(অলংকরণ: বিপ্লব দত্ত)









ভাবনার ভাষ্কর্য 

চোখের ভাষা। ভাষার চোখ। আমি পড়ি। The eyes that speak the deepest soul. তাকে কীভাবে জানাবো আমার এই তীব্র সংরাগ। নীরবতা। সেও এক ভাষা। তাতেও আবেগের চলাচল।

তার চোখের ভেতর থেকে আকাশ উঠে আসে। মদিগ্লিয়ানির ছবিতে যেভাবে। নেশাতুর  আমি। আমার চেতনায় বৈদূর্যমণির রং। গালুডির মহুয়ার জঙ্গলে। গৌরীপুরে পাখির খোঁজে। আশ্চর্য হয়ে দেখি। দুটো চোখের দর্পণ ইথারে। আয়নাপাখি। পাখি আয়না হয়েছে। সুফি কবিতার হাত ধরে। রুমির হাত ধরে আমি আমার এই চেতনার কাছে পৌঁছে গেলাম। রুমি এক নতুন ডেস্টিনেশন।  তাঁর কবিতার পথে পথে গুলাবি সফর। গুলাব, গুলাব, তোমাকে আমি কেবল আগুন ভেবেছি এতকাল। তুমি কি আলো নও? তোমার অভিজাত গন্ধ আমাকে ধ্যানের গভীরে টানে। হাত দিয়ে নয়, মন দিয়ে আমি তোমাকে ছুঁয়ে আছি। তুমিই গুরু। মুক্তির আলো তোমার গভীর চোখে। 

সুর ও সুরার সম্মিলনে সেই সাকী। তার স্পর্শ্বেই জীবন অমৃত হবে। এই সাধনা। বসে আছি তার পথ চেয়ে। মধুর হয়ে ওঠে ধ্বনি। তার নাম উচ্চারণে। জলের গভীরে জল। ঊর্মিমালা।

অপেক্ষা। অপেক্ষার প্রহর। অন্ত নেই। অনন্ত আছে। আমি তার অনন্তকালের ভালোবাসার ভিখারী। আমার অল্পে আশা মিটবে না। তাকে নতুন করে পাব বলে নিজেকেও নতুন করি।

কত রকম আবিলতার মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি। এবার খুব শান্ত হয়ে উঠতে চাই। অচঞ্চল, গভীর হোক আমার অনুভব, কবিতা।

প্রতিদিন মায়ের দিব্য করুণার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করার চেষ্টা করি। অনুভবের সকল দরজা যেন খুলে যায়। সেই অনন্ত অসীম অনুভবে  ভালোবাসার জনকে যেন আবিষ্কার করি। ভালোবাসা বন্ধন নয়, মুক্তির আলো জ্বালিয়ে দিক আমার সৌন্দর্য- বোধে, আমার চেতনায়।

আশ্চর্য চেয়ে থাকা। আশ্চর্য, তার ক্রম-বিকাশ, প্রস্ফুটন। ফুরাবে না। কেবল রূপান্তর। কেবল অনন্ত আর অনন্য রূপের দিকে হাত বাড়িয়ে আছে। আমি জানি তার ভিতরে এখন আনন্দলোক দরজা খুলে দিয়েছে। আনন্দে থাকো। সংগীত বেজে উঠুক, সংগীতে বেজে ওঠো তুমি, নবীনা।








ভ্রম ও ভ্রমর বেত্তান্ত 

আশ্চর্য সেই স্বপ্নের দেশে আমি ভ্রমর। ভ্রমণ করেছি অনেক তার নদীর মোহনায়। শস্যক্ষেত্রে। বৃক্ষবনানীর গভীরে। একাকী। শস্যমাটিজলের গানে ভিজে গেছে আমার তাপিত অক্ষরমালা।

 নদীতীরে নৌকা সারাইয়ের  কাজ। পাট ও পেরেক। সম্মিলনে ঢেকে যায় কাঠের চৌচির। ঢেউশীর্ষে গূঢ় সংকেত। একটি তারের উপর দিয়ে হেঁটে যায় সার্কাসের ছেলে। কৌতুক ও উৎকণ্ঠার এই সহচরী আলোছায়া। 

 কোথাও হেমন্তের ঝরা পাতার স্তূপের ভেতর আগুন। আমি তার দহন ও জাগৃতি জেনেছি।

মৃত্যুর আলগা মুঠি থেকে খসে পড়েছি। যেন তার আচমনের জল। তীব্র অন্ধকারে ছুটে যায় জাজ্বল্যমান শিয়াল। আমি তার ক্রন্দন  অথবা গানের ভেতর দেখেছি পূর্ণ চাঁদের মায়া। আমার বাঁধ ভেঙে গেছে।  অনিকেত প্রান্তরে আমি মৃত আত্মার কাঁধ ছুঁয়ে দেখেছি। 

প্রণয় ও প্রত্যাখ্যান জেনেছি নারীই চিরায়ত শস্যক্ষেত। শরীর পেতেছি আদিম গুলমোলতায়। তার সংরাগ ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ আমি। ককিয়ে উঠেছি শিশুর মতো ত্রিনয়নীর চোখের বিভায়। দেখেছি আলো ও অন্ধকারের কোরিওগ্রাফি। তার পদতলে পড়ে থেকেছি। শরীর ভরে উঠেছে কাদা ও জলে। তারই ভেতর কোথাও লেগেছে সোনালী ধানের অলংকার। আরুণি উদ্ধালক নামের ডাকে ভরে উঠেছে চরাচর।

হে জীবন, তুমি আমাকে ফেলে রেখেছ, মিউজের পায়ের নীচে। যেন অনাদরের আকন্দ। 

হে গভীর শূন্যতা, কবে তোমার দেখা পাব?

যে অক্ষরে মিউজের পূজা , তার সন্ধান থেকে গেছে অধরা। কেবল অঙ্গার আর মনস্তাপ...






রুদ্র কিংশুক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন