধায় আরো উন্মুক্ত বাক্যে করি তোমায় রচনা
দৃষ্টির স্পর্শে আস্ত তোমায় শুষে
আমি অমর হই সুতোহীন সময়ের মালায়
৭.
ফের চুমুকের নেশা-
বিবিধ বিনয়ী স্বল্পতায়
চাঁদ দেখা হয় না বহুতকাল
বাঁশির শরীরে চান্দুর ঘ্রাণ
উড়ুউড়ু গ্লাসে ফের চুমুক
চন্দনা রঙের চিৎকারে
বলা হয়না আর
তোমারে খুব পড়িতে মন চায়
বক্ষবন্ধনীর ঘামে
স্যাঁতসেঁতে তলপুকুরে
কিংবা প্রেতপোড়া বর্ষায়
৮.
লালটিপ বৃত্তান্ত-
কয়েক সেন্টিমিটার পার হলেই
তোমার রিনঝিন ভাতের হাড়ি
ঝুম গোসল ঘর
তবুও ডালের সাথে
একটা শুকনো মরিচের স্বাদ
বা বালিশের খুনসুটির ঘ্রাণে
উন্মুক্ত হওয়াটা ভীষণ রকম উড়ে যায়
তোমার পরচোখের চোখাচোখির চক্রে
যে ঘুণপোকা উস্কে ওঠে
তার চুলে আমি সুগন্ধি বিকেল পড়িয়ে
গড়িয়ে যাই সমাপ্ত গদ্যে
সে পথে আর রিকশা নেই!
আমার কপালে লাল টিপ
কি আর পরা হবে না!!!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন