রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা


১)ছায়া



আজকাল নিজের ছায়ার সাথে সময় কাটে৷

শরীরের ভেতরের জানালাগুলোর কপাট-

 বন্ধ করে দিয়েছি অনেক আগেই৷

পোষা পাখিটাও আর দানাপানি চায় না৷

থকথকে অন্ধকারে থাকতে থাকতে-

আজকাল আমার চোখগুলো অন্ধকারে জ্বলে,

অন্ধকারে দিনের আলোর মত পরিষ্কার দেখি সবকিছু৷

স্বপ্নগলোকে এতকাল গুছিয়ে রাখতাম,

আজকাল সেগুলো দিয়ে হাতপাখা বানিয়ে নিয়েছি৷

ভোরের দিকে সূর্য উঠলে নিজের চারিদিকে মাকড়সার মত জাল বুনে নিয়ে-

সারা দিন সেই জালে ট্রাপিজের খেলা দেখাতে থাকি৷

রাত নামতেই শ্মশানের দিকে হাঁটতে থাকি,

জ্বলন্ত চুল্লীতে শরীরটা পুড়ে ছাই হলে-

শুধু আমার ছায়াটাকে নিয়ে আবার বড়ি ফিরে আসি৷




২)বাথটব



কিছু আলুথালু স্মৃতি আর বটের ঝুরি ক্রমে শরীরকে জরিয়ে ধরছে৷

কলিংবেল বাজলে দরজা খুলে দিই,

সবজি ওয়ালা এলে মাছ ওয়ালা এলে-

তাঁদের রবার্ট ব্রুসের গল্প শোনাই৷

বাথটবের জলে আমার শরীরটা ক্রমে মাছ হয়ে যায়,

সাঁতরাতে সাঁতরাতে ভূমধ্য সাগরে পৌছালে-

অন্য মাছেরা আমায় দেখে উপহাস করতে থাকে

আমার মা বাবার কথা মনে পড়ে,

ঠিক তখনই ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে এসে একটা বাজ

আমাকে ঠোঁটে করে তুলে নিয়ে এসে-

আবার সাড়ে চারশো স্ক্রয়ার ফুটের  ফ্ল্যাটের বাথটবে ফেলে দেয়,

আমি দেখি-

বটের শেকড়গুলো ক্রমে বাবা আর স্মৃতিগুলো ক্রমে মা হয়ে ওঠছে৷




৩)গড়ানো দুপুর



প্রতিদিন বেলা বাড়তেই আমি বাজারের থলি হাতে বেরিয়ে পড়ি

সারা বাজার ঘুরে কিছু গড়ানো দুপুর কিনে আনি

আমার নখের ডগায় গতরাতের বাসি রুটির গন্ধ লেগে থাকে তখনও

হাড়ি ভরতি অভাব আর কড়াই ভরতি দুশ্চিন্তা রেঁধে

প্রতিদিন বেড়ে দিই সকলের পাতে

আমার বৃদ্ধ মা-বাবা চোখে দেখতে পায় না

তাই অন্ন আর অভাবের পার্থক্য বুঝতে পারে না

অভাব গিলতে গিলতে তারা একদিন পাখি হয়ে যায়

সেইদিন থেকে আমার কিনে আনা গড়ানো দুপুর

আর গোধূলিতে বাড়ি ফিরে আসেনি কোনদিন




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন