আগুনের কবিতা

দেবী রায়

ভিতরের আগুন, আমাকে শান্ত হতে দেয় না ;

বাহিরের সব উল্টোপাল্টা ঘেয়ো-অশান্তি

আগুনকে, আরও উসকে দেয় !

.

— কেই বা পছন্দ করে উলঙ্গ জীবন ?

..                              .’বাছা, ডিপ্লোম্যাট হও’!


বুকের মধ্যে সিংহাসন

এখনও যে ভালোবাসা পায়নি

এবং

যে ভালোবাসা হাতের মুঠোয় পেয়েও হারিয়েছে

..                                            ..এই দুজনের মধ্যে কে বেশি দুঃখী–

..                                           ..দুঃখের ভার, বেশি কার ?

প্রায় সব ফুলই আমি ভালোবাসি

ফুলের ভিড়ে, রজনীগন্ধা সবচেয়ে প্রিয় আমার !

তা বলে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে

..                                     ..মালাকার হতে বোলো না !

অল্পবিস্তর সব রমণীই আমার ভালোবাসার পাত্রী

তবে বুকের মধ্যে সিংহাসন পেতেছি, শুধু একজনার !

ক্ষণিক দুর্বলতার মোহে আমাকে ভ্রষ্টাচারের দিকে

..                                       ..ঠেলে দিও না!

.

ভালোবাসা পত্রবহুল বৃক্ষের মতন !

বৃক্ষের কাছে হেঁটে গিয়ে স্পষ্ট গলায় বলি :

‘মানুষের হাতে-গড়া পৃথিবীতে, যে-কটা দিন

..                           ..বেঁচেবর্তে আছি

..                                       ..ভরিয়ে তোলো এ-জীবন



ভালোবাসার অভাব যেন কোনোদিন—

..                                             ..গ্রাস না করে আমায় !



বৈদিক মেঘে

টেলিগ্রাফের তারে, ঠিক একজোড়া নয় — পরপর

অল্পদূরত্বে দু’জোড়া লেজঝোলা দেখা গেল ভোরে !

সুমিষ্ট লাগল না মোটে, কেন যে ! ওদের কন্ঠস্বর

যেন ফেটে বেরিয়ে আসছিল ! গলা-গলা

ফুলিয়ে ঝগড়া করছিল কি ? জলায় এতকাল কলমি,

শুসনি উঠেছিল বেড়ে, তার ডগায় ফড়িং বেড়াত

ঘুরে ঘুরে ! সব কিছু নস্যাৎ করে ধাঁই থাঁই

করে উঠে যায় জি-প্লাস জলভারানত মেঘ ভেসে

যায় ! এইসব স্পষ্ট অবয়বের পক্ষে এই যে

রুক্ষ কঠোর বাস্তবতা

..            ..ওই ল্যাজঝোলা পাখি

..            ..দেখেছিলাম ভাগ্যিস, তাই রক্ষে !

কারুরই কিছু এসে যায় কি ?

আহা! কী আশ্চর্য, কী আনন্দের  কথা

হে পরম ব্রহ্ম, হে পরমাত্মা

এত বছর প্রাণপাত, তবু তোমার নাগাল

পেলাম না ! সর্বস্তরে, বৈদিক মেঘে ঘোর অন্ধকার !

অক্ষরের খুঁটিনাটি

‘অক্ষরের খুঁটিনাটি’ বলতে যা বোঝায় !

 

ড্রইংরুমে ‘পাতিল, ‘ কি সাজানো যায় ?

রাখি, জানালার পাশে

ফুলদানিতে, চনমনে সজীব ফুল !

‘বনসাই’য়ের দিকে একটানা তাকিয়ে

থাকলে বিকের মধ্যে কষ্ট হয় ! — কে তার

ডালপালা

..           ..দিয়ে ছেঁটে  কী এক ছন্দিত

..                          ..নিপূণ কৌশলে ?

বাহিরে অঝোর বৃষ্টি ! চোখের পারে ভাসে

ব্যবিলন । ভাবি, সে-ও বনসাই এক অর্থে

কী এক নিষ্ঠুর পরাক্রম শক্তি বারবার

ঝাঁপিয়েছে তাত

উপর

..                 ..ওই হিংস্র দাঁত ও নখ…

জীবনও কি

…                    ..এতই মৃত্যুলোভাতুর !

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন