1. 

বিদ্রোহের আদর

আমিনা তাবাসসুম


শোকের মিছিলে আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে ঠোঁট পুড়িয়ে আসি প্রেমিকের বুকের গভীরে

লজ্জা ঘৃণার উত্তরীয় উড়িয়ে দিই নিঃসঙ্কোচে,

না না! কাব্যের শহরে তোমায় ভালোবাসি বলবো না কখনও আর

মৌনতার দু পায়ের ফাঁকে জীবনকে তছনছ করেছি হিংস্র খেলায়

সেখানে পাথরের গায়ে মেখে নিই সমস্ত আঘাতের চিহ্ন।

ভেতরের উথাল পাথাল কাদা মাটি দেখে তোমার লাভ কী বলো?

পুড়ে যাওয়া জীবাশ্মের অলিন্দ নিলয়ে যে বিস্মৃত অক্ষর গুছিয়ে রেখেছি

তার বিন্দু বিন্দু পলকে চোখ মেলতেই তোমার ছবি ভেসে উঠে অনায়াসে

সুবজের জ্যোতি বিষিয়ে দেয় কানাগলি থেকে রাজপথ পর্যন্ত,

এবার তাই কেবল ব্যারিকেড বসাবো বোহেমিয়ান কথকতা আর বিদ্রোহের আদরে

তুমি সময়ের দূরত্ব মেপো না চা কাপের অন্তরালে,

অমৃতের যে গভীর স্পর্শ হৃৎপিণ্ডে দোলা দেয় অবিরত

তারও অনেক গভীরে কান পেতে শুনলে টের পাবে

ভালোবাসা মানে কেবলই কাছে পাওয়া নয়।


2.

আপেক্ষিক 


তুমি শুধু আমার হবে

কিংবা তোমাকে ছেড়ে আমি কখনই যাবো না,

আগলে রাখবো চিরদিন 

এসব কথা কেবলই আপেক্ষিক সত্য

চিরন্তন কিছু নয়।


চাঁদ ডুবে যাবার পর সূর্যও সত্য,

রাতের আঁধারে জোনাকি...

সাংহাই পেরিয়ে ইতালি কিংবা রাশিয়া সফর

সবটাই উত্তম পুরুষের নিয়ন্ত্রণে।

কাব্যের পান্ডুলিপিটা জমা ধুলোর আস্তরণে বৃষ্টি খোঁজে

আর ঘর ভর্তি পেন্ডুলাম রাজধানির চিৎকার শুনতে শুনতে ক্লান্ত।


যেন সবটাই বাঘ বন্দি খেলা

কোকিলের কুহু সুর থেকে তেপান্তরের পক্ষিরাজ

অথবা দূরত্বের আস্কারায় তোমার দিনযাপনের অজুহাত

নিয়মের কুৎসিত বাক্সে ভরে ওঠা অগ্নি শৃঙ্খলের পেনালটি

সবই ভিসুভিয়াসের রক্ত রঙে সোনালি।


নিয়তিতে আজও শুধু মৃত্যুর মিছিল চলে,

আর বোকা বাক্সে তুমি আমি আপেক্ষিক...।



3.

মৃত্যু আঁকি আলিঙ্গনে 


আমি মৃত্যু আঁকি রাত জেগে 

জীবনের সমস্ত গণ্ডির ভেতরে।

তারপর ছদ্দবেশ খুলে আগুনের পাটাতনে লিখি গৌরব।


কাল পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল,

হঠাৎ দমকা ঝড়ে বিকলাঙ্গ হলো মনের কুঠার।

চারিদিকে শুধু মৃত্যু মিছিল,

সবাই কেবল জিজ্ঞেস করে - তুমি বেঁচে আছো কেন?


কণ্ঠরোধে ভয় পাইনি কখনও

আর নাতো ঘৃণিত সমাজের চিত্র।

পায়ের কাঁটাকে তাই অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিতে দিতেই

মৃত্যু আঁকি শুধু জীবন জুড়ে।


বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে শিখর ছোঁয়ার বড্ড স্বপ্ন,

ভাঙতে পারিনা সেসব পরাধীনতার গ্লানি আর হতাশার অনলে।

আরাফাতের মৃত্যু তাই আলিঙ্গন করতে চাই,

কাপুরুষের ঘৃণা লিখি অক্ষরে অক্ষরে।


ঘুমের আলো খুব মন কেমন করে

তাই মৃত্যু আঁকি আমি পাতায় পাতায়,

বিস্মৃতির স্পষ্ট অনুরাগে আর আলিঙ্গনে।


4.

পচা শরীরের কাব্য 


চারিদিকে ভীষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে,

পচা শরীরের কাব্য

আর ধর্ষকের রমরমা বাজার এখন!


যেদিকে এই পোড়া দৃষ্টি পড়ে

সেদিকেই দেখি প্রতিবাদের কলম ছুটছে

কালিতে কালিতে ভরে গেছে সমস্ত দেয়াল

মৃত্তিকা থেকে আকাশে তাকালে এখন শুধু যোনি আর স্তনের গল্প।


রামের কলমে লোকটা দোষী,

শ্যামের খাতায় আগুনের ফুলকি

রহিমও লিখছে বিচার চাই,

তবুও....


চোখ বন্ধ করে রাস্তায় বের হলেই দেখি

অন্ধ কালো গলির বিষাক্ত রাসায়নিক থাবা 

আর ওই আসমান জমিন কিংবা দেয়ালের কালো হাত

নিসপিস করতে থাকে আমার শরীরের লোভে।


লাল অশ্রুতে পাতা ভিজে গেছে কবিতার,

কালি তুলে রেখে একটু রাস্তায় তুলো ঝড়।

কবিতা এখন মৃত বাক্সে বন্দীর মতো কাঁদছে।


মোমবাতির তেজ ফুরিয়েছে নির্ভীক

শুধুই যোনির পোড়া গন্ধে...!!!


5.

অতীত বিক্রির মরশুম 


চব্বিশ বছরের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে 

বারবার ভুল হয় হিসাবে।

লবণে দীর্ঘ রাত্রির বিষাদ জড়িয়ে 

ভোরবেলা জল আনতে যায় পাড়ার তৃষ্ণা।

বায়োলজির মাস্টার বললেন সালোকসংশ্লেষ আর পাতার সম্পর্ক

সবসময় ঘোড়ার দৌড়ের উপরে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম এখন গৃহবন্দি,

সুপ্রিমকোর্টের আদেশ, ধূলি আর জলে যেন সংমিশ্রণ না হয়।

ঘড়ির কাঁটায় যখন দুপুর দুটো,

বুকের ভেতর ধক করে উঠলো

সমানুপাতিক চৌরাস্তার মোড়ে অতীত বিক্রির মরশুম চলছে,

চোখ প্রসারিত করতেই দেখি

ভবিষ্যত এখন বাক্সবন্দী....!!

5 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন