জীবন থেকে কবিতায় এবং কবিতা থেকে জীবনে ফেরা 
পর্ব- আট

আফজল আলি

বিষয় বস্তু যখন হয়ে দাঁড়ায় কবিতা লেখার ঘোর , তখন ব্যাপারটা আর সাধারণ থাকে না।  একজন কবি কি শুধু ঘোরের মধ্যেই কবিতা লেখেন । নাকি ঘোরের মধ্যে থেকেও আত্ম সচেতন এবং শব্দ সচেতন থাকেন। এটা ঠিক যে কবিতা লেখার সময় একটা ঘোর অনুভব থাকে , কিন্তু সেই ঘোর সর্বস্বতাই একটা উত্তীর্ণ কবিতা লেখার পক্ষে সব সময়  যথেষ্ট নয়।  ঘোরের মধ্যে শব্দগুলো automatic চলে আসে,  খুব দ্রুত কবিতা লেখা হয়ে যায়।  একজন কবি যখন নতুন লিখতে আসছে তার ক্ষেত্রেও তো ঘোর কাজ করে,  তাহলে সেই নবীন কেন সেই সময় খুব ভালো লিখতে সক্ষম হয় না।  কবিতার ও  স্তর থাকে  ,  বিভিন্ন বয়সের লেখার তারতম্য হতে থাকে সেই স্তর ভেদ সাপেক্ষে।  একজন তরুণ কবি কি শব্দের সেই গভীরতা ছুঁতে সক্ষম হন । তাই যদি না হবে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ' নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ ' কীভাবে লিখলেন ওই বয়সে যা এখনও আমাকে অবাক করে রাখে । উনি জাত কবি বলেই কি ব্যতিক্রম ছিলেন । কবিগুরুর অনেক কিছুই ব্যতিক্রমী  যা সাধারণিকরণ করা যায় না। 

এই ঘোর নিয়ে অনেকে নানান কথা বলেন । কেউ বলেন এটাই হল ঈশ্বরের দান ,  কেউ বলেন শব্দ ব্রহ্মের কারসাজি  , আবার বৈজ্ঞানিক পন্থায় বলা হয় একপ্রকার electromagnetic field তৈরি হওয়া শরীরের অভ্যন্তরে যা শরীর এবং মনকে ঝাঁকিয়ে দেয় , আবার কেউ কেউ বলেন ইহা মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের অন্তর্গত পিনিয়াল বডি নির্গত সংকেত যা রসায়নে জারিত করে।  এখন কবি নিজেও জানতে পারেন না যে কবিতা লেখার সময় তাঁর মধ্যে এত কিছু ঘটে। ঘোর হল একধরনের কম্পন যা থেকে শব্দ কম্পাঙ্ক তৈরি হয়।  এই শব্দ কম্পাঙ্ক থেকে কবিতা।  বিষয়টা এক্কেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে এমনটা একদমই নয়।  কিন্তু বক্তব্য হল এই ঘোরের মধ্যে প্রজ্ঞা,  বোধি , দর্শন  তথা discourse  , এগুলো কীভাবে আসে।  এগুলো তো বয়স জনিত অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত অথবা অন্বেষণ যা পড়াশোনা এবং জ্ঞান অর্জন থেকে আসে। আর এখানেই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য।  একজন কবি ঘোরে হয়তো কবিতা লিখতে পারেন  বা লেখার ঘোর তাঁকে কিছুটা সাহায্য করে,  তবে তাঁর লেখার পরিপক্বতা নির্ভর করে তাঁর প্রজ্ঞার উপর।  ঘোরের মধ্যে ও  কবির আলাদা এক সচেতন এবং কিছুটা অতিচেতন সত্তা তাঁর শব্দ চয়নকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে  যা কবি নিজেও বুঝতে পারেন না করণ এই ঘটতে থাকা সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়ার মতো খুব দ্রুত ঘটতে থাকে।  কবি শুধু দেখতে পান বিষয়টি ঘটছে ।  যেমন একজন মানুষ যখন কোনো কিছু দেখেন , তখন সে দেখতে পায় যে তার চোখ কিছু দৃশ্য দেখছে , কিন্তু এই সামান্য দেখার মধ্যে শরীর এবং মস্তিষ্ক একইসঙ্গে কত কাজ খুব দ্রুত সম্পন্ন করে ফেলে , তবে কোনো বস্তুর বা কোনো কিছুর ছবি সে দেখতে পায়।  ঠিক সেই রকম ই ঘটে কবিতা লেখার ক্ষেত্রে।  কবির প্রজ্ঞা  , দর্শনবোধ বা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হওয়া বোধ , সঙ্গে পড়াশোনা  কবিকে ,কবির অন্তরে পূর্ব থেকেই তাকে তৈরি করে রাখে synthesized and upgraded একটি অবস্থানে ,সেই অবস্থানে থেকে কবির অন্তর্গত ব্যপ্তি,  তৈরি হওয়া ঘোরকে নিয়ন্ত্রণ করে আগত শব্দের স্রোতধারাকে,  কবি কীভাবে লিখতে চান ।  এই প্রক্রিয়াটি বাইরে থেকে টের পাওয়া যায় না।  অবশ্য কবিতা লেখার ক্ষেত্রে যে সব সময় ঘোর আসতেই হবে এমনটা নয়।  এ বিষয়ে আগে কোথাও আলোচনা করেছি হয়তো ।


একজন মানুষের ভিতরে সেই মানুষের ব্যক্তিত্বের frequency তৈরি হয়।  বিভিন্ন শব্দের যেমন বিভিন্ন frequency থাকে অর্থাৎ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং কম্পন , সেই মান থেকে সেই শব্দের তীব্রতা নির্ণয় করা হয় । ঠিক তেমনি একজন  মানুষের জন্য একপ্রকার frequency থাকে।  ধরুন আপনি ফোন করেছেন কোনো এক ব্যক্তিকে । কিছুক্ষণ কথা বলার পর মনে হচ্ছে আর বুঝি কথা বলা যাচ্ছে না  , অর্থাৎ আপনার frequency ঠিক মিলছে না ওপারের মানুষটির সাথে।  এই frequency মোতাবেক প্রতিটা মানুষের একটা লেভেল তৈরি হয় এবং তা ক্রমশ উন্নত করা যায় যদি চেষ্টা করে।  একজন শিক্ষিত রুচিশীল মানুষের frequency র  সাথে অন্য একজন অশিক্ষিত মানুষের সাথে মেলে না।  আবার শিক্ষিত হলেই যে তার frequency upgrade হয়ে যাবে ব্যাপারটা তা নয় সব সময়,   কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকেই। কবিতা লেখা একজন কবির inner frequency অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়  , ফলে কবি ঠিক সেরকম frequency র মানুষ ছাড়া বেশিক্ষণ কথা চালিয়ে যেতে পারে না।  কেউ কেউ বলেন ইহা কবির অহংকার  , আবার কেউ কেউ বলেন এটা কবির একলা হয়ে যাওয়া।  কবিতা লেখা ছাড়াও গভীর পড়াশোনা করলেও এটা হয় । আসলে সৃজনশীলতা আর পড়াশোনা এই দুটো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হলেও , সৃজনশীল মানুষ তাঁর নিজস্ব ভাবনার জগত নিয়ে আরো নতুন কিছু সংযোজন করে করে যান , যার নাম সৃষ্টি।  কিন্তু শুধু পড়াশোনা করা মানুষদের চিন্তার সেই প্রক্রিয়াটি থাকে না।  বিজ্ঞানী দার্শনিক এবং চিন্তাবিধদের ক্ষেত্রে inner frequency high হয়ে যায়।  কথাবার্তায় ধরা পড়ে একজন মানুষ চিন্তার বা inner frequency র কোন স্তরে আছেন ।  সেই প্রবাদে আছে   birds of feather flock together   অর্থাৎ এক গোত্রের সকলে এককাছে থাকে  বা এক ই   frequency র  মানুষজনের সাথে একসঙ্গে থাকার প্রবণতা দেখা যায়।  কবি তো একধরনের চিন্তাবিদ  , তাই তিনি সকলের মধ্যে থেকেও কেমন যেন ভিতর থেকে একলা হয়ে যান ।

একজন পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে আকর্ষণ বা টান স্থায়ী হওয়ার জন্য বা দীর্ঘায়িত হওয়ার ভিতরে এই inner frequency খুব কাজ করে।   হঠাৎ করে ভালোবাসা তৈরি হয়ে যেতে পারে  , কিন্তু কিছু দিন মেলামেশার পর যখন দেখা যায় inner frequency ঠিক মিলছে না  , কোথাও যেন মনে হচ্ছে একজনের গভীরতার কাছে অন্যজন ঠিক আসছে না  , তখন আস্তে আস্তে সেই টান বা আকর্ষণ ফিকে হতে শুরু করে।  একসময়ের ভালোলাগার মানুষটিকে পরবর্তীতে ঠিক সেইভাবে আর মনে লাগছে না।  এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত চাওয়ার উপরও  অনেকটা নির্ভর করে।  কেউ কেউ চায় তার partner এর  inner frequency কম হলেও যেন অধিনত বা অনুগত হয়ে থাকে , বা তাকে একজন কাজের লোক হিসেবে দেখা হয় । সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি adjust করতে থাকে।  কিন্তু তা সত্ত্বেও  একদিন না  একদিন ফাটল চলে আসবেই।  তাই সম-তরঙ্গের সাথে মিল মহব্বত অনেক দিন স্থায়ী হয় । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা সব সময় চিহ্নিত করতে পারি না  কোন মানুষটি কোন তরঙ্গে আছে। তাই পরবর্তীকালে ব্যক্তিত্বজনিত সমস্যা দেখা দেয়।  বৈবাহিক জীবনের ক্ষেত্রে এটি একটি বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যদি কেউ বলেন যে পরস্পরের মধ্যে তীব্র ভালোবাসা থাকলে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না । কোনো লজিক কাজ করে না,  তাহলে এই সব inner frequency র  কী গুরুত্ব আছে । ব্যাপারটা কিছুটা সত্যি হলেও 100%  ঠিক নয় । ভালোবাসার ক্ষেত্রে ও বেশির ভাগ সময় লজিক কাজ করে।  ব্যক্তি সত্তার গুণ , চরিত্র , সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির উপরেও ভালোবাসা বা আকর্ষণ অনেকটা নির্ভরশীল থাকে , অন্তত প্রাথমিকভাবে।  পরবর্তীতে উভয়ের মধ্যে একটা টান তৈরি হয়ে গেলে তখন হয়তো একটা মায়া জন্মায়,  তখন প্রাথমিক সেই লজিকটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে,  আবার অনেক সময় ওটাই একটা factor হয়ে দাঁড়ায়।  সেই জন্য কী হয় প্রাথমিক আবেগের ঘোর কেটে গেলে ভালোবাসা স্তিমিত হতে থাকে এবং সমস্যা তৈরি হয় পরে । কিন্তু গুণগত অবস্থান থেকে টান জন্ম নিলে সেই টান দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে কারণ মানুষটার ভিতর সেই গুণ রয়ে যায় চিরকাল।  তবে ব্যতিক্রম সব ক্ষেত্রেই থাকে।  সব কিছু ঠিকঠাক থেকেও তো পরস্পরের মধ্যে মতভেদ হয় , বিচ্ছেদ হয় । তবে তার মধ্যেও লজিক থাকে , কারণ লুকিয়ে থাকে । সে সব বিশ্লেষণের ব্যাপার ।  যদি একজন কবির প্রেমে কেউ পড়েন , কবির সেই কবিত্বশক্তি তো সারাজীবন ই থাকে , তা সত্ত্বেও কিছু কেমন ক্ষেত্রে মতবিরোধ তো হয় ।   খুব সুক্ষ ভাবে ভাবলে বোঝা যাবে কবিতা আমাদের জীবনের উপর কীরকম প্রভাব বিস্তার করে রাখে ভিতর থেকে।
বিতার জন্য বিচ্ছেদ হয়েছে  , এমন উদাহরণ কিছু কিছু আছে বৈকি।  এর কারণে মূলে আছে ওই inner frequency.   কবিতা লিখতে লিখতে একজন তরুণ কবির যখন চিন্তার periphery ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে  , তার মধ্যে ব্যক্তিত্বের সঞ্চার হয় । এটা আসলে একটা self upgradation process.  কবি যখন চিন্তনে upgrade হয়ে যায়  , তখন চলে আসে ব্যক্তিত্বের সংঘাত।  পুরাতন অবস্থানে থাকা যে কোনো একজন partner এর সঙ্গে  মতের অমিল হতে শুরু হয় এবং তা ক্রমশ ক্রমশ বাড়তে থাকে।  হয়তো সব সম্পর্ক বিচ্ছেদে যায় না  ,  কিন্তু তারা ভিতরে ভালোও থাকে না।  তাহলে কি ধরে নিতে হবে কবিরা সামাজিক নন বা সমাজ সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকেন । ব্যাপারটা একদমই  তেমন না , কারণ কবিরাও তো সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই অবস্থান করেন। কবিদের self upgradation হওয়ার সাথে একটা প্রতিবাদী চরিত্র তৈরি হয়ে যায়  , ফলে সমাজের অধোঃগতির নানান দিক সম্পর্কে কবি তাঁর কলমকে শানিত করতে পারেন।  বর্তমান পরিস্থিতিতে সেরকমটা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা না গেলেও কবি তো সমাজের দর্পণ অবশ্যই। 

Inner frequency র  সাথে নির্ভর করে একজন মানুষের mental status .  যখন বলা হয় একজনের mental status খুব high তখন বুঝতে হবে তাঁর inner frequency সেই status এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।  এ বিষয়ে অবশ্যই চলে আসে একজন মানুষের health condition .  ভালো mental status অর্জনের জন্য ব্যক্তি মানুষের শারীরিক সুস্থতা অবশ্যই প্রয়োজন এবং মানসিক সুস্থতা তো বটেই । মানসিক সুস্থতা সুন্দর কবিতা লেখার জন্য অবশ্যই দরকার।  কারণ কবির চেতনার বিকাশ না ঘটলে তিনি কীভাবে উত্তীর্ণ কবিতা লিখতে সক্ষম হবেন । চেতনা বিকাশের সাথে জড়িয়ে থাকে আরো অনেক সব বিষয় যা একজন কবিকে পরিশীলিত এবং মনোজ্ঞ করে তুলতে সাহায্য করে । কাজেই বাইরে থেকে কবিতা লেখা আপাতভাবে সহজ মনে হলেও যখন একজন সেই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন তখন তিনি বুঝতে পারেন আদপে এই শিল্প চর্চার অন্দরে রয়ে গেছে নিজেকে উপযোগী করে তোলার একান্ত প্রয়াস। যে কোনো বিষয়েই নিজের দক্ষতা অর্জন করতে সময় অভ্যাস সাধনা তো লাগবেই। শিক্ষা চর্চা আমাদের মনের ভিতর দ্যুতি সৃষ্টি করে এবং তা প্রতিফলিত হতে থাকে আমাদের কথায়,  চোখে এবং আচরণে ।  সপ্রতিভ আচরণ তো শিক্ষা চর্চার অঙ্গ হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে।  এটা automatic একটা প্রক্রিয়া।  তবে লেখাপড়া শিখলে বা উচ্চ শিক্ষিত হলেই যে একজনের আচরণগত সু-অভ্যাস এবং লক্ষণ বহিঃপ্রকাশ হবে সব ক্ষেত্রে না হতেও পারে।  কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয় । শিক্ষা আলোর পথ দেখায় । তা সত্ত্বেও আমরা সেই মতো আচরণ করতে পারি না।  কেন পারি না সেই দিক কি আমরা ভেবে দেখেছি । আমার মনে হয় একজন মানুষ নিজেকে পর্যালোচনা করলেই এর উত্তর বেরিয়ে আসবে।  আর্থ সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থান ,  প্রেক্ষাপট এই বিষয়ে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করে একজন শিক্ষিত মানুষের উপর । শুধু শিক্ষিত কথাটা বললে একটু একপেশে হয়ে যাবে  ,  সামগ্রিক ভাবে সকল মানুষের উপর । আমরা কেউই  তো সমাজের প্রভাবের বাইরে যেতে সক্ষম হই না।  যদিও সমাজ সব সময় নির্ধারণ করে দেয় না একজন মানুষ কীসে সুখী থাকবে বা কী উপাদানে ব্যক্তির মন ভালো থাকবে। সমাজ একটা কাঠামো এবং অবস্থান নির্ধারণ করে দেয় মাত্র। কিন্তু মানুষ আবার সমাজের-ই  অঙ্গ  , ফলে সমাজের প্রভাব মানুষের উপর সরাসরি পড়ে । সুচিন্তিত এবং সুস্থ   ও  প্রখর ব্যক্তিত্বের মানুষরা কি অনেক সময় সমাজ প্রবাহের কু-অভ্যাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াননি।  কবি সাহিত্যক শিল্পীরা এবং বুদ্ধিজীবীরা সমাজের দর্পণ।  তাঁরাই তো এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষার সাথে চেতনা বিকাশের সম্পর্ক থাকে আর চেতনার বিকাশ হলেই মানুষের ব্যক্তিত্ব তথা mental status এর বিকাশ ঘটে। একজন কবি তো শব্দ চর্চা করে  , ফলে তাঁর চিন্তা প্রক্রিয়ায় অহরহ বুদ্ধির শান দেওয়া চলে , চিন্তার স্তর বৃদ্ধি হয় ,  তাঁর ক্ষেত্রে আমরা ধরে নিতেই পারি যে উচ্চতর mental status এর অধিকারী। আর ঠিক এখানেই ফারাক অন্যান্য  মানুষের সাথে একজন কবির। একজন কবি খোঁজে সেই মানুষগুলোকে যার সাথে সে কথা বলতে পারবে মন খুলে , মিশতে পারবে , সহজ হতে পারবে। অন্যথায় স্বভাব দোষেই সে ক্রমশ একলা হতে আরম্ভ করে,  একলা হয়ে যায়।  অন্যান্য মানুষের চোখে কবি হয়তো এক বোকা নির্জন দ্বীপের অধিবাসী  যার কাছে পৌঁছানো হয়ে ওঠে না,  বোঝা হয়ে ওঠে না।  একমাত্র কবিই পারেন তাঁর নিজের জগত তৈরি করতে , তাঁর একান্ত নিজের স্বপ্নের জগত  যে জগতে তিনিই অধীশ্বর।  কবি তো নির্ভরশীল পরাধীন হতে পছন্দ করে না একদম , পারে না।  আর এখানেই বাঁধে সংঘাত।  কতদিন পারবে adjust করতে , কতদিন।  

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন