অমৃতের পুত্রদের এইসব

দেবজ্যোতি রায়

একটি অর্ধনগ্ন বালিকার উদরে আমি একদা
প্রবেশ করিয়াছিলাম¦দেখিয়াছি তাহার যকৃত ,বৃক্ক,প্লীহা,

পাকস্থলি ও অবশ্যই যেইখানে সে ভবিষ্যতে ‘মা’ হইবে অনির্বচনীয়
সেই স্থান¦অমন রমণীয় প্রদেশ আমি পূর্বে দেখি নাই

¦—এই পর্যন্ত দেখবার পরে আমার কলম ট্র্যাক করে অন্য একটি স্বপ্নদৃশ্যের ভিতর

হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লো:জন্মান্ধ জঙ্ঘার বিপুল আন্দোলনে জেগে উঠলেন তিনি/

নিঃসৃত তাঁর কণ্ঠ থেকে অদ্ভুত ধ্বনি/নির্মম বর্শার গান/প্রান্তরের হলুদ জেব্রাগুলি/

যাদের প্রিয় খাদ্য ছিলো সবুজ ঘাসেদের/শরীর চোঁয়ানো শেষ নম্রতাটুকু/

মাথা নিচু করে এখন ফিরে যাচ্ছে সবচেয়ে উঁচু শৈলশ্রেণিতে/সমস্ত আকাশকে একসাথে বিদ্ধ করবেন বলে তিনি/

ধেয়ে গেলেন পবিত্র সেই/প্রথম কুমারী আঁধারের দিকে/যার বিপুল জঙ্ঘা বেয়ে সমুদ্র গর্জন/

আর উল্লাসের শরীরে অপরাধী শোণিতের আবহমান/স্রোত;যেনো দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত;নায়েগ্রা র হিংস্র/

জলপ্রপাতের মতো/যে শিশু ভূমিষ্ঠ হবে/আজ রাত্রে/মায়ায়/তার একমাত্র বিশ্বস্ত সঙ্গী এই গ্রহে সনাতন এক কুকুর

/—নক্ষত্রদের বিষণ্ণ আলোয়/কে :এক অস্পষ্টতা এই প্রমাদ গুণে বসলেন/তাঁর মুখের চিরন্তন ছায়াটি আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে এলো¦
—ঘুম ভেঙে

গেলো আমার কলমের¦দেখি ঘেমে-নেয়ে একসা তার দেহ;আতঙ্ক-বিহ্বল এবং কাঁপছে ¦

তবুও যে দুই বিদ্রোহী হাত বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম সজীব,রোমশ,গতিময়,

অনিশ্চিত,সংযমী,সৃষ্টিশীল,প্রাকৃতিক,অনাহত,স্বাধীন,বিশুদ্ধ,কর্মময় জীবনের দিকে

তার নাগাল আমরা পাইনি¦এক ভয়ংকর ভুল জীবনের কারাগারে আজীবন আমরা বন্দী হয়েই রইলাম¦

অথচ শৈশবের স্বর্গেও ফিরে যাবার কোনও উপায় আমাদের নেই¦

আমরা ক্রমশ ভুলে গেলাম কেনো আমরা পৃথিবীতে এসেছিলাম¦আমাদের কামনা-বাসনাগুলি বিকৃত রূপ ধরে

আঘাত হানতে থাকলো জীবনের সজীব অংশগুলিতে¦সঙ্গী শুধু সেই সনাতন কুকুর¦

আর অজ্ঞাত,অস্পষ্ট,ভয়ংকর সেই ঘোষিত প্রমাদ

যা বজ্রের ধ্বনির মতো ছড়িয়ে গিয়ে ক্রমশ মৃদু তবলার মতো প্রতিধ্বনি তুলে বেড়াবে

জলে ও আকাশে,পর্বতে ও গুহায়,শস্যক্ষেত্র থেকে বাড়ির উঠোন,কার্নিশ বেয়ে নামবে-উঠবে,

দোল খাবে ভূতের ছানার মতোন গাছের মগডালে বসে¦যুবতি জন্মান্ধ জননীর স্তন জুড়ে তখনও এক পশুর কামড়

আর তলদেশ ফেটে নীল হয়ে আছে অজস্র ছোবলে¦
এক অন্তহীন সৃষ্টি-ক্ষুধা নিয়ে তবু জন্মেছিলো মানুষ¦

কিন্তু তার ক্ষুধা তাকে ঋতের পথে নিয়ে যাবার বদলে ঠেলে দিতে থাকে ধ্বংসের দিকে¦

জীবনের পথে না হেঁটে সে হাঁটতে থাকে পায়ুপথের দিকে¦

পুনরাবৃত্তির মধ্যে সে ক্ষয় করতে থাকে নিজেকে¦

পায়ুপথের এই যাত্রাকে না জানলে আত্মার পরম মহত্ব ও ঐক্যার্জনের আকাঙ্খা গড়ে উঠবে

কীভাবে;কীভাবে গড়ে উঠবে স্বাধীন,মুক্ত জীবনের বোধ যতক্ষণ না এক মহৎ যন্ত্রণাও তাকে কুঁড়ে খাচ্ছে!

তারকোভস্কি তাঁর দিনলিপিতে লিখছেন:

এতো বছর যাবৎ মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে আছে তবু এখনও সে নিশ্চিত হতে পারলো না তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
কী?কী অর্থ তার জীবনের?
এবং আমরা এক ধাক্কায় বুঝে যাই:
মানুষের লালসার শেষ নেই;
উত্তেজনা ছাড়া কোনো দিন ঋতু ক্ষণ
অবৈধ সংগম ছাড়া সুখ
অপরের মুখ ম্লান ক’রে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ
নেই¦

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন